শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের দুর্গম উপজেলা নামে খ্যাত শাল্লায় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে খাসজমি বন্দোবস্তসহ নামখারিজের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৭মাস পূর্বে হবিবপুর ইউপির আনন্দপুর গ্রামের মৃদুল চন্দ্র দাসের নিকট থেকে খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে নগদ ১লাখ টাকা হাতিয়ে নেন উপজেলা সার্ভেয়ার আবুল খায়ের।
সম্প্রতি ওই কর্মচারী বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় প্রকাশ্যে আসে তার প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা। নামজারির নামে কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা ভূমি অফিসের কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধেও। এসব কর্মচারীদের সাথে যুক্ত আছে বাইরের বেশকিছু দালালও।
১১আগস্ট বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায় একটি ফেস্টুনে লেখা রয়েছে 'আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত।' সাধারণ মানুষের দৃষ্টিগোচরের জন্য বাইরের ফেস্টুনে দুর্নীতিমুক্ত ভূমি অফিস লেখা থাকলেও, ভেতরের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাগজপত্রে ভুলত্রুটি ও নানা জটিলতা দেখিয়ে গোপনে ডেকে নিয়ে সাধারণ কৃষকের নিকট থেকে কর্মচারীরা হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
এতদিন দুর্নীতির অভিযোগগুলো গোপনে থাকলেও, সার্ভেয়ার বদলি হয়ে যাওয়ায় বেরিয়ে আসছে সার্ভেয়ারসহ ভূমি অফিসের আরও বেশক'জন কর্মচারীর নাম। কাগজপত্রে নানা সমস্যা কথা বলে সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন হয়রানীতে ফেলে ওই চক্রটি। ফলে নামজারি করতে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হয় কৃষকদেরকে। দিতে হয় মোটা অংকের টাকাও। এমন অভিযোগ উপজেলার বহু কৃষকের।
উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের দলিল লেখক আব্দুল গাফফার মিয়া বলেন সার্ভেয়ার আবুল খায়ের অনেক পাবলিককে মাইরা গেছে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। আমার মাধ্যমে অনেক মানুষ কাগজ জমা দিছে। কয়েকদিন ধরে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখছে। সার্ভেয়ার আবুল খায়ের খুব খারাপ মানুষ ও চোর বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
মৃদুল দাস বলেন আমার নিকট থেকে ১লাখ টাকা নিয়েছে সার্ভেয়ার। এখন শুনছি সার্ভেয়ার বদলি হয়ে গেছে আর আমাকে শুধু একটার পর একটা তারিখ দিয়ে যাচ্ছে। শুধু এখানেই শেষ নয় সার্ভেয়ার আবুল খায়ের নামজারির ক্ষেত্রেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাধারণ কৃষকদের নিকট থেকে।
সদর ইউপির বাহাড়া গ্রামের ফীর্তিলাল দাস বলেন আমার ৪টা দলিলের নামখারিজের জন্য ২১হাজার টাকা কন্টাক্ট হইছে সার্ভেয়ারের সাথে। আমার ৩টা হইছে একটা বাকি রইছে। এতো টাকা কেনো দিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন আমরা তো একা না, প্রত্যেকই দিছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফয়েজুল্লাহপুর গ্রামের এক কৃষক বলেন ৪টা নামজারির জন্য তাকে ৩২হাজার টাকা দিতে হয়েছে দালালের মাধ্যমে। মাঠপর্চা অন্যের নামে, আরও অনেক ভুলত্রুটি আছে বলে এত টাকা দিতে হয় আমাদের। প্রতি নামজারিতে ৭হাজার টাকা দিতে হয় বলে জানান তিনি।
গত ৪এপ্রিল উপজেলার সাউধেরশ্রী গ্রামের শিমু দাস উপজেলা ভূমি অফিসে আসেন নামখারিজ করতে। এসময় তিনি উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারীদের সাথে ৫টি নামখারিজের দরকষাকষি করতে দেখা যায়। ৫টি নামখারিজ করতে ৩৬হাজার টাকা দিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেয় ভূমি অফিসের কর্মচারীরা। পরে তিনি অর্থের অভাবে নামখারিজ করতে পারেননি। ১০ আগস্ট বুধবার তিনি মুঠোফোনে বলেন ৫টি নামখারিজ করতে ৩০হাজার টাকা সাব্যস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৫হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছেন। এখনো তার নামখারিজ হয়নি বলে জানান শিমু দাস।
জানা যায়, নামখারিজ করতে ২০২১ সালের ১জুলাই সারা দেশে একযোগে ভূমি মন্ত্রণালয় ই-নামজারি ব্যবস্থা চালু করেছে। অনলাইনে আবেদনের সময় ১হাজার ১৭০টাকা অনলাইনে পেমেন্ট করলেই ২৮দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করা যাচ্ছে। কিন্তু ১৭মাস ধরে উপজেলা ভূমি অফিসে ঘুরছেন আটগাঁও ইউপির শশারকান্দা গ্রামের মোশাহিদ মিয়া। ১১আগস্ট বৃহস্পতিবার ভূমি অফিসে আসেন মোশাহিদ মিয়া।
সেখানে থাকা কর্মচারীরা নামজারি করতে হলে তাদের সাথে কন্টাক্ট করতে হবে। এসময় মোশাহিদ মিয়া সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা জানান। পরে মোশাহিদ মিয়াকে আবারো ভূমি অফিসে ককন্টাক্ট করার জন্য পাঠানো হলে সন্দেহ করে ভূমি অফিসের কর্মচারীরা। পরে মোশাহিদ মিয়ার শরীর চেক করা হয় মোবাইলে কোনো রেকর্ড হচ্ছে কিনা। এক পর্যায়ে কোনো ভেজাল না করার শর্তে তাকে ১হাজার ১৭০টাকায় নামজারির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানান মোশাহিদ মিয়া।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল খায়েরের মুঠোফোনে ৩দিন ধরে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন খাস জায়গা বন্দোবস্ত কি সার্ভেয়ার দিতে পারে? নামজারির অতিরিক্ত টাকা কে দিয়েছে, কে নিয়েছে এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান ইউএনও।#
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ সাঈদুর রহমান রিমন। প্রকাশক ও সম্পাদক ফয়সাল হাওলাদার। বার্তা- সম্পাদক জুয়েল খন্দকার। প্রধান কার্যালয়ঃ- ৩৮/১ আরামবাগ.(মতিঝিল) ঢাকা-১০০০। ইমেলঃ- bdccrimebarta@gmail.com, মোবাঃ ০১৭৩২৩৭৯৯৮২
ইপেপার