শরিয়তপুর জেলা প্রতিনিধিঃ- শরীয়তপুরের জাজিরায় নদীতে গোসল করতে গিয়ে শিক্ষক দম্পতির একমাত্র ছেলে পানিতে ডুবে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ ছেলেটির নাম মুরছালিন (১৩)। সে জাজিরা শামসুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
সরেজমিনে জানা যায়, নিখোঁজ মুরছালিন জাজিরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের আইসিটি শিক্ষক মাষ্টার মজিবুর রহমান ও জাজুরা শামসুল উলুম কামিল মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষক হাফসা আক্তারের একমাত্র ছেলে। তারা জাজিরার জয়ননগর ইউপির খোরাতলার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও জাজিরা পৌরসভার আক্কেল মাহমুদ মুন্সি কান্দির শাহী মসজিদ এলাকায় গিয়াসউদ্দিন মাদবরের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। শুক্রবার (২- সেপ্টেম্বর) বেলা এগারোটার সময় তার সহপাঠী শিক্ষার্থী আফনান (১৩) সহ কয়েকজন বন্ধুর সাথে জাজিরার শফিক কাজির মোড় থেকে কাজীরহাট মুখি কীর্তিনাশা নদির লঞ্চঘাট এলাকায় গোসল করতে যায়।
এসময় নদীর পাড়ে থাকা একটি বাল্কহেড থেকে তারা নদীতে লাফাচ্ছিলো এবং গোসল করছিলো। এছাড়া তারা কয়েকবার নদীর তীব্র স্রোতকে উপেক্ষা করে নদী পারও হয়েছে। এভাবে একাধিকবার নদী পার হওয়ার পর হঠাৎ মুরছালিন ডুবে যায়। মুরছালীনের সহপাঠী আফনান জানায়, আমরা বাল্কহেড থেকে লাফিয়ে নদী পার হয়ে যাই। কিন্তু মুরছালিন আমাদের সাথে বাল্কহেড থেকে লাফ দিয়ে ডুব দিলে আর ওঠেনি। আমরা নদী পার হয়ে বিষয়টি খেয়াল করে ভয় পেয়ে যাই। এরপর কিছুক্ষণ খোজাখুজি করে ওর পরিবারকে বিষয়টি জানাই।
নিখোঁজ মুরছালিনের বাবা মাষ্টার মজিবুর রহমান আর্তনাদ করে বলেন, আমার ছেলে গোসল করার কথা বলে আসছিলো। কিভাবে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারলামনা। আমার ছেলেটা ডুবে কোথায় চলে গেলো আল্লাহই ভালো জানে। এদিকে ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন জড় হয়ে যায় নদীর আশপাশে। স্থানীয়রা নদীতে অনেক খোজাখুজি করলেও নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় ভালোভাবে খুজে দেখা সম্ভব হয়নি, যার ফলে নিখোঁজ মুরছালিনের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় আক্কাস মুন্সি জানায়, আমরা খবর পেয়ে এখানে এসেছি এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদলকে উদ্ধার কাজে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি। জাজিরা থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরিদুল জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে এখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি এবং ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা প্রদান করছি। অপরদিকে খবর পেয়ে জাজিরা ফায়ার স্টেশন থেকে উদ্ধারকর্মীরা আসলেও তাদের ডুবুরিদল না থাকায় অনুসন্ধানে নামতে পারেনি তারা। যার ফলে তারা উদ্ধারকাজে আসার জন্য সিয়নিয়রদের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ডুবুরিদলকে জানায়।
এরপরে নারায়নগঞ্জ থেকে অভিজ্ঞ ডুবুরিদল এসে বিকাল চারটার সময় নদীতে নিখোঁজ মুরছালিনকে খুজতে নামে। এই খবর লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদলের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে আগত ডুবুরিদলের টীম লিডার হাবিব জানান, আমরা চারটায় আমাদের অনুসন্ধান শুরু করেছি তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। খুজে না পেলে আজ মাগরিব পর্যন্ত আমাদের অনুসন্ধান চলমান থাকবে। প্রয়োজন অনুযায়ী আগামিকাল যথাযথ সময়ে পূণরায় অনুসন্ধান শুরু করা হবে।
জাজিরা থানার স্টেশন মাষ্টার এনামুল হক সুমন জানান, আমরা খবর পেয়ে সাথে সাথে সেখানে গিয়েছি।নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় এবং আমাদের ডুবুরিদল না থাকায় আমরা অনুসন্ধান চালাতে পারিনি। অভিজ্ঞ ডুবুরিদলকে খবর দেয়া হয়েছে, তারা এসে নদীতে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। নিখোঁজ ছেলেটিকে উদ্ধার করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কামরুল হাসান সোহেল জানান, আমরা খবর পাওয়া মাত্রই যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। নারায়ণগঞ্জ থেকে ডুবুরিদল আনা হয়েছে।#