ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ– ইসলাম নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে উৎসাহ দিয়েছে। ইসলামে সড়কের আইন মেনে চলে নিজেকে সড়কের দুর্ভোগ সৃষ্টির কারণ না বানানো, কেউ বিপদে পড়লে তার বিপদে এগিয়ে আসা, মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করা, সড়কে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু থাকলে তা সরানোর ব্যবস্থা করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আদম সন্তানের দেহে ৩৬০ টি সংযোগ অস্থি বা গ্রন্থি আছে। প্রতিদিন সেগুলোর প্রতিটির জন্য একটি সদকা ধার্য আছে। প্রতিটি উত্তম কথা একটি সদকা। কোনো ব্যক্তির তার ভাইকে সাহায্য করাও একটি সদকা। কেউ কাউকে পানি পান করালে তা-ও একটি সদকা এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও একটি সদকা।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪২৩)। সুবহানাল্লাহ।
এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় জনগণের কল্যাণে কাজ করা মহান আল্লাহর কাছে কতটা প্রিয়। নিরাপদ সড়ক বিনির্মাণের একটি অংশ হলো, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া। আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, একবার মহানবি (সা.) তাঁর কতক স্ত্রীর কাছে এলেন। তখন তাদের সঙ্গে উম্মে সুলায়মও ছিলেন। মহানবি (সা.) বলেন, সর্বনাশ, হে আনজাশাহ! তুমি (উট) ধীরে চালাও। কেননা তুমি কাচপাত্র (মহিলা) নিয়ে চলেছ। (বুখারি, হাদিস : ৬১৪৯)।
এ ছাড়া কোনো পথচারী পথ হারিয়ে ফেললে তাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়াও অত্যন্ত সওয়াবের। এটিও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে করণীয় বিষয়গুলোর একটি। ইসলাম এ বিষয়টিকে এতটাই গুরুত্ব দেয় যে, এর বিনিময়ে গোলাম আজাদ করার সমপরিমাণ সওয়াবের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বারাআ ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.)কে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে অথবা টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথ হারিয়ে যাওয়া লোককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করে দেওয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৭)।
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে আরেকটি করণীয় হলো মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা, কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে কিংবা ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়লে বা অন্য যে কোনো ধরনের বিপদে পড়লে সাধ্যমতো তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। কারণ একজন মুসলমান তার অপর মুসলমান ভাইকে কখনো বিপদে ফেলে রেখে যেতে পারে না।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর ধোঁকাবাজি করো না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করো না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশে আগোচরে শত্র“তা করো না এবং একে অন্যের ক্রয়- বিক্রয়ের ওপর ক্রয়- বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে থাক। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয়প্রতিপন্ন করবে না। তাকওয়া এখানে, এ কথা বলে রাসূল (সা.) তিনবার তাঁর বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোনো মুসলিমের ওপর প্রত্যেক মুসলিমের জান- মাল ও ইজ্জত- আবরু হারাম’। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৩৫)।
নবিজি (সা.) বলেন, ‘ইমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান শাখা হলো, এ কথার স্বীকৃতি দেওয়া যে আল্লাহতায়ালা ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর সবচেয়ে নিচের শাখাটি হলো রাস্তায় কোনো কষ্টদায়ক বস্তু থাকলে তা সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাও ইমানের একটি শাখা’। (নাসায়ি, হাদিস : ৫০০৫)। রাস্তা দখল করে দোকানপাট, বাড়িঘর করলে, রাস্তাকে আবর্জনার স্ত‚প বানালে কিংবা যত্রতত্র মালামাল রাখলে, গাড়ি পার্কিং করলে, বেপরোয়া গাড়ি চালালে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বা অপরিপক্ব ড্রাইভার রাস্তায় নামালে, আইন না মেনে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপারের চেষ্টা করলে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে। আল্লাহতায়ালাই তাওফিক দাতা।#