নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- অনিয়ম- দুর্নীতি, নিয়োগ বানিজ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগে সাংসদ, সরকারি- বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ায় অনুসন্ধান চলছে জোরেশোরে। দুদক বলছে, দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, রেল ভবন, বিদ্যুৎ, সিভিল অ্যাভিয়েশন, ব্যাংক, পাঁচ তারকা হোটেল, ডাক বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিসিক ভবন এবং ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাংসদসহ বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাবেক- বর্তমান প্রভাবশালী কর্মকর্তারা রয়েছেন এই তালিকায়। যাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থপাচার, অবৈধ সম্পদ, স্কুল মাদ্রাসা কমিটির নামে ডিও লেটার দিয়ে কোটি কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানের যারা রয়েছেন তারা হলেন, ত্রিশালের আসনের সাংসদ হাফেজ রুহুল আমিন মাদানি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড- এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা, ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য ফাতেমাতুজ জোহরা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিপ্তরের উপ- পরিচালক ডিডি (প্রশাসন ও অর্থ) মামুন মাহমুদ, রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল বেপজা'র সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান খান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জয়নুল হক শিকদার, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শামস- উল ইসলাম, সিভিল অ্যাভিয়েশন অথিরিটির সাবেক চেয়ারম্যান নাঈম হাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব আ শ ম ইমদাদুদ দস্তগীর, ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের চেয়ারম্যান মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিচালক আরিফ মোতাহার, হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ ভুইয়া, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর পরিচালক মফিজুল ইসলাম ও ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক উপ- পরিচালক ফারজানা পারভীনসহ ১০ উপজেলা কর্মকর্তা, অগ্রণী এসএমই উপ- পরিচালক মোজাহিদুল ইসলাম জোয়ারদার,ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প.প. কর্মকর্তা ডাক্তার মহসিন উদ্দিন ফকির।
অবসরে যাওয়া রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান ছাড়াও রেলের সাবেক- বর্তমান বিশ ঊর্ধতন কর্মকর্তাসহ সব মিলে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান জালে। অপরদিকে ডাকের মহাপরিচালক সুধাংশ শেখরের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে দুদক। যেমন রেলের শামছুজ্জামান অনিয়মের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ হুন্ডি হিসেবে লন্ডনে পাচার করেন বলে অভিযোগ করা হয়। মহাপরিচালকের ছেলে সাদমান জামানের ব্যাংক হিসাবে এসব অর্থ জমা হয়েছে। ব্যাংক ও শাখার নামও উল্লেখ রয়েছে দুদকের নথিতে। সেটি হলো লন্ডনের বার্কলেস ব্যাংকের মুরগেট শাখা। শাখার ফোন নাম্বার ০৩৪৫৭৩৪৫৩৪৫ দেওয়া হয়েছে।
এ সব অভিযোগে দেখা যায়, তিনি অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিংস্টক) থাকাকালে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ১০০ মিটারগেজ ও ৫০ টি ব্রডগেজ কোচ ক্রয় করেন। এ ছাড়া ১১০ টি ট্রাকশন মোটর মেরামতে অনিয়মের মাধ্যতে ২৪ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডিডি (প্রশাসন ও অর্থ) মামুন মাহমুদ নিজ জেলা নোয়াখালীতে ২০ একর জমি ক্রয় করেছেন যার অনুমান মূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা, উত্তরায় তিনটি ফ্ল্যাট যার মূল্য ৬০ লাখ টাকা, বসিলায় ছয় তলা একটি ভবন যার মূল্য তিন কোটি টাকা, তার ভাই ও বোনদের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন, গুলশান তিন নাম্বারে দুটি ফ্ল্যাট যার মূল্য ৯০ লাখ টাকা, স্ত্রীর জন্য ৮২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, নিজ এলাকায় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট যার মূল্য তিন কোটি টাকাসহ আরও নামে- বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে স্ত্রী ও আত্মীয়- স্বজনের নামে প্রায় কয়েকশো কোটি টাকা সম্পদ অর্জন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে উপ পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) হিসেবে অধিদপ্তরে কর্মরত। ফায়ার ফাইটার ম্যান নিয়োগ বাণিজ্য করছে।
ডিডি মামুন মাহমুদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুদকসহ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নেমেছে। এদিকে শামছুজ্জামানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের বিষয়েও দুদকে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এতে দেখা যায়, রাজধানীর শান্তিবাগে আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। তার সাবেক স্ত্রীকেও একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে দেন, যা অভিযোগে ওঠে এসেছে। পূর্বাচলে সাড়ে সাত কাঠার প্লট, মিরপুরে সাড়ে তিন কাঠা জায়গা ও যশোরের ঝিকরগাছায় ৬০ বিঘা জমিসহ দুই তলা বাড়ি রয়েছে। অপরদিকে ডাক অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) সুধাংশু শেখর ভদ্রের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করছে দুদক। তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলায় বিদেশ যাত্রায় সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিঠিও দিয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ডাক বিভাগের প্রায় ৫৪১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের একটি প্রকল্পের ১৬০ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া শতশত কোটি টাকার দুর্নীতি এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সে জন্য দুদক এরইমধ্যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। তবে অনুসন্ধান এখনও চলমান রয়েছে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বেসরকারি যেসব প্রভাশালী ব্যক্তির দুর্নীতির অনুসন্ধান পড়ে ছিল সেগুলো আবার সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতি কখনো ছোট বড় নই। দুর্নীতি তো দুর্নীতিই সেটি যেমনই হোক। ছোট ছোট দুর্নীতি থেকেই বড় বড় দুর্নীতির জন্ম দেয়। দুদক আগের চেয়ে ভালো কাজ করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। দুদকের দুর্নীতির বিষয়ে আর বিশদ অনুসন্ধান প্রয়োজন। একইসঙ্গে দুদকের জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে সেগুলোর সমাধান প্রয়োজন।#
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ সাঈদুর রহমান রিমন। প্রকাশক ও সম্পাদক ফয়সাল হাওলাদার। বার্তা- সম্পাদক জুয়েল খন্দকার। প্রধান কার্যালয়ঃ- ৩৮/১ আরামবাগ.(মতিঝিল) ঢাকা-১০০০। ইমেলঃ- bdccrimebarta@gmail.com, মোবাঃ ০১৭৩২৩৭৯৯৮২
ইপেপার