নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ক্যাম্পাসে দিন দিন র্যাগিং যন্ত্রণার মাত্রা বেড়ে চলেছে। সিনিয়ররা র্যাগিংকে ফান হিসেবেই মনে করেন। তারা মনে করেন, এর মাধ্যমে জুনিয়রদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। সখ্য গড়ে ওঠে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেখা হলে ভয়ে সালাম দিয়ে সম্মান দেখানো আর আড়ালে গিয়ে বকা দেয়া কখনও সম্মান হতে পারে না।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, এটাকেই অনেকে সম্মান ও শ্রদ্ধা বলে মনে করেন! আজ যে ছেলেটি র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে, সে নিশ্চয়ই আগামীতে এর চেয়ে বেশি মাত্রায় র্যাগিং করার পরিকল্পনা করবে। ফলে এ অপসংস্কৃতি বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। সাম্প্রতিক ২০১৯ সালের শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) দিনগত রাতে বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) ফিজিওথেরাপি অনুষদের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্রী হোস্টেলে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে আমেনা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
পরে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ভর্তি করা হয়। ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ছাত্রাবাসের ৪১৩ নম্বর কক্ষে ডেন্টাল অনুষদের মো. সালাউদ্দিনকে মারধরের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৪জন শিক্ষার্থীকে পৃথকভাবে সাময়িক বহিষ্কার করে। সর্বশেষ চলতি বছরের গত পরশু মঙ্গলবার রাত ৮:৩০ ঘটিকায় ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় কবিরাজ নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে।
হৃদয় কবিরাজ থেকে জানা যায়, হোস্টেল ডাইনিং রুমে খাবার আনতে যায় হৃদয় কবিরাজ তখন ৩য় বর্ষের ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী কামরুল তার ৩জন সহপাঠী ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টে ছাত্র সাইফিন, ফিজিও থেরাপি ডিপার্টমেন্টের ছাত্র আসিফ, লেব্রেটরি ডিপার্টমেন্টের ছাত্র মুন্না, তাকে খাবার না নিয়ে ডাইনিং রুমে বসে খাওয়ার কথা বলে, তখন হৃদয় কবিরাজ বলে দাদা আমি ৮:০০ টায় হালকা নাস্তা করছি আমার এখন ক্ষুধা লাগেনি, তাই রুমে নিয়ে পরে খাবো, একপর্যায়ে জোর করানো হয় ওখানে বসে খাওয়ার, তখনও রাজি না হয়ে আমার দাদা কলিন চন্দ্র কবিরাজ তাকে কল দিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে দিলে কিছুক্ষণ পর রাগান্বিত হয়ে তাকে গালিগালাজ করে আমার দাদাকে।
তারপর এলোপাতাড়ি থাপ্পড় মারতে থাকে আমাকে, আর বলতে থাকে তোর দাদা কি নেতা হয়ে গেছে, আমি বলি সে আমার আপন দাদা তাই তাকে কল দিয়ে জানাইছি। হঠাৎ কামরুল ভাই হোস্টেল গেট ওখান থেকে চলা (লাকরী) দিয়ে পেটায়। আমার সহপাঠী ২য় বর্ষের ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী ইফতি হাজির হয়ে তাদের কাছ থেকে লাকরী নিয়ে নেয়, আমাকে ধরে আমার রুমে (তৃতীয় তলা) নিয়া আসে। বন্ধু ২য় বর্ষের ছাত্র রুদ্র এসে বলে তুই শীগ্রই পালা কামরুল ভাই মিটিং ডাকছে আজকে তোরে মেরে ফেলবে।
আমিও পালানোর জন্য বের হইছি, তখন আমার ইয়ারমেটরা জড়ো হয়ে গেছে, তারা প্লান করছে বড়ভাইদের রুমে তারা একা ছাড়বেনা তাই সবাই মিলে আমাকে নিয়ে বড়ভাইদের রুমে ডুকছে, তারা সবাইকে বের করে দিলেও আমার ইয়ারমেট ইফতি ছিলো শুধু, তখন তারা রুম আটকিয়ে আমাকে দমকিয়ে জোরে জোরে আজেবাজে ভাষায় কথা বলছে। এবং ভিডিও করে আমার কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে।
আমি সব সত্যি বলাতে আমাকে আরো চড় দিতে থাকে, তখন খেয়াল করে দেখি তাদের খাটের নিচে রড রাখা ছিলো, আমি আরো ভয় পাই, লাস্ট চড়টা আমার টেম্পোরাল বেনের সাথে আঘাত লাগে আমি সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পরি। পরে তার সহপাঠীরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে ৫ তলায় সার্জারী ভর্তি করে।
এ- বিষয়ে হোস্টেল সুপার মাইদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় তো আমরা ছিলাম যেটা শুনছি রাত সাড়ে আটটায় হৃদয় কবিরাজ ডাইনিংয়ে খাবার আনতে যায়, যারা ডাইনিংএ আছে তারা বলছে ডাইনিংয়ে বসে খেয়ে নেও, আসলে উপরে নিয়ে অনেকে ভাত ফেলে দেয় নষ্ট করে, তারজন্য নিচে বসে খেতে বলছে। তখন ও বলছে আমি এখন খাবোনা উপরে নিয়ে খাবো।
এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয় ওদের মধ্যে তারপর থাপ্পড় দিলে মাথা ঘুরিয়ে পরে যায় ওই সময় কয়েকজন মিলে মেডিক্যালে ভর্তি করছে। বরিশাল আইএইচটি কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ মানষ কৃষ্ণ কুন্ড তিনি জানান, ঘটনা শুনতে পেয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি, তার বাবা ভাই আসছিলো, তারাও অভিযোগ দিয়ে গেছে, সুস্থ হলে বিষয়টি আরো জেনে ব্যবস্থা নিবো।#