1. mahadihasaninc@gmail.com : bdccrimebarta :
সীতাকুন্ডর জঙ্গল সলিমপুর যেন কারবালা ময়দান, চলছে হাহাকার - বিডিসি ক্রাইম বার্তা

শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন

News Headline :
লৌহজংয়ে জমি সংক্রান্ত পূর্বশত্রুতার জেরে হামলা লুটপাট আহত ১ আহমেদ ফিরোজ কবির পুনরায় নৌকা প্রতিক পাওয়ায় দলীয় নেতা কর্মীদের উচ্ছ্বাস অবৈধ ইয়াদ পত্রিকা বন্ধসহ প্রতারকের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ বেনাপোলে তৃতীয় লিঙ্গের নারীকে কুপিয়ে জখম অনশনে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার (FWV) প্রার্থীরা রংধনু গ্রুপের রফিককে জামিন দেননি হাই কোর্ট বেনাপোল থেকে ২২ বোতল মদসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক পটুয়াখালীতে ঝাটকা জব্দ, বেপরোয়া মৎস ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পলাশবাড়ী রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর’র বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ সাভার থানা স্ট্যান্ডে ট্রাকের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সীতাকুন্ডর জঙ্গল সলিমপুর যেন কারবালা ময়দান, চলছে হাহাকার

সীতাকুন্ডর জঙ্গল সলিমপুর যেন কারবালা ময়দান, চলছে হাহাকার

সাইদুর রহমান রিমনঃ- সীতাকুন্ডর জঙ্গল সলিমপুর যেন কারবালা ময়দান। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থাপনায় আরো দেড় মাস আগে থেকেই সলিমপুরের গ্যাস, বিদ্যুত, পানির সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ৫০/৬০ হাজার অধিবাসীকে চরম বিপাকে ফেলা হয়েছে। তাদেরকে ঘর থেকে বের হয়ে বাজার হাট করারও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। জঙ্গল সলিমপুরে গড়ে ওঠা সকল দোকানপাট এমনকি মুদি দোকান, ডাক্তারের ফার্মেসী পর্যন্ত বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এসব আচরণকে বাসিন্দারা রীতিমত জাহেলি যুগের বর্ববরতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তারা বলছেন, হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশুকে বাড়িঘর ফেলে চলে যেতে বাধ্য করার সীমাহীন অমানবিকতা চলছে সেখানে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের উচ্ছেদ চেষ্টা নজিরবিহীন। তারা কখনো পুলিশ পাঠাচ্ছে, কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডারদের পাঠাচ্ছে আবার কখনো নির্বিচারে গুলি চালাতে চালাতে ছুটে যাচ্ছে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। যে কোনো মূল্যে, দরকার হলে লাশের পর লাশ ফেলে হলেও জঙ্গল সলিমপুরকে মুক্ত করে সেখানে সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালী নানা কোম্পানিকে সেসব জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হবে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বছরের পর বছর যাবত জঙ্গল সলিমপুর জুড়ে ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। সেই সন্ত্রাসীদের হটিয়ে এখন সলিমপুরকে নতুন সাজে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গুটিকয়েক সন্ত্রাসীকে হটাতে ব্যর্থ হয়ে এখন ৫০ সহস্রাধিক বাসিন্দাকেই হটিয়ে দেয়ার বুদ্ধেশ্বর পরিকল্পনা হতে নিয়েছেন জেলা প্রশাসক। পরিকল্পনা হাতে নিয়েই উচ্ছেদে নেমে পড়েছেন অথবা উচ্ছেদ করতে করতেই পরিকল্পনার ছক আঁটছেন।

হাজার হাজার অসহায় মানুষকে উচ্ছেদ করে তাদের ভিটেমাটি গুড়িয়ে দিয়েই গড়ে তোলা হবে স্পোর্টস কমপ্লেক্স, হৃদরোগ হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় কারাগার, মডেল মসজিদ, আইকনিক মসজিদ, জাতীয় তথ্যকেন্দ্র, নাইট সাফারি পার্ক, নভোথিয়েটারসহ গড়ে তোলা হবে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা। শুধু সেখানে বছরের পর বছর মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেয়া অসহায় পরিবারগুলো থাকবে না। তাদের সমূলে হটানোর কৌশল বাস্তবায়ন করার যুক্তি হিসেবে সবাইকে ঢালাও অপরাধী আখ্যা দেয়াটাও আরেক বর্বরতার সামিল।

অদূরেই কক্সবাজারে সরকারি নানা একাডেমি, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ইনস্টিটিউট করার জন্য শত শত একর পাহাড় অরণ্য কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়, অথচ অদূরেই গজিয়ে ওঠা বৈধ অবৈধ রোহিঙ্গা শিবির হটানোর ও সাহস করেন না কেউ। কিন্তু জঙ্গল সলিমপুরের এসব বাসিন্দা হটাতে একবিন্দুও ভাবতে হয় না কাউকে। ইতি মধ্যেই জঙ্গল সলিমপুর থেকে বাসিন্দাদের উচ্ছেদ প্রচেষ্টা কে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। মহামান্য আদালতের আদেশকেও খুব বেশি আমলে নিচ্ছে না চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন।

তারা আদালতের এ আদেশের পর সরাসরি বুলড্রোজার লাগাচ্ছেন না, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছেন না বাড়িঘর। তবে চারদিক থেকেই কারবালা প্রান্তর বানিয়ে, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে, মারধোর চালিয়ে, লোকজনকে দেদারছে আটকের মাধ্যমে ভয়াবহ ভীতির সঞ্চার করে তুলছেন…যাতে বাসিন্দারা নিজেরাই পালিয়ে জীবন বাঁচায়। উচ্চ আদালত তো এসব ব্যাপারে আলাদা আলাদা ভাবে নির্দেশ প্রদান করেননি সেই সুযোগই নেয়া হচ্ছে এখন।

একটি স্থানে জনবসতি থাকলে তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা, সমঝোতার ভিত্তিতেই সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিতে হয়, সেসব উন্নয়ন টেকসই হয়ে থাকে। অথচ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আগামি দেড় মাসের মধ্যে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দিলেন…তা বুঝতেই পারলো না জঙ্গল সলিমপুরবাসী। তবে দেড় মাসেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন, নাকি উচ্ছেদের মহাপরিকল্পনা সফল করবেন সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি। উচ্ছেদ যদি হয় মূখ্য…তাহলে মহাপরিকল্পনার নতুন একটি অভিধানিক রুপ পাওয়া গেল: “উচ্ছেদ মহাপরিকল্পনা”

ঢাকায় যাচ্ছিল জঙ্গল সলিমপুরবাসী, আটক করে থানায় আনলো প্রশাসন
=======
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দারা পুর্নবাসনের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সঙ্গে দেখা করতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার পথে ৬৩ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে উপজেলা প্রশাসন।

১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত একটায় তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে ৬১ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। তাদের মধ্যে আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক নেতাস, বয়োবৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, শনিবার রাত দশটায় জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূলের বাসিন্দারা পুর্নবাসের দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র কাছে তুলে ধরতে ২ টি বাস যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। রাত ১ টায় সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট থেকে ৬৩ জনকে নিয়ে দুটি বাস যাত্রা শুরু করলে তাদেরকে বাধা দেয় পুলিশ। পরে ওই দুটি বাসসহ ৬১ জন পুরুষ ও ২ জন নারীসহ মোট ৬৩ জনকে আটক করে সীতাকুণ্ড থানায় নিয়ে আসা হয়৷

আটককৃতদের মধ্যে ৩৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, ছিন্নমূল ৩ নং সমাজের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী ডাক্তারের ছেলে মোঃ হাফিজ (২১), মৃত মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মোঃ বাচ্চু (৩৪), ছিন্নমূল ৪ নং সমাজের বাসিন্দা মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৪২), ৭ নং সমাজের মোঃ আব্দুর রবের ছেলে মোঃ ফরিদ (৩৭), ৫ নং সমাজের মোহাম্মদ আব্দুল মোতালেবের ছেলে মোহাম্মদ মামুন (৩৫), ৩ নং সমাজের মৃত মোঃ সেকান্দরের ছেলে আব্দুল হাই (৩৯), মোফাজ্জল হকের ছেলে মোঃ মহিউদ্দিন, ৬ নং সমাজের মোঃ আব্দুল বারেকের ছেলে মোঃ ফারুক (৩৯), আবু তালেবের ছেলে নজির আহম্মদ (৪০), শুলকবহর আল জামিয়াতুল মাদ্রাসার শিক্ষক রুহুল কাদের, চাঁন্দগাও বায়তুল হুদা হেফজখানার শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিম, ছিন্নমূল ৬ নং সমাজের বাসিন্দা মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান (৫৮), একই সমাজের মৃত তারু মিয়ার ছেলে ফরহাদ মিয়া (৮০), এস্তেফাজুর রহমান (৫৫), আছহাব উদ্দিন (২২), মোছলেম উদ্দিন (৪১), মোঃ নজরুল ইসলাম (৫১), আব্দুল আজিজ (৫০), দেলোয়ার হোসেন (৫০), আব্দুল হক (৪৫), মজিবুর রহমান (৪২),ফিরোজ আলম (২৮), আবু সাহেদ (৬৮), মোঃ শাহজাহান(৩৮), মোঃ ইদ্রিস মিয়া (৬১), মোঃ হারুনুর রশীদ (৪৭) আব্দুর রশীদ, আব্দুল বারেক (৪২), আব্দুল বারেক ড্রাইভার (৬৪), মোঃ আব্দুল কাদের (৩৭), মোঃ আব্দুর রব (৫০), মোঃ মিলন (৩৯), ওহিদুর রহমান (৩৯), মোঃ সামশুদ্দিন (৩৬), মোঃ ইউনূস (৪০)।

আরও ২৮ জনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

এদিকে আজ সকাল থেকে আটকদের স্বজনরা সীতাকুণ্ড থানায় এসে ভিড় করছে। তবে তাদের কাউকে স্বজনের সাথে দেখা করতে দিচ্ছে না পুলিশ।

তাদের একজন মোঃ রাসেল। তিনি বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার বাবা রফিকুল ইসলাম। গত রাতে আমার বোনের স্বামী সাইফুর রহমান শিপনকে আটক করা হয়। তিনি একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের চাকুরীজীবি। সকালে থানায় এসে তার সাথে দেখা করতে চাইলে সুযোগ দেয়া হয়নি। কি কারণে তাকে আটক করা হয়েছে তাও বলা হয়নি। তার নামে কোন মামলা নেই।

একই কথা বলেন, মোঃ নাঈম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার বোনের স্বামী জর্জ কোর্টের একজন আইনজীবী। তাকেও আটক করা হয়েছে। কেন আটক করা হয়েছে বলা হয়নি৷ এখন দেখাও করতে দেয়া হচ্ছে না। জঙ্গল সলিমপুরের বাসিন্দাদের দাবি, তারা ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেই যাচ্ছিলেন। মূলত তাদেরকে উচ্ছেদ করার পর বাস্তুহারা হয়ে পড়ছেন তারা। পুর্নবাসের দাবি নিয়ে তারা ঢাকায় যাচ্ছেন। আর এমন মুহুর্তেই তাদেরকে আটক করা হয়। সেখানকার বাসিন্দারা বলেন, আমাদের কোন কথাই কেউ শুনছে না। আমরা সীতাকুণ্ডের ভোটার। এ উপজেলার জাতীয়তা সনদ রয়েছে আমাদের। দীর্ঘ দিন চেয়ারম্যান সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদসহ যাবতীয় নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে আমাদের। জঙ্গল সলিমপুরে প্রশাসনের উচ্ছেদর শুরুতে পুর্নবাসনের আশ্বাস দিলেও এখন তা সকলেই ভঙ্গ করছে। এটা আমাদের সাথে স্পষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা।

এ বিষয়ে জানতে সীতাকুণ্ড থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, গত রাতে দুটি বাস যোগে ঢাকায় যাওয়ার পথে মোট ৬৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা ঢাকায় মানববন্ধন করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জঙ্গল সলিমপুরে অনেকে বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, হামলাসহ বিভিন্ন মামলা হয়েছে। প্রকৃত যারা জড়িত তাদেরকে আটক করা হবে। বাকিদের ছেড়ে দেয়া হবে।#

Please Share This Post In Your Social Media


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2023 bdccrimebarta.com