• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস আমরা এক পরিবার, কেউ কারো শত্রু হবো না: প্রধান উপদেষ্টা সীমান্তের বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্যের ভাতিজা ইয়াবাসহ আটক আওয়ামীপন্থী পুলিশ কর্মকর্তাদের নামের তালিকায় ময়মনসিংহের ওসি সফিকুল ইসলাম ভাড়া বাড়িতে কলেজ ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ, মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা যুবদল নেতা হত্যা মামলায় পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী কারাগারে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর: সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে হচ্ছে কমিটি, আন্দোলন স্থগিত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো অর্ধশত ফিলিস্তিনি নিহত সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ৮ দিনের রিমান্ডে

ইতিহাসের নৃশংসতম ১৫ই আগস্ট

সংবাদদাতা / ১৪২ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

শফিকুল ইসলাম শফিকঃ শুক্রবার ১৫ আগস্ট ১৯’৭৫ সাল। ফজরের আযান শুরু হয়েছে মাত্র। রাতের অন্ধকারের শেষ রেশ টুকু ফিকে হয়ে আসতে শুরু করেছে। সেই কালো রাতে ঘাতকের দল এগিয়ে এলো ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড ঘটাবার জন্যে। আজ সেই অভিশপ্ত শোকাবহ রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি,হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও ‘জাতীয় শোক দিবস’।

বাঙালি জাতি আজ শোকে মুহ্যমান,বেদনায় নীরব, নিস্তব্ধ। ১৯৭৫ সালের এমনি এক অভিশপ্ত দিনের সুবেহ সাদেকে একদল তস্কর খুনী, দুস্কৃতকারী, পাষন্ড এয়াজীদের বংশধর নিমকহারাম মীর জাফরের প্রেতাত্মা রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের ঐতিহাসিক ‘বঙ্গবন্ধু ভবনে’ হানা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান কাংখিত পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব,তার প্রিয়তমা স্ত্রী বাঙালির স্বাধীকার সংগ্রামের অন্যতম প্রেরণাদাত্রী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তাদের বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামাল, মেঝো ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামাল, ছোট ছেলে কিশোর শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে।

একই রাতে তস্কর খুনী দল হানা দেয় বঙ্গবন্ধু সরকারের তৎকালীন মন্ত্রী অবিসংবাদিত কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টো রোডের সরকারী বাসভবনে। সেখানে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার কিশোর ছেলে আরিফ, কিশোর মেয়ে বেবী, নাতী ছোট শিশু সুকান্ত আব্দুল্লাহ, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত ও আত্মীয় আবু নাঈম রিন্টুকে।

মারাত্মকভাবে আহত করে বঙ্গবন্ধুর আদরের বোন মন্ত্রী সেরনিয়াবাতের স্ত্রীকে। তস্কর চক্র আরো হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে এবং জাতীয় যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি এবং তার অন্তঃসত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিকে। বঙ্গবন্ধুর আহবানে তাকে রক্ষা করতে এলে ৩২ নম্বর রোডের মুখে ঘাতক চক্র আরো হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর এককালীন সামরিক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল জামিলকে।

পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম ও বর্বরোচিত এই হত্যাকান্ডে ঘাতকচক্র একই রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ তার পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিপরীত দিকে প্রবাহিত করার কাজ শুরু হয়। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সুবেহ সাদেকে বাঙালির নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের নির্মম হত্যাকান্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেন (রাঃ) এবং তাঁর পরিবারের মর্মান্তিক হত্যাকান্ড।

স্মরণ করিয়ে দেয় ২৩ জুন, ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে পাতানো যুদ্ধের পরাজয়ের পর বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর চক্রের হাতে মুর্শিদাবাদে নির্মমভাবে শহীদ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা এবং তাঁর পরিবারের বিয়োগান্তক ঘটনা। আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, Some people can be fooled for some time, But all people can not be fooled for all time (কিছু সময়ের জন্য কিছু লোককে হয়তো বোকা বানানো যায়, কিন্তু সব লোককে সব সময়ের জন্যে বোকা বানানো যায় না)।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার সকল দুরভিসন্ধির সাথে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী ও পাকিস্তানী চক্র এবং তাদের এ দেশীয় দালালদের গোপন আতাতের কথা আজ দেশের মানুষের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে। আজ মানুষ বুঝতে পেরেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে বাংলাদেশের নাম চিরতরে মুছে ফেলবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। কিন্তু তাদের সেই বিশ্বাসঘাতকতা, উচ্চবিলাসী ধ্যানধারণা বাস্তব রূপ লাভ করেনি। সূর্য অস্তমিত হলেই তারপর জোনাকিরা জ্বলে। কিন্তু জোনাকিরা কখনোই সূর্যের বিকল্প হতে পারে না। যতোই দিন যাচ্ছে এ সত্য স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বদলা নিতে হলে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের নতুন করে শপথ নিতে হবে। নূতন প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এবং বঙ্গবন্ধুর কাক্সিখত অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে পারলেই জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।

বাংলার মানুষ জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর হত্যার রায়ের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন চায়। আর তা-ই হবে তার প্রতি কৃতজ্ঞ জাতির সর্বোৎকৃষ্ট সম্মান প্রদর্শন। ১৫ আগস্ট ’৭৫ এর কালোরাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ নির্মমভাবে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও জান্নাত কামনা করছি। আমীন। জয় বাংলা – জয় বঙ্গবন্ধু।#


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...