• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
আমরা এক পরিবার, কেউ কারো শত্রু হবো না: প্রধান উপদেষ্টা সীমান্তের বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্যের ভাতিজা ইয়াবাসহ আটক আওয়ামীপন্থী পুলিশ কর্মকর্তাদের নামের তালিকায় ময়মনসিংহের ওসি সফিকুল ইসলাম ভাড়া বাড়িতে কলেজ ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ, মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা যুবদল নেতা হত্যা মামলায় পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী কারাগারে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর: সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে হচ্ছে কমিটি, আন্দোলন স্থগিত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো অর্ধশত ফিলিস্তিনি নিহত সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ৮ দিনের রিমান্ডে টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপভ্যান সংঘর্ষে চারজন নিহত

আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই

সংবাদদাতা / ২০৫ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২

সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা: জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালে ৯ আগস্টকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস বা আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী দিবস গণ্য করায় ২০০৪ সাল থেকে নেত্রকোনা সহ সারা বাংলাদেশেও দিবসটি উদ্যাপনে কিছু তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আদিবাসী শব্দের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা এবং তাদের অধিকার নিয়ে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তর্ক-বিতর্ক। আমাদের সংবিধানে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়েছে। তবু অতি উৎসাহীরা বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে কেন্দ্র করে যে অভিমত সমূহ ব্যক্ত করে থাকেন তা অযৌক্তিক।

বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ- গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়’ লিপিবদ্ধ হওয়ায় ২০০১ সালে গঠিত ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের’ দাবি হচ্ছে এখানে ‘আদিবাসী জাতি সমূহ’ সংযুক্ত করা হোক। শেখ হাসিনা সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট।

অন্যদিকে ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র ২০০৭’ অনুসারে তাদের ৪৬ টি অধিকারের কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়নি বা সংজ্ঞায়িত হয়নি সুস্পষ্ট ভাবে। তাছাড়া ঘোষণাপত্রের অন্যসব সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বসম্মত সমর্থন নেই।

এ কারণে বাংলাদেশ আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্রের ওপর ভোট গ্রহণের সময় তারা ভোটদানে বিরত ছিল। তবে যে কোন অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠীর অধিকারের প্রতি সমর্থন রয়েছে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের। সংবিধান অনুসারে সরকার মানবাধিকার চুক্তির প্রতি অনুগত এবং উপজাতিদের অধিকার সমর্থন করে এসেছে। উল্লেখ্য, ‘আদিবাসী’ শব্দটি যদি সংবিধানে সংযোজিত হয় তাহলে ২০০৭ সালের ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র’ মেনে নিতে হবে, যা হবে বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী।

কারণ, ঘোষণাপত্রের অনুচ্ছেদ ৪- এ আছে ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার চর্চার বেলায়, তাদের অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন এবং স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে ও তাদের স্বশাসনের কার্যাবলীর জন্য অর্থায়নের পন্থা এবং উৎসের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অধিকার রয়েছে। অর্থাৎ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলে এবং পার্বত্য অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশ সরকার খাগড়াছড়ির গ্যাসসহ অন্যান্য সম্পদ উত্তোলন আহরণ করে অন্য জেলায় আনতে পারত না।

অনুরূপ হতো কাপ্তাই জলবিদ্যুত কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও। কারণ, সেখানকার স্বশাসিত আদিবাসী শাসকগোষ্ঠী নিজেদের অর্থায়নের উৎস হিসেবে সেই বিদ্যুত খনিজ, বনজ ও অন্যান্য সম্পদ নিজেদের বলে চিন্তা করত। আবার অনুচ্ছেদ ৩৬ এ আছে, ‘আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর, বিশেষত যারা আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা বিভক্ত হয়েছে।

তাদের অন্য প্রান্তের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক কার্যক্রমসহ যোগাযোগ সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখার ও উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।’ রাষ্ট্র এই অধিকার কার্যকরে সহযোগিতা প্রদান ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। ঘোষণাপত্রের এই নির্দেশ কোন সরকারই মেনে নিতে পারে না। কারণ, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তাছাড়াও বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গী তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। যা ক্রমেই সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত করবে। জাতিসংঘের এই ঘোষণাপত্রের শেষ অনুচ্ছেদ-৪৬-এ সবার মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলা হয়েছে। এই কাজটি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে। এর আগে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’ অনুসারে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সমতা, বৈষম্যহীনতা, সুশাসন এবং সরল বিশ্বাসের মূলনীতি অনুসরণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের একাধিক অনুচ্ছেদ অনুসারে আদিবাসীদের কোন অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষা, চাকরি ও অন্যান্য বিষয়ে বাঙালীদের মতো তাদেরও সমান সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবে রাষ্ট্র। মনে রাখা দরকার, এই ঘোষণাপত্রের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এসব দেশে বিপুল সংখ্যক নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর বসতি রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভোটদানে বিরত ছিল রাশিয়া, ভুটান, নাইজিরিয়া, কেনিয়া, ইউক্রেন, কলম্বিয়া সহ অন্যান্য দেশ।

অনুপস্থিত ছিল আরও অনেক উন্নত দেশ। উল্লেখ্য, ভারতে বসবাসকারী একই সম্প্রদায় ভুক্ত উপজাতিদের সেখানকার সংবিধানে ‘আদিবাসী’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়নি। বলা হয়েছে- ঝপযবফঁষবফ ঈধংঃব ধহফ ঝপযবফঁষবফ ঞৎরনবং। সংবিধানে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামকে উপজাতি অধ্যুষিত রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯ (১) (২), ৩০ (১) (১এ), ৪৬, ২৪৪ (১) ২৪৪এ (১), ৩৩২ (১), ৩৩৫, পঞ্চম অধ্যায়, পার্ট বি, অনুচ্ছেদ-৪ এবং ষষ্ঠ অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ১ – এর অংশগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী তথা উপজাতিগুলোর উন্নয়নে অঙ্গীকার বদ্ধ হয়ে ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ওখঙ) প্রণীত ‘ইন্ডিজেনাস এ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন, ১৯৫৭’ (কনভেনশন নম্বর ১০৭) – এ অনুস্বাক্ষর করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী এবং ট্রাইবাল জাতিগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়সহ তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার জন্য জাতিসংঘের এই সংস্থাটি আবার সংশোধিত ‘ইন্ডিজেনাস এ্যান্ড ট্রাইবাল পপুলেশনস কনভেনশন ১৯৮৯’ (কনভেনশন নম্বর ১৬৯) গ্রহণ করে।

এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনী দলিল জাতীয় পর্যায়ে উপজাতিদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয়। এখানে ট্রাইবাল বা সেমি- ট্রাইবাল বলতে ওই গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে, যারা তাদের ট্রাইবাল বৈশিষ্ট্য হারানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং এখনও জাতীয় জনসমষ্টির সঙ্গে একীভূত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত পথে অগ্রসর হয়ে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ী।#

অপহরণ মামলার প্রধান আসামি চপল গ্রেপ্তার

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...