পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থীর চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমারে অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২০ বছরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সবশেষ ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও ভয়াবহ দমন-পীড়ন কয়েক দিনে সাড়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নেয়।
আর গত সাড়ে ৫ বছরে নতুন পুরাতন ও জন্ম নেওয়া শিশুসহ প্রায় ১৪ লাখের কাছাকাছি মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয়ে আছে বলে জানায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা।
বিপুল এই শরণার্থীর চাপে এখন কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষজন অসহায় এবং এখানকার সার্বিক অবস্থা অনেকটা নাজুক বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে কবে নাগাদ বিপুল সংখ্যাক শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরবে তাও জানা নেই কারো। এই অবস্থায় চরম একটি অস্বস্থিকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, আমার জানা মতে বিশ্বের অনেক দেশে শরণার্থী আছে তবে বাংলাদেশের মত এত বিপুল সংখ্যক নেই। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে সব শরণার্থী আছে তারা সেই দেশের আইন কানুন কঠোরভাবে মেনে চলে, আবার সেই দেশের সরকার তাদের আইন মানতে বাধ্যকরে। যেমন পার্শবর্তী দেশ ভারত এবং মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে কিছু শরণার্থী আছে সেই দেশের সরকার শরণার্থীদের একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে বের হতে দেয় না। তাদের দিয়ে সেখানেই উৎপাদনমুখী কাজ করায় এবং তারা কোন ভাবে স্থানীয়দের সাথে মিশতে পারেনা। কিন্তু বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা অবাধে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, তারা চাইলেই নাগরিকত্ব লাভ করতে পারছে, তারা মাদক ব্যবসা করে বিপুল টাকা আয় করছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। এমনকি সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে অপরাধ কর্মকাণ্ড করছে এটা খুবই দুঃখ জনক।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের অপহরণ বাণিজ্যের ফলে আমরা ছেলেমেয়েদের নিরাপদে স্কুল কলেজে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি, এর চেয়ে খারাপ বিষয় আর কি হতে পারে। উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি আমরা মানবিক কারণে কিন্তু আমরা এখন নিজেরা আতঙ্কিত। রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত গুম খুন অপহরণ, মাদকসহ সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে আমাদের নিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। এছাড়া শুরুর দিকে স্থানীয় অনেক ছেলেমেয়েরা ক্যাম্পে চাকরি করেছিল ফলে অনেকে লেখাপড়ার মুলধারা থেকে বাইরে চলে গেছে। অর্থ সংকট এবং এনজিওর কিছু কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা চাকরি হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরছে। লেখাপড়া থেকে সরে গিয়ে তারা এখন জীবনের মূলস্রোত থেকে সরে গেছে। আমাদের দাবি হচ্ছে কোন শর্ত ছাড়া দ্রুত মিয়ানমারের সব নাগরিককে তাদের নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যেতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের প্রজনন বা অতিরিক্ত সন্তান নেওয়ার বিষয়ে কঠোর হওয়ার দাবি জানান তিনি।
উখিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রতন দাশ বলেন, শরণার্থীদের চাপে উখিয়া, টেকনাফের মানুষ এখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে দ্রুত রোহিঙ্গাদের অপরাধের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর অবশ্যই প্রত্যাবাসান নিশ্চিত করতে হবে।
কক্সবাজারে কর্মরত ইউএনএইচসিআরে কর্মরত শামসুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ২০১৭ সালের পরে বিভিন্ন দাতা সংস্থা যেভাবে শরণার্থীদের জন্য সহায়তা দিত এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ভবিষ্যতে কি অবস্থা হবে আমরা কেউ বলতে পারিনা। আমি বাংলাদেশের মানুষ আমিও চাই আমার দেশটা নিরাপদে থাকুক। তবে এই অবস্থা চলমান থাকলে একদিন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।
এ ব্যপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, কোন মানুষ ইচ্ছা করে শরণার্থী হতে চাই না। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করে শরণার্থী হতে। মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি মানবিক এবং সংবেদনশীল রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে এটাও ঠিক রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ খাদ্য এবং সামাজিক ব্যবস্থপনায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছি। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে, আশা করি দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু হবে।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ সাঈদুর রহমান রিমন। প্রকাশক ও সম্পাদক ফয়সাল হাওলাদার। বার্তা- সম্পাদক জুয়েল খন্দকার। প্রধান কার্যালয়ঃ- ৩৮/১ আরামবাগ.(মতিঝিল) ঢাকা-১০০০। ইমেলঃ- bdccrimebarta@gmail.com, মোবাঃ ০১৭৩২৩৭৯৯৮২
ইপেপার