আলী হোসেনঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপটে বিশাল মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিজিবির সদস্য শহিদুল ইসলাম সুমন ও তার পরিবার এর সদস্য'দের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক ও পেশা গত প্রভাব খাটিয়ে গত কয়েক বছরে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। মাদক সাম্রাজ্যের কারনে দীর্ঘদিন ধরেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রাজশাহী'তে কর্মরত বিজিবির ল্যান্স নায়েক শহিদুল ইসলাম সুমন ও তার পরিবারের সদস্য'রা। বিজিবিতে ছোট পদে চাকুরি করে জেলা শহর ও উপ- শহরে জমি, বাড়ি তৈরি করেছেন শহিদুল।
অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য শহিদুল ইসলাম সুমন’ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চাটাইডুবি গ্রামের মো. মেরাজুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে। অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী পরিবারের সন্তান শহিদুল ইসলাম সুমন, চাকুরি ও আইন অমান্য করেই চাকরির আগেই করেছিলেন প্রথম বিয়ে। চাকুরিতে থাকলেও সেখান থেকেই নেতৃত্ব দেন, মাদক সিন্ডিকেটের। জেলার বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তার রয়েছে সখ্যতা। এলাকায় তার মাদক কারবারে সরাসরি জড়িত তার আপন ভাই মো. কালাম, মাসুদ ও তার স্ত্রী রহিমা ইয়াসমিন।
১২ বছর চাকুরির বয়স হলেও ইতোমধ্যে তিনি গ্রামের বাড়ি ছেড়ে জেলা শহরে বসবাস করছেন। জেলা শহরের স্বরুপনগর এতিমখানা এলাকায় পৌণে দুই কাঠা জমি ক্রয় করেছেন। সেখানে গড়ে তুলেছেন তিন তলা বিশিষ্ট আলিসান বাড়ি সহ আসবাবপত্র, এছাড়াও সদর উপজেলার বারো ঘরিয়া নতুন বাজার সংলগ্ন এলাকায় দুই কাঠা জমি কিনেছেন বিজিবি সদস্য শহিদুল ইসলাম সুমন।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও শহিদুল ইসলাম সুমনের আত্মীয়-স্বজনদের দাবি, শুধুমাত্র আওয়ামী পরিবারের সদস্য হওয়ায় চাকুরি হয়েছে শহিদুল ইসলাম সুমনের। পাশাপাশি সীমান্তে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ও মাদক চোরাচালানে সিদ্ধহস্ত সে। এনিয়ে বিজিবি কর্তৃপক্ষের কাছেও শহিদুল ইসলাম সুমনের বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় অভিযোগ তোলা হয়। তবে বারবারই আওয়ামী লীগের দোহায় দিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হতো শহিদুল'কে।
জানা যায়, ভারতীয় সীমান্তবর্তী চরবাগডাঙ্গা এলাকা হেরোইন পাচারের বড় রুট, একাধিক মাদক কারবারিদের এলাহি কারবার। এই মাদক চোরাচালানের রুটের নিয়ন্ত্রণে জড়িত রয়েছেন এই বিজিবি সদস্য শহিদুল ইসলাম সুমন। মাঠ পর্যায়ে মাদক সিন্ডিকেট সামাল দেয় তার পক্ষে দুই ভাই ও চোরাচালানের সদস্যরা। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে হেরোইন পাচার করে জেলা শহরে আসে। এরপর রাজধানী ঢাকা,আরও দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে যায় এসব মাদক। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। পাশাপাশি মাঠে থাকে একদল দক্ষ মাদক চোরাকারবারির সক্রিয় দল।
সম্প্রতি শহিদুল ইসলাম সুমনের মাদকের এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় বিরোধ দেখা দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশ্বরোড এলাকার এমজে থাই- এ্যালুমিনিয়াম এ্যান্ড এসএস ওয়ার্কসপের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজানের সাথে। এর জের ধরেই গত ২১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে মিজানের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এই হামলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পুরপুরি নেতৃত্ব দেন, বিজিবি সদস্য শহিদুল ইসলাম সুমন। এসময় ১০-১২ জন মুখোস ও অস্ত্রধারী ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী মিজানুর রহমানের স্ত্রী জেসমিন বেগমকে এলো পাতাড়ি লাথ কিল ঘুঁষি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় ২২ ডিসেম্বর লিখিত এজাহার দায়ের করেন আহত জেসমিন বেগম। তিনি জানান, হঠাৎ করেই সন্ত্রাসী বাহিনী বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়ির সামনে হামলা চালায়। আমাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। আমার বাড়ির লোক, গোপনে ভিডিও ধারণ করে রাখি, পরে স্থানীয়'রা আমাকে উদ্ধার করে আমার স্বামী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। আমি এর সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বিজিবি সদস্য শহিদুল ইসলাম সুমন আমার আপন ভাইরা ভাই। আমার স্ত্রী ও তার স্ত্রী সম্পর্কে দুই বোন। সেই সুবাদে তাকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি ও জানি। তার মাদক কারবারের কারনে আমাদের পরিবারের অনেক সুনামক্ষুন্ন হয়। আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে সে দীর্ঘদিন যাবত এসব করেছে কিন্তু সরকারের পরিবর্তনের কারনে তাকে তার মাদক কারবার বন্ধ করতে অনুরোধ জানায় ও তার কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানায় আমরা। তিনি আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে শত্রু মনে করে শহিদুল ইসলাম সুমন। এতে ই লোকজন নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আমার স্ত্রীকে শারীরিক ভাবে হেনস্তা ও শ্লীলতাহানি করে। পাশা পাশি আমার ছবি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে কিছু অসাধু সাংবাদিক'দের মাধ্যমে মিথ্যা- বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেই।
স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম জানান, আমার প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম সুমন রাজনৈতিক বিবেচনায় চাকরি পায় বিজিবিতে। আমরা অবাক হয়েছি, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছে শহিদুল ইসলাম সুমন। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব। একজন ল্যান্স নায়েক কত টাকা বেতন পায়? যাতে করে কোটি টাকার মালিক হন তিনি। জেলা শহরে কি ভাবে জমি কেনার পাশাপাশি আলিশান বাড়ি তৈরি করতে পারে? এলাকাবাসী নাইম ইসলাম বলেন, দুদক ও বিজিবি কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানায়, তার সকল অপকর্মের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হোক। সরকারি চাকরি করে কিভাবে মাদক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব কারবার চালিয়ে যায়? এলাকায় তাকে নিয়ে সবাই আতঙ্কে থাকে। কারন দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে এসব অপকর্ম করেছে শহিদুল ইসলাম সুমন। ও তার ভায়েরা।
কলেজ শিক্ষক ও সমাজ সেবক আরিফুল ইসলাম জানান, স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে। কিন্তু তাদের দোসররা এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা চাই, তাদেরকে ও তাদের মত কালো মুখোশধারীদের আইনের আওতায় আনা হোক। কারন তার কারনে জেলার তরুণ প্রজন্ম মাদকের ভয়াল থাবায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাকে চাকুরিচ্যুত করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে কঠোর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিজিবির মতো একটি স্বনামধন্য বাহিনীতে শহিদুল ইসলাম সুমনের মতো কিছু অসাধু সদস্য থাকার কারণে বিজিবির বদনাম হচ্ছে।
এনিয়ে অভিযুক্ত বিজিবি সদস্য শহিদুল ইসলাম সুমন সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। মুঠোফোনে তিনি জানান, মোবাইলে আপনার সাথে কথা বলব না, আমার লোকজন কথা বলতে। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে সংবাদ না প্রকাশ করতে হুমকি দেয়। পাশাপাশি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন শহিদুল ইসলাম সুমন।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- রাজশাহী ব্যাটলিয়ন বিজিবি ১ অধিনায়ক এর নিকট জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ করেনি তিনি। বিজিবির সাবেক একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন,বিজিবিতে চাকুরি করে এমন অপকর্ম করার কোন সুযোগ নেই। এনিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ সাঈদুর রহমান রিমন। প্রকাশক ও সম্পাদক ফয়সাল হাওলাদার। বার্তা- সম্পাদক জুয়েল খন্দকার। প্রধান কার্যালয়ঃ- ৩৮/১ আরামবাগ.(মতিঝিল) ঢাকা-১০০০। ইমেলঃ- bdccrimebarta@gmail.com, মোবাঃ ০১৭৩২৩৭৯৯৮২
ইপেপার