• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন

মেম্বার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

সংবাদদাতা / ১৮২ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ- সুনামগঞ্জের শাল্লায় কথিত প্রেমিককে নিজের বসে আনতে না পেরে বাহাড়া ইউপির চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেছেন একই ইউপির বাহাড়া গ্রামের এক অবিবাহিত নারী। মামলায় আসামী করা হয়েছে একই ইউপির ২ নং ওয়ার্ড সদস্য দেবব্রত তালুকদার ও কথিত প্রেমিক মলয় দাশকেও। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং (২)। প্রেমিক মলয় দাশের বিরুদ্ধে এরপূর্বেও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এনে আরেকটি মামলা করেছিলেন ওই নারী।
১৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সরেজমিনে বাহাড়া গ্রামে গিয়ে জানা যায় ওই গ্রামের মণীন্দ্র দাশের ছোট ছেলে মলয় দাশ গতকাল ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবারে তিনি বিয়ে করেছেন অন্যত্র। মলয় দাশের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হওয়ায় বাড়িতে রয়েছে।শুনশান নীরবতা। অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন বিয়ে বাড়ির লোকজন। বিয়ের আনন্দ যেনো তাদের কাছে বিষাদময় হয়ে উঠেছে। বিয়ের গায়ে হলুদ ছিল ১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। ওই বাড়ির নারীরা বলেন অধিবাসের দিন (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেয়েটি আমাদের বাড়িতে আসে বিয়ের দাবিতে। সারারাত আমাদের বাড়িতেই ছিল ওই মেয়ে। বৃষ্টিতে ভিজে এসেছিল মেয়েটি।পরে খবর দেওয়া হয় বাহাড়া ইউপি চেয়ারম্যানকে।
সকালে চেয়ারম্যান মেম্বারসহ আরও ২ জন মেয়েকে নৌকায় করে নিয়ে যায় ঘুঙ্গিয়ারগাঁও। চেয়ারম্যান মেম্বার আমাদের বাড়িতেই ছিল সারারাত। বাড়িতে অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ উপস্থিত ছিল। মলয় দাশের কাকাতো ভাই মঞ্জু দাশ বলেন আমার ভাইয়ের বিয়ে বন্ধ করার জন্যই ওই মেয়েকে আমাদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। মেয়ে সারারাত আমাদের বাড়িতে সুরক্ষিত ছিল। ওই মেয়ে এর আগেও আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করে। আমার ভাই ওই মামলায় জামিনে মুক্তিও পায়। সেই ঘটনাও ছিল পরিকল্পিত। এটিও পূর্বপরিকল্পার অংশ ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। বিয়ে বন্ধ করতে না পেরে এমন অসদুপায়ের উপায়ের পথ বেচে নিয়েছে একটি কুচক্রী মহল বলে জানান তিনি।
এরপূর্বে ১৬ সেপ্টেম্বর ভিকটিমের ভাই বলেছেন আমি বাড়িতে ছিলাম না, ব্যস্ত ছিলাম। একটা নাম্বার দিছে বোনরে। এই নাম্বারটা উদ্ধার করা সম্ভব না। একটা মহিলা পুলিশের কাছে আছে মনে হয়। ওই ছেলেটায় দেখছে। এসময় ভিকটিমের ভাইয়ের ধারণ করা একটি ভিডিও দেন ভিকটিমের ভাই এ প্রতিবেদকে। সেখানে দেখা যায় ওই মেয়েটিকে তার ভাই বলছেন তুরে ধর্ষণ করছে? মেয়েটি বলছেন আমারে ধর্ষণ করছে। ছেলেটি আবার বলছেন কয়জনে? মেয়েটি বলছেন দুইজনে। ছেলেটি আবার বলছে নান্টু চৌধুরী? মেয়ে বলছেন নান্টু চৌধুরী ও মাতাব্বর (মেম্বার দেবব্রত তালুকদার)।
এবিষয়ে বিয়ে বাড়িতে বাবুর্চি’র কাজ করতে যাওয়া ডুমরা গ্রামের রথীন্দ্র তালুকদার বলেন আমি বিয়ে বাড়িতে গেছি রাত ৯টায়। মেয়েটি বিয়ে বাড়িতে আইছে রাত সাড়ে ১০টায়। পরে বিয়ে বাড়ির লোকজন চেয়ারম্যানকে খবর দিয়া আনে। চেয়ারম্যান বিয়া বাড়ির অনেক মানুষের সামনে সারারাত মেয়েরে মারে সোনারে কইয়া বুঝাইছে। মেয়ে মানে না। পরে সকাল ৬ টায় চেয়ারম্যান নৌকা দিয়ে ঘুঙিয়ারগাঁও বাজারে আইছে মেয়েটারে সাথে লইয়া। ওই নৌকায় আমি, চেয়ারম্যান, মেম্বার মেয়েসহ আরো দুইজন মানুষ আছিলাম। এই রকম নির্যাতনের কোনো ঘটনাই ঘটে নাই। পরে চেয়ারম্যান মহিলা গ্রাম পুলিশ জুলেখা বেগমরে আনছে।
এবিষয়ে জুলেখা বেগম বলেন আমি আইসা দেখি পুরি বারিন্দায় খারাইয়া রইছে। একটু পরে পরেই পালার মাধ্যে ঢুসা মারে মাথাত। ওড়না দিয়া গলার মাঝে প্যাচমারে। আমি আর বাজারের একটা মহিলা মিইল্যা ঘাটলায় নিয়া বয়াই। পরে আমি বুঝাই তোমার মত আমার একটা পুরি আছে। তুমি ইতা কইরও না। আর খালি চেয়ারম্যানরে তুই তুনকারি কইরা গালি দেয়। কয় আমারে পোলার বাড়িতে নিয়া যা, নাইলে তুর বিরুদ্ধে আমি কইমু। আমার কাছে মেয়েটায় কইছে সারারাত বিয়া বাড়িতে বৃষ্টিতে ভিজ্যে। পরে দৌড় মাইরা থানার গেইটে গেছে গা। গিয়া সেন্টিরে কইছে। আমিও সাথে সাথে থানায় গেছি।
এব্যাপারে নৌকার মাঝি সোমচাঁদ দাস বলেন আমারে চেয়ারম্যান দায় সকালে কল দিয়া কয় আমারে দিয়াও।
পরে বাবুর্চি, চেয়ারম্যান, মেম্বার, অনুকূল দাস, মেয়েরে আমি নৌকায় করে ঘুঙিয়ারগাঁও শিবগাছে নামাই দিছি। নৌকায় কোনোধরণের সমস্যা বা খারাপ কাজ হয় নাই।
২ নং ওয়ার্ড সদস্য দেবব্রত তালুকদার বলেন আমাদের বিরুদ্ধে যে ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। মেয়ের গায়ে আমরা কেউ হাত পর্যন্ত দেইনি। গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত একটি চক্র আমাদের বিরুদ্ধে ওই মেয়েটারে ব্যবহার করছে। মেডিকেল রিপোর্টেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে বাহাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন ঘটনার খবর পেয়ে আমি বিয়ে বাড়িতে যাই। ঘটনা জানতে পেরে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আমি থানায় এসে ঘটনাটি ওসি সাহেবকে অবগত করি। ওসি আমাকে সামাজিক ভাবে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন। পরে আমি আবার বিয়ে বাড়িতে যাই। ওইখানে মেয়েরে আমি সারারাত বুঝাইছি তোমার জীবনটা নষ্ট কইরও না মা। কিন্তু মেয়ে নাছোড়বান্ধা। কিছুতেই ওই বুঝতে চাইছে না। সে ওই ছেলেকেই বিয়ে করতে চায়। অথচ ছেলে আজ (১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার) অন্যত্র বিয়ে করতে যাচ্ছে।
পরে সুর্যোদ্বয়ের সাথে সাথে আমি ওই মেয়েটারে আমার পরিষদের বারান্দায় রেখে গ্রাম পুলিশ জুলেখা বেগমকে খবর দেই। জুলেখা বেগম সাথে সাথে চলে আসে পরিষদে। জুলেখা বেগমকে কিছু সময় মেয়েটাকে দেখে রাখার দায়িত্ব দিয়ে আমি একটু পরিষদের বাইরে যাই। এসে দেখি ওই মেয়ে থানায় চলে গেছে। পরে আবার শুনছি আমি আর মেম্বার মিলে নাকি মেয়েটিকে ধর্ষণ করছি। ধর্ষণের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট তা মেডিকেল রিপোর্টেই প্রমাণিত হবে।
এবিষয়ে শাল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বলেন ধর্ষণের অভিযোগে (১৬ সেপ্টেম্বর রাতে) মামলা হয়েছে। তদন্ত হবে। এগুলো সুক্ষ্ম তদন্তের বিষয়। মামলায় আসামী করা হয়েছে তিনজনকে। তারা হলো মলয় দাশ, মেম্বার ও চেয়ারম্যান। উল্লেখ্য, গত ২৯ জানুয়ারি ওই মেয়ে বাদী হয়ে আরেকটি ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করেছিলেন। কথিত প্রেমিক মলয় দাশ ওই মামলায় মাসখানেক জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসে। গতকাল ১৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) মলয় দাশ বিয়ে করেন অন্যত্র। মলয় দাশকেও ওই মামলায় আসামী করা হয়েছে।
তবে এই ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার অনেকই বলছেন ছেলেটি ধনাঢ্য পরিবারের হওয়ায় মেয়েটি চেয়েছিল ছেলেটিকে বিয়ে করতে। কিন্তু মলয় দাশ ও তার পরিবার রাজি না হওয়ায় এমন সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে। #


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...