নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সুনামগঞ্জ জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে গত তিন বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ হয়েছে। এর মধ্যে একজনই পেয়েছেন ১০৫ কোটি টাকার কাজ। বড় কোন ঠিকাদারি কাজের অভিজ্ঞতা নেই, লাইসেন্সের বয়সও মাত্র ছয় বছর-তারপরও কিভাবে, কার আর্শিবাদে গ্রীন কন্সট্রাকশন নামের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিপুল অংকের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে চলছে তোলপাড়। তবে এই প্রতিষ্ঠানটির বিপুল অংকের কাজ পাওয়ার নৈপথ্যে সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাশেম রয়েছে বলে জানা গেছে।
এসকল বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে। উজ্জলের লাইসেন্সে পাওয়া সব ঠিকাদারি কাজের অর্থায়ন কাশেমের বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। দুদক জানিয়েছে কাশেম ও উজ্জলের আর্থিক লেনদেন, উজ্জলের পারিবারিক অবস্থার বিবরণ, তার বাবা-মা, ভাইবোনদের আর্থিক অবস্থার বিবরণ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, গ্রীন কন্সট্রাকশনের সত্বাধিকারী উজ্জল মিয়া। সে কিশোরগঞ্জের মানিকখালী উপজেলার কোনাপাড়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই তার। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে এলাকা ছাড়া তিনি। তার বর্তমান ঠিকানা হলো সুনামগঞ্জের হাসান নগরের ময়নার পয়েন্টের রায়হান মঞ্জিল। ১৪ বছর ঢাকার আজমির বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করেছেন।
আজমির বিল্ডার্সের সূত্র ধরেই প্রকৌশলী কাশেমের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং সিলেটের আখালিয়ায় সুরমা আবাসিক এলাকায় প্রকৌশলী কাশেমের বাড়ির নির্মাণ কাজের দেখভালের দায়িত্ব পান। ছেড়ে দেন আজমির বিল্ডার্সের চাকুরি। খুলে যায় উজ্জলের ভাগ্যের চাকা। ২০১৬ সালে কাশেমের সহযোগিতায় গ্রীণ কন্সট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ বছরে জেলায় ৩০০ কোটি টাকার কাজ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর মধ্যে গ্রীন কন্সট্রাকশন যেসব প্রকল্পের ঠিকাদারি করেছে তার মধ্যে আছে- পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষে জেলা পরিষদের পুকুর, দিঘী, জলাশয় সমূহ পুনঃখনন, সংস্কার প্রকল্প, পৌরসভায় পানিসরবরাহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি করণ প্রকল্প, পানিসরবরাহে আর্সেনিক ঝুকি নিরসন প্রকল্প, পৌরসভায় মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প, পরিবেশ বান্ধব সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহ করণ প্রকল্প, উপজেলার পল্লী এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প, পানির গুনগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করণ প্রকল্প, হাওর অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন প্রকল্প।
অধিদপ্তরের নথি ও দরপত্র যাচাই করে আরও জানা গেছে, গ্রীণ কনস্ট্রাকশন সুনামগঞ্জে ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪৩টি ঠিকাদারী কাজ পেয়েছে। এরমধ্যে সর্বনিম্ন ৪৯ হাজার ৯৯৪ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৬ লাখ ৮১ হাজার ৭৩৯ টাকার কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ আইন অনুযায়ী ২৫টি কাজ পাওয়ারই যোগ্যতা রাখেনা ২০১৬ সালে লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী আবুল কাশেমের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে কোন জবাব দেননি তিনি। উজ্জল মিয়া জনান, কাশেম স্যার আমার বড়ভাইয়ের মতো। তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় অনেকেই অপপ্রচার করে।
তথ্য অনুযায়ী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আবুল কাশেম ২০১২ সালে প্রায় ১৩ বছর আগে সুনামগঞ্জের জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হন তিনি। দীর্ঘদিন একই জেলায় কর্মরত থাকায় কাশেম অনেকটাই বেপরোয়া বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সরেয়ার হোসেন জানান, ‘একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে প্রকৌশলী কাশেমকে সিলেটে বদলি করা হয়েছে। এর আগে ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও কক্সবাজারে বদলি করা হলেও শেষ পর্যন্ত কাশেমকে সরানো যায়নি, সুনামগঞ্জেই থেকে গেছেন তিনি, এবারও সেরকম কিছু হবে কি-না জানতে চাইলে তার কোন জবাব দেননি প্রধান প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন।