এম এইচ মুন্নাঃ প্রকৌশলী মল্লিকের বেপরোয়া লুটপাটে এলজিইডি-ই যেন ফোকলা হতে চলেছে। সিনিয়র সহকারী ওই প্রকৌশলী শুধু নিজের দপ্তরের অনিয়ম, দুর্নীতির অপকর্ম করেই ক্ষ্যান্ত থাকেন না, তিনি অন্যান্য বিভাগ ও সেকশনের টেন্ডারবাজিরও নেপথ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন। যে কোনো বিভাগের টেন্ডার তৎপরতা শুরু হলেই নড়েচড়ে বসেন প্রকৌশলী মল্লিক। তার আস্থাভাজন ঠিকাদার সিন্ডিকেটকে কাজ পাইয়ে দিতে চলতে থাকে তার ফন্দিফিকির। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে গোপন পথে টেন্ডার কাজ বাগিয়ে নেয়ার তদবিরবাজিতেই বেশি আগ্রহ তার। তবে এ কৌশল সফল না হলে মল্লিক আঙ্গুল বাঁকা করতেও বিন্দুমাত্র সময় ক্ষেপণ করেন না। টেন্ডার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের নাম, পরিচয়, সাক্ষর ব্যবহার করে একগাদা মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেন দপ্তরে দপ্তরে। সেসব স্থানে টাকা ছিটিয়ে তদন্তের নামে হয়রানিও চালাতে থাকেন। অবস্থা বেগতিক দেখে মল্লিককে সঙ্গে নিয়েই টেন্ডার কাজ সমঝোতা করে তবেই রেহাই মেলে। এমন অপরাধ অপকৌশলে ওই ধূর্ত প্রকৌশলী লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিতর্কিত এই প্রকৌশলীর পুরো নাম হচ্ছে মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মল্লিক। তিনি এলজিইডি হেড কোয়ার্টারে কর্মরত থাকাবস্থায় ঠিকাদারদের যোগসাজশে এরইমধ্যে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। অসাধু এক দাপুটে কর্মকর্তার সকল অপকর্ম, গোপন অর্থের লেনদেন, টাকা পাচারসহ যাবতীয় অনৈতিক কাজের ‘ম্যানেজম্যান’ হিসেবেও তার সমধিক পরিচিতি রয়েছে। নিজেই নিয়ন্ত্রণ করেন একাধিক ঠিকাদার সিন্ডিকেট। এরইমধ্যে লুটেরা এই কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মল্লিক ও তার স্ত্রী ইশিতা জাহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দাখিল হয়েছে। দুদকে পাঠানো অভিযোগপত্রে প্রকৌশলী মল্লিকের লুটপাট, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বিশাল সহায় সম্পদের কিছু বিবরণও তুলে ধরা হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়, মাসুদুর রহমান মল্লিক টাঙ্গাইল জেলা শহর বাসা নং- ৫২/২, রোড নং- ৩, জেলখানা রোডে তার স্ত্রী ইশিতা জাহানের নামে ৭ম তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ী নির্মাণ করেন যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের পার্শ্বে রাস্তা সংলগ্ন তার স্ত্রীর নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিক, ঢাকা জেলা মোহাম্মদপুর থানাধীন শ্যামলী হলের মাঠের পিছনে বাসা নং- ৫১৩, রোড-৩ এলাকা সংলগ্ন বাড়ীটির ৩য় তলায় তার স্ত্রীর নামে ২২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। ঢাকা জেলা সাভার থানাধীন পৌরসভা সংলগ্ন বাড়ী নং- ৭১, রোড নং- ২, তার স্ত্রীর নামে একটি ৬ষ্ঠ তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ী যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন তার নিজ নামে একটি ৫ম তলা বিশিষ্ট বাড়ী যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। ঢাকার উত্তরায় সেক্টর নং- ১২, রোড নং- ০৫, বাড়ী নং- ১৯,৭ম তলা বিশিষ্ট তার স্ত্রীর নামে বাড়ি। ঢাকা জেলার রাজউকের পূর্বাচল এলাকায় প্লট নং- ৯২০, ১১১০ ও ১৩৩০ প্লটগুলো তার স্ত্রীর নামে রয়েছে। এছাড়াও টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায় তার নিজ নামে ও তার স্ত্রীর নামে ৮৫ বিঘা জমি রয়েছে। তার আয়কর নথি অনুযায়ী তার ঢাকা শহরে ২৬ শতাংশ জমি রয়েছে, এছাড়াও বগুড়া শহরে তার ১১.৫ শতাংশ জমি রয়েছে এবং ৪০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে কয়েকটি ব্যাংকে অর্ধশত কোটি টাকা এফডিআর রয়েছে। প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মল্লিক এর টিআইএন ২৭৭৮৭৬৩৯৭২৬২। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী বলেন, তার স্ত্রী একটি বিলাশ বহুল প্রাইভেট গাড়িতে চলাফেরা করেন। অভিযোগে জানা যায়, ফ্ল্যাট- ৭/এ, সরকারী অফিসার্স কোয়ার্টার, (এলজিইডি আঞ্চলিক অফিস), ৬২, পশ্চিম আগারগাঁও, ঢাকা- ১২০৭ ঠিকানায় তিনি বসবাস করে আসছেন। মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এমন অভিযোগে তোলেন একটি সূত্র। ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজশে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগসহ খোদ দপ্তরের অসাধু এক কর্মকর্তার সকল অনৈতিক ও অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা ও স্যাটেলম্যান হিসেবে পরিচিত তিনি। মাসুদুর রহমান মল্লিকের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডিতে ঠিকাদারী টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগও উঠেছে। তিনি প্রতিটি ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়মিত ৫% হারে এককভাবে অবৈধ অর্থ আদায় করে আসছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মল্লিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।#
আপনার মতামত লিখুন :