• বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
কুষ্টিয়ায় ট্রাক-মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষ নিহত ২ আহত ৭ ফেসবুকে সম্পাদকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার : আদালতে মামলা যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে হামলা ও জমি দখলের অভিযোগ : বিএনপি নেতার, সংবাদ সম্মেলন  বেনাপোল সীমান্তে ৫পিচ স্বর্ণেও বারসহ যুবক আটক জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৩২ জনের জামিন বাতিল কুষ্টিয়ায় নিখোঁজের একদিন পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না: জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে পুলিশ সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর জানাজা পড়ালেন জামায়াত আমির কুষ্টিয়ায় এক ইউপি চেয়ারম্যান’কে কুপিয়ে জখম

রূপগঞ্জে রফিক বাহিনীর ত্রাসের রাজত্ব

Reporter Name / ১১৭ Time View
Update : রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

ঘরছাড়া অসংখ্য পরিবার, দিনে- দুপুরে বাড়িঘরে হামলা, নির্ঘুম রাত কাটছে নারী- শিশুদের

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা, জমি দখল করতে দিনে- দুপুরে বাড়ি ঘরে হামলা চালানো হচ্ছে। বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে মালামাল। রাতের বেলা বাড়ি বাড়ি গিয়ে যুবতী মেয়েদের তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্ঘুম রাত পার করছেন অসংখ্য পরিবার। অনেকে পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ফেলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

অভিযোগের তীর রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের সত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ১৫-২০ জন ভুক্তভোগী গত শনিবার অভিযোগ নিয়ে আমাদের অফিসে হাজির হন। তাদের অভিযোগ, রফিকুল ইসলাম তার নিজ এলাকা কায়েত পাড়া ইউনিয়নের সকল জমি দখল করতে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বাড়ি বাড়ি হামলা চালাচ্ছে। গত এক মাসেই অন্তত ৪০ টি বাড়িতে হামলা ও লুটপাত চালিয়েছে। দিনে দুপুরে শত শত মানুষ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। অজ্ঞাত কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে পুলিশ। মামলাও নিচ্ছে না।

অভিযোগের সূত্র ধরে শনিবার সরেজমিন রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিস্থিতি। দাঁড়িয়ে আছে একের পর এক আধভাঙা ভবন। ঠিক যেন ইসরায়েলের ক্ষেপনাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্থ হয়েছে বাড়ি ঘর গুলো। হামলার শিকার সাবেক ইউপি মেম্বার ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সেক্রেটারি মোশারফ ভুঁইয়ার বাড়িও। ভেঙে ফেলা হয়েছে দ্বিতল বাড়িটির গেট, জানালার কাঁচ।

বাড়ির ভেতরে তিনটি বিল্ডিংয়েই ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘরে ঢুকে দেখা যায় বাথরুমের কমোড থেকে শুরু করে আলমারি, টেবিল, চেয়ার সব ভাঙাচোরা। মোশারফ ভুঁইয়ার মামাতো ভাইয়ের স্ত্রী নার্গিস ভাঙা ঘরবাড়ি দেখাতে দেখাতে বলেন, অনেক দিন ধরেই রফিক (ওরফে আন্ডা রফিক) বাড়িটা ছেড়ে দিতে বলছিল। রাজি না হওয়ায় ১৫ দিন আগে তার ভাড়া করা দেড়- দুইশ লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হাজির হয়।

বড় বড় হাতুড়ি দিয়ে পুরো বাড়ি ভাঙচুর করে। টিভি, ফ্রিজসহ সব নিয়ে গেছে। ভয়ে আমরা সবাই পালিয়ে যাই। এরপর কয়েকবার এসে নানা রকম হুমকি দিয়ে গেছে। পুরুষ মানুষরা বাড়িছাড়া। সাত- আটজন মেয়ে আছে এই বাড়িতে। তাদের নিয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকি। পত্রিকায় এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর আমার কি হবে জানি না।
কাছাকাছি দূরত্বে আরও কয়েকটি ভাঙা বিল্ডিং দেখা যায়। তাতে ছিল না জন- মানব। এছাড়া অনেক গুলো মাটির বাড়ি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের অধিকাংশই ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তবে আড়ালে ডেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই নারী বলেন, আশপাশে রফিকের লোকজন আছে। রফিকের ভয়ে এসব ঘরের লোকজন বাড়িঘর ফেলে পালিয়েছে। এলাকা ছেড়েছে আজিজুল্লাহ, ফজুল, মোক্তার, আমারত, ছোমেদ আলী, কবির সহ ৬০- ৭০ টি পরিবার। দুদিন আগে পরে আমাদেরও হয়তো এলাকা ছাড়তে হবে। গভীর রাতে ঘরে ঢুকে রফিকের লোকজন হুমকি দিয়ে যায়। মারধর করে।

মোশারফের ভাই আলী আসগর বলেন, নামমাত্র মূল্যে ঘরবাড়ি কিনে নিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের সত্ত্বাধিকারী রফিক সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে অনেক দিন ধরে হামলা- মামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে। আমার বাবা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আমাদের পাঁচ ভাইয়ের বাড়িসহ ওই এলাকার অন্তত ৪০টি বাড়ি রফিকের লোকজন ভেঙে ফেলেছে। প্রতিটা পরিবারই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। আজ সকালে দেড়- দুইশ লোক নিয়ে গিয়ে আমার নতুন বাড়িটি ভেঙেছে। ছোট ভাই শাহাজাদার বাড়ি ভেঙেছে কিছুদিন আগে।

ভেকু দিয়ে স্থানীয় হোসেন মেম্বারের তিন তলা বাড়ি ভেঙে ফেলেছে। স্থানীয় এমপি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সমর্থন থাকায় সে এগুলো করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনিই বিএনপি সমর্থক রফিককে আওয়ামী লীগের পতাকা দিয়েছেন। এখন জমি দখলে একে অন্যকে সহযোগিতা করছেন।

পশ্চিমগাও কায়েতপাড়ার বাসিন্দা ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ- সভাপতি খন্দকার আবুল বাশার টুকু বলেন, গত ২৪ অক্টোবর ও ১৩ নভেম্বর দুই দফা আমার বাড়িতে লুটপাট হয়েছে। জোর করে গরু, ছাগল, টিভি, ফ্রিজ সব নিয়ে গেছে। তিন মিনিট হাঁটা দূরত্বে পুলিশ ফাঁড়ি। কেউ আসেনি। থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে গিয়ে মামলা করি। বিষয়টি দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছি।

এদিকে মোশারফ ভুঁইয়া বলেন, তার পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি ঘরে হামলায় অন্তত ৮-১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। একটি ক্লাব ছিল, যেখানে দলীয় সভা- সমাবেশ করতাম। সেটা একদম গুড়িয়ে দিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ৪০টির বেশি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে রফিক বাহিনী। থানা মামলা নেয়নি। বাধ্য হয়ে আদালতে গিয়ে পাঁচটি মামলা করেছি। বাড়ি- ঘর ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে রূপগঞ্জ থানার ওসিকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভি করেননি।

নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, অতি সম্প্রতি বাড়িঘর ভাঙার কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে কিছুদিন আগে একটি বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ পেয়েছি। তবে মামলা করার জন্য ভুক্তভোগী পরিবার আসেনি। আমরা সেটা তদন্ত করে দেখছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category