বিশেষ প্রতিনিধি: প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বেকার যুবক যুবতীদের আত্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ২শ’ ৯২ কোটি ১১ লাখ ৫শ” ১২ টাকা বরাদ্দের বিপুল অর্থ আত্নসাত ও অপচয়ের অভিযোগে সাবেক উপ পরিচালকসহ ৭জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। ময়মনসিংহ বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার দায়ের করেন সাংবাদিক মোঃ খায়রুল আলম রফিক। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এ মামলা করা হয়।
আদালতের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) ময়মনসিংহ জেলা শাখার উপসহকারী আনিসুর রহমান ও শাহজাহানকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। মামলার কপি হাতে পাওয়ার পর থেকে সরেজমিনে তদন্ত করছেন। ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক উপ – পরিচালক ফারজানা পারভিন (বর্তমানে নেত্রকোনা), সাবেক সহকারি পরিচালক নুরুজ্জামান চৌধুরী, (বর্তমানে ডিডি শেরপুর) সাবেক সহকারি পরিচালক মো: জোয়াহের আলী মিয়া বর্তমানে (অব:), গৌরীপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নদ্দন কুমার দেবনাথ, ত্রিশাল উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক উপজেলা কর্মকর্তা মো: আবু জুলহাস বর্তমানে হালুয়াঘাট, ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সাবেক যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ ও গোলাম মোস্তফা ।
বাদী তার মামলার আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ২০ জুলাই ২০১৭ ইং হতে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন তন্মধ্যে এখনও এদের কেউ কেউ বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত আছেন , কেউ অবসরে গেছেন। উপরোল্লিখিত অংকের টাকার মধ্যে ৪টি উপজেলায় ১৮০ কোটি টাকা আত্নসাত ও অপচয় করেছেন বিবাদীগণ। গৌরীপুর উপজেলায় বরাদ্দকৃত ৫২ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় করা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা, হালুয়াঘাটে ৩৭ কোটি টাকা, ফুলবাড়ীয়ায় ৪৪ কোটি টাকা, ত্রিশালে ৪৩ কোটি টাকা।
অভিযোগে বলা হয়, উপরোক্তদের পারস্পরিক যোগসাজশে প্রশিক্ষণ প্যানেল এবং ১০টি নির্ধারিত মডিউলের ভিত্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ পরিচালনা করার দায়িত্বে থাকলেও বিবাদীগণ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে সরকারি টাকা আত্নসাত ও অপচয় করেছেন । উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও সদস্যসচিব উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অধিকাংশ কর্মকর্তা ক্লাস- পাঠদান পরিচালনা করেছেন, যা ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর প্রশিক্ষণ পাঠক্রম বেআইনীভাবে লঙ্ঘন করেছেন ।
১ নং বিবাদী ডিডি ফারজানা পারভিন ক্ষমতা অপব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নামে অতিরিক্ত ক্লাস দেখিয়ে উক্ত টাকা আত্নসাত করেন । তিনি তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সকল উপলোয় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন । ত্রিশাল উপজেলায় ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দের অংশ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
উক্ত কমিটিতে তাদের দুর্নীতি, ভুয়া ব্যাংক হিসাব দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন এবং ৫৩ লক্ষ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরৎ দেয়ার জন্য সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে ত্রিশাল যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু জুলহাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালু করে তাকে বদলী করা হয় হালুয়াঘাট উপজেলায়। জেলার একাধিক উপজেলায় একই দিনে কয়েকশ’ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে প্রশিক্ষণ দেখিয়েছেন। উপরোক্ত রাস্তা এই অল্প সময়ে যাতায়াত অসম্ভব হলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় প্রশিক্ষণের সময় ছিল এক ব্যাচ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মোট ৪ ঘন্টা। দ্বিতীয় ব্যাচ ছিল দুপুর ২টা থেকে ৫টা মোট ৪ ঘন্টা। ১০টি নির্ধারিত মডিউল অনুয়ায়ি সিডিউল- বিষয় ভিত্তিক কর্মকর্তাদের নামে এক বিপুল ক্লাসের উল্লেখছিল যা দুর্নীতি ও ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে করা হয়েছে।
তন্মধ্যে ফারজানা পারভিন ত্রিশাল উপজেলায় ৪৫২টি , নুরুজ্জামান চৌধুরী ৪৩৪টি, জোয়াহের আলী মিয়া ৪৩৪টি, আবু জুলহাস ৮৩৩টি, উপজেলা একাডেমি সুপারভাইজার সাহানা আক্তার ৪২০টি, ডাক্তার ওয়াজিদ আহমেদ ৬৬৮টি, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান ৫৪৮টি , ত্রিশাল ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সাবিনা ইয়াসমিন ৬৬৮টি, স্ট্রোকে আক্তান্ত রোগি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক ( মৎস ) বদরুজ্জামান ফকির ৭০০টি, যুব উন্নয়ন অদিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আবুল বাশার ২২০টি। এভাবে প্রত্যেকটি উপজেলায় দেখানো হয়েছে ভুয়া ক্লাস। উত্তোলন করা হয়েছে উপরোক্ত টাকা । টাকা করা হয়েছে আত্নসাত ও অপচয়।
মোট ক্লাস দেখানো হয়েছে- ফারজানা পারভিনের নামে ১৮৪৮টি ক্লাস, নুরুজ্জামান চৌধুরি ১৭০৮টি, জোয়াহের আলী ১৭০৪টি, নন্দন কুমার দেবনাথ ১২৫৭টি, নুর মোহাম্মদ ১০৮৫টি, আবু জুলহাস ৮৩৩টিসহ ১০টি উপজেলায় একইভাবে ভুয়া ক্লাস দেখিয়েছেন তারা । সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে নামমাত্র এইসব টাকা লেনদেন না করে বিতরণ করেছেন ডাচবাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে। সার্ভিসের আওতায় মাঠকর্মীদের ব্যাংক হিসাব জাতীয় পরিচয়র পত্র দিয়ে খোলার নির্দেশনা বাধ্যতামূলক থাকলেও তারা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ও সংশ্লিস্ট সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জন্মনিবন্ধন দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে টাকা উত্তোলন করেছেন্য।
জেলার ত্রিশাল উপজেলায় তদন্তে প্রমান মিলেছে জেলা প্রশাসকের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে। এথেকে প্রতিয়মান হয় যে, কর্মসূচীর আওয়াতায় জেলার সকল উপজেলায় একই দুর্নীতি অনিয়ম ও অপচয়ের ঘটনা ঘটেছে । ইতিপূর্বেও এই সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত ও উপরোক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করেন এই মামলার বাদী খায়রুল আলম রফিক। তিনি জানান, দপ্তরগুলিতে অভিযোগ লিখিত দরখান্তের মাধ্যমে দাখিল করি। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, উপরোক্তরা আমাকে না জনিয়ে তদন্ত করে তাদের অভিযোগগুলি পাশ কাটিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। আবার অনেকে ফাইল লাল ফিতায় বন্দি করে রেখেছেন ।
এতে নিরুপায় হয়ে আমি জনস্বার্থে বাদী হয়ে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ জেলা জজ, দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার আবেদন করি। আশা করছি বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে দুর্নীতি সরকারি অর্থ অপচয় রোধ এবং আত্বসাতকৃত টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরৎ আনা সম্ভব হবে। এবিষয়ে জানতে ফারজানা পারভিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ফোন রিসিভ করেননি এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি ।
ময়মনসিংহ জজ আদালতের আইনজীবি শেখ আবু সাদাত খায়ের জানান, গত ১৮ জানুয়ারি অভিযোগ আদালতে শুনানি করেছি । ২৩ জানুয়ারি আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আদেশ দেন যে, দুর্নীতি দমন কমিশন ময়মনসিংহ কার্যালয় অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন । মামলার আবেদনে ধারা উল্লেখ করা হয়েছে দন্ডবিধি ৪০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২)। মোকদ্দমা নং- ০১/২০২৩ ইং।