• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
আমরা এক পরিবার, কেউ কারো শত্রু হবো না: প্রধান উপদেষ্টা সীমান্তের বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্যের ভাতিজা ইয়াবাসহ আটক আওয়ামীপন্থী পুলিশ কর্মকর্তাদের নামের তালিকায় ময়মনসিংহের ওসি সফিকুল ইসলাম ভাড়া বাড়িতে কলেজ ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ, মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা যুবদল নেতা হত্যা মামলায় পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী কারাগারে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর: সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে হচ্ছে কমিটি, আন্দোলন স্থগিত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো অর্ধশত ফিলিস্তিনি নিহত সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ৮ দিনের রিমান্ডে টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপভ্যান সংঘর্ষে চারজন নিহত

যন্ত্রণার আরেক নাম টিনিটাস, করণীয়

সংবাদদাতা / ২০৩ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

স্বাস্থ্য বার্তা ডেস্কঃ পঞ্চাশ বছরের এক ভদ্রলোক চেম্বারে এসে বলা শুরু করলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে তার কানের ভেতর নাকি বিভিন্ন ধরনের শব্দ হয়, কখনো মনে হয় যেন কানের ভেতর ঢোল বাজছে আবার কখনো মনে হয় ঝিঁঝিপোকা ডাকছে, রাতেরবেলা এ সমস্যা আরও বেড়ে যায়। অটোস্কোপ নামক বিশেষ যন্ত্র দিয়ে কান পরীক্ষা করে দেখা গেল বহিঃকর্ণ এবং কানের পর্দা একদম স্বাভাবিক।

চারদিক নিস্তব্ধ থাকার পরও কানে অস্বাভাবিক শব্দ শোনার এ সমস্যাকে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টিনিটাস। শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ইংরেজি শব্দ ‘টিনিয়ার’ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে ঘণ্টার শব্দ। এ জন্যই রোগীরা এসে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে ইতিহাস দিতে গিয়ে বলেন কানে বিভিন্ন ধরনের শব্দ হচ্ছে; যেমন-ঝিঁঝিপোকার ডাকের শব্দ/শোঁ শোঁ শব্দ/রেললাইনে ট্রেন চলার শব্দ/ঘণ্টা বাজার শব্দ/টেলিভিশনে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেলে যেমন আওয়াজ হয়, কানে সে রকম আওয়াজ হয়। পৃথিবীতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে বিশজন এ টিনিটাস রোগে আক্রান্ত। নারীদের তুলনায় পুরুষরা এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি।

ষটিনিটাসের কারণ কী কী হতে পারে : আমরা জানি মানবদেহে কানকে বহিঃকর্ণ, মধ্যকর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ এ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আর টিনিটাসের কারণগুলোকেও এ ভাগ অনুযায়ী সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

* বহিঃকর্ণজনিত সমস্যা : কানে ময়লা বা খৈল জমা হলে।

* মধ্যকর্ণজনিত সমস্যা : মধ্যকর্ণে পানি জমলে, কানের পর্দা ফেটে গেলে, কান পাকা রোগ হলে; অটোস্কেলেরোসিস অর্থাৎ মধ্যকর্ণের অস্থি নাড়াচাড়া না করলে।

* অন্তঃকর্ণের বিভিন্ন রোগের কারণে : অন্তঃকর্ণের কোষের সমস্যার কারণে টিনিটাস হতে পারে। আমাদের কানের ভেতর ক্ষুদ্র চুলের মতো থাকে যেগুলো শব্দ তরঙ্গের সঙ্গে নড়াচড়া করে। এই কোষগুলো এক ধরনের ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল অষ্টম ক্রেনিয়াল নার্ভের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে পাঠায়। এর ফলে আমরা শব্দ শুনতে পাই। যদি এই লোমগুলো ছিঁড়ে যায় বা সঠিকভাবে কাজ না করে তখন মস্তিষ্কে অনিয়মিত এবং ভুল ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস পৌঁছায় যার ফলে টিনিটাস আক্রান্ত ব্যক্তি কানে অস্বাভাবিক শব্দ যেমন-ভোঁ ভোঁ ঝিঁ ঝিঁ শোঁ শোঁ ঘণ্টার ধ্বনি শুনতে পায়। মিনিয়ার্স ডিজিজ, শব্দ দূষণজনিত বধিরতা, অন্তঃকর্ণের প্রদাহ, অষ্টম স্নায়ুর টিউমারে রোগীরা টিনিটাস নিয়ে আসেন। এ ছাড়া বয়সজনিত কারণ অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষেরই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কানে শোঁ শোঁ করা শব্দ পেতে থাকেন।

* বিবিধ কারণ : কানের জন্য ক্ষতিকারক ওষুধ যেমন-অ্যাসপিরিন, ফ্রুসেমাইড, এমাইনোগ্লাইকোসাইড জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘদিন সেবন করলে, রক্তশূন্যতা দেখা দিলে, দীর্ঘদিন উচ্চরক্তচাপ থাকলে, মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে, দাঁত ও চোয়ালের সমস্যায়, ক্যানসার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি প্রয়োগে।

* টিনিটাস থেকে কী কী জটিলতা হতে পারে : মানসিক চাপ, ক্লান্তি, ঘুমে ব্যাঘাত, স্মৃতিশক্তির লোপ পাওয়া, মাথাব্যথা, বিষণ্নতা, বিরক্তি, দুশ্চিন্তা, কর্মক্ষেত্রে সমস্যা।

* চিকিৎসা : টিনিটাসের চিকিৎসানির্ভর করে রোগের উৎপত্তিজনিত কারণের ওপর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকটা ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের মতোই টিনিটাসের সম্পূর্ণ নিরাময় নাও হতে পারে, তখন চিকিৎসকরা এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবং আক্রান্তের মানসিক যন্ত্রণা বা অনিদ্রার সমস্যা হ্রাস করার জন্য বিভিন্ন মেডিসিন এবং থেরাপি দিয়ে থাকেন। সম্ভাব্য অন্তর্নিহিত কারণগুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেমন-

* কানের ময়লা অপসারণ : কানের ময়লা বা শক্ত খৈলজনিত ব্লকেজ অপসারণ করলে টিনিটাস কমাতে সাহায্য করতে পারে।

* শ্রবণ সহায়ক (হিয়ারিং এইড) : বয়সজনিত শ্রবণশক্তি (সাধারণত ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে) হ্রাস বা উচ্চ শব্দের কারণে টিনিটাসের ক্ষেত্রে, শ্রবণ সহায়ক (কানে শোনার যন্ত্র) উপসর্গগুলোকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

* ওষুধ : যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধগুলো টিনিটাস সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে না, তবে তারা টিনিটাসের সঙ্গে সম্পর্কিত উপসর্গগুলো উপশম করতে পারে, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়তা করে। চিকিৎসকরা কান পরীক্ষা করে টিনিটাসের কারণ বুঝে বিভিন্ন মেয়াদে ওষুধ দিয়ে থাকেন।

* পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী ওষুধ পরিবর্তন : যদি রোগীর ইতিহাস থেকে বোঝা যায় অটোটক্সিক (কানের জন্য ক্ষতিকারক) ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে গ্রহণের কারণে টিনিটাসের হয়ে থাকে, তাহলে ডাক্তার ওষুধ বন্ধ বা প্রতিস্থাপন করতে পারেন।

* কাউন্সেলিং এবং থেরাপি : প্রথমে রোগীকে বোঝাতে হবে এটা কোনো জীবন সংহারী সমস্যা নয়। রোগীকে সুন্দরভাবে রোগের বিস্তারিত জানাতে হবে এবং সব সময় চিন্তামুক্ত থাকতে বলতে হবে। রিলাক্সজেশন থেরাপি বা যোগব্যায়াম থেরাপির মাধ্যমেও শোঁ শোঁ শব্দ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া ঘুমানোর কক্ষে টিকটিক শব্দ করে চলা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...