ফরিদপুর প্রতিনিধি: জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি ফরিদপুরের সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। ফলে ভর্তি করা হয় না কোনো রোগী। তবে হাসপাতালটির কার্যক্রম পুরোপুরি চালু না হলেও খরচের খাতা পুরো চালু রেখেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী আব্দুল মমিন।
এরই ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে সরকারি ওষুধ উধাও করে কোম্পানির ওষুধ লিখে দিচ্ছেন অসহায়-গরিব রোগীদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজী আব্দুল মমিন সালথায় যোগদানের পর থেকে সাধারণ রোগীকে হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্য মূলক আচরণ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ভাতার টাকা আত্মসাত ও আনুতোষিক ভাতা নয় ছয় করে আসছেন তিনি। এমনকি ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইন, খুদে চিকিৎসক ক্যাম্পেইন ভাতা ও মাঠকর্মীদের সম্মানি ভাতা পর্যন্ত নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেন তিনি। ভুক্তভোগী স্টাফরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে নানাভাবে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে বিল ভাউচার প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব খাত থেকে ৪৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এর মধ্যে পেট্রোল-ওয়েল খরচ বাবদ ৫ লাখ ২৮ হাজার, পরিছন্নতা বাবদ ৪ লাখ ৯৬ হাজার, বিজ্ঞাপন বাবদ ৩৪ হাজার, চিকিৎসা সরঞ্জাম বাবদ ২৯ লাখ ৫৪ হাজার, কম্পিউটার সামগ্রী বাবদ ৩৮০০, স্ট্যাম্প-সিল বাবদ ১৪ হাজার, মনিহারি বাবদ ৯৩ হাজার, মোটরযান মেরামত বাবদ ৯৯ হাজার, যন্ত্রপাতি মেরামত বাবদ ৭০ হাজার, ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ ২৫৩৭, আসবাবপত্র মেরামত বাবদ ৩২ হাজার, অফিস সরঞ্জাম মেরামত বাবদ ৫০ হাজার, কম্পিউটার মেরামত বাবদ ৪৬ হাজার, আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ৪৪ হাজার ও প্রকাশনা বাবদ ৪৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তবে উত্তোলন করা এসব টাকা কোন খাতে সঠিক কত খরচ করা হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
স্টাফদের দাবি, ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে বেশিরভাগ টাকা আত্মসাত করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। কারণ হাসপাতালে পরিছন্নতা কর্মী নেই। যে কারণে নোংরা পরিবেশে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। বাথরুমগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। অথচ পরিছন্নতা বাবদ খরচ দেখিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ঠিকমতো রোগীর সেবা দেওয়া হয় না। বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পুরোপুরি বন্ধ। অথচ পেট্রোল-ওয়েল খরচ বাবদ ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু এই দুটি খাত নয়, প্রতিটি খাতে সঠিক খরচের চেয়ে ডাবল দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এসব বিষয় সঠিক তদন্ত হলে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন ও নাসিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষক ও দিনমুজুর। এরা রোগে আক্রান্ত হলে তাদের একমাত্র ভরসা সরকারি এই হাসপাতাল। তবে হাসপাতালে গিয়ে সরকারি ওষুধ পাওয়া যায় না। চিকিৎসকরা রোগনির্ণয় করে অসহায় রোগীদের হাতে লিখে দিচ্ছেন বিভিন্ন কোম্পানির দামি ওষুধের নাম। যা কিনে খাওয়ার সক্ষমতা অনেকের নেই। ফলে সরকারি ওষুধ না পেয়ে রোগা শরীর নিয়ে খালি হাতে ফিরে যান তারা।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তাই সরকারি ওষুধ উধাও করে দিয়ে রোগীদের কোম্পানির ওষুধ লিখে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে চুক্তি অনুযায়ী ওষুধ লিখে দিচ্ছেন কি না তা পরীক্ষা করতে হাসপাতালে আসা ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের টানা হেঁচড়ায় অতিষ্ঠ রোগীরা। জানতে চাইলে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাজী আব্দুল মমিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এসব টাকা গত অর্থবছরে তোলা হয়েছে।
সব টাকারই কাজ করা হয়েছে। ভুয়া বিলে কোনো টাকা উত্তোলন করা হয়নি। যেখানে যত টাকা লেগেছে, তাই খরচ দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে। গত বছর অ্যাম্বুলেন্স চলেছিল। তবে এখন চলছে না। পরিচ্ছন্নতার কাজও হয়েছিল।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাজেদা বেগম পলিন বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। এসব অনিয়ম- দুর্নীতির বিষয় আমার জানা নেই। তবে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এসব দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়ে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ সাঈদুর রহমান রিমন। প্রকাশক ও সম্পাদক ফয়সাল হাওলাদার। বার্তা- সম্পাদক জুয়েল খন্দকার। প্রধান কার্যালয়ঃ- ৩৮/১ আরামবাগ.(মতিঝিল) ঢাকা-১০০০। ইমেলঃ- bdccrimebarta@gmail.com, মোবাঃ ০১৭৩২৩৭৯৯৮২
ইপেপার