অপরাধ প্রতিবেদক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ এবং বিদেশে ব্যাপক আলোচিত সমালোচিত। অসম পরিনিয়ের জুটি রোবাইয়াত ফাতিমা তনি (২৯) ও সাদাদ রহমান(৬৭)। যিনি নিজের বয়সের চেয়ে প্রায় আটত্রিশ বছরের বড় এক বৃদ্ধাকে বিয়ে করে সাম্প্রতিক সময়ে নেটিজেনদের কাছে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। প্রায়সময়ই সোশ্যাল মাধ্যমে স্বামীকে নিয়ে হাজির হয়ে চরম অশ্লীল মন্তব্য করেন। যাতে বিব্রত হন নেটিজন ও অভিভাবকগণ।
সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের মধ্যবিত্ত পরিবারের পুত্রবধূ তনি বরাবারই বেপরোয়া ও উগ্র প্রকৃতির। এক পর্যায়ে স্বামী সংসার ছেড়ে পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়ে উগ্রতায়। অনলাইন ব্যবসা ও সোশ্যাল মাধ্যমে পরিচিত হওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। সেখানেই দায়িত্বশীল একটি পদে কর্মরত ছিলেন সাদাদ রহমান। সাদাদ রহমান সমাজের একজন সম্পদশালী প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে পরিচিত। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে মহাখালী ডিওএইচএসএ সুখী দম্পতি হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন।
সদাদ রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদা ইয়াসমিন জানান, ওই মেয়ে (তনি) উন্নত জীবন ও সম্পদের লোভে আমার স্বামীকে তার রূপের জালে ফাঁসাতে ফাঁসিয়েছে। এরপর শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। এক পর্যায়ে তনি সদাদকে জানায় সে গর্ভবতী। তাকে ২১ বছরের সংসার ছেড়ে তার কাছে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত রোবাইয়াত ফাতিমা তনি নিজের সাবেক স্বামী ও সংসারের তথ্য গোপন করে বিয়ে করেন ধন্যাট্য ব্যবসায়ী সাদাদ রহমানকে। তারা উভয় ভালোবেসে গত ২৭-০৯-২০১৯ তারিখে বিয়ে করেন। এবার ভেতরের গল্পে যেতে চাই: সাদাদ রহমানের এটি তৃতীয় বিয়ে তার স্ত্রী রোবাইয়াত ফাতিমা তনির ও এটি দ্বিতীয় বিয়ে উভয়েরি আগের সংসারের সন্তান-সন্তানাদি রয়েছে। তবে সাদাদ রহমানের সাথে বিয়ের কাবিন নামায় তিনি নিজেকে কুমারি দাবী করেছেন। যা আইনের ভাষায় তথ্য গোপন ও প্রতারণার শামিল।
অভিযোগকারী সাদাদ রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদা ইয়াসমিন জানান, আমাদের একুশ বছরের সংসার জীবনে সুখ শান্তি কোন কিছুই কমতি ছিলনা। একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে ভালোই চলছিল আমাদের সংসার। এত বছর পর এসে কেন জানি আমার স্বামীর আচরণে কিছু পরিবর্তন দেখতে পাই। বাসায় তেমন কথা বার্তা বলেনা আগের মত হাঁক-ডাক আর নেই। হঠাৎ তিনি ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বাসা ছেড়ে কোথায় যেন চলে যান। পরিবারের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে করে দেন। আবার এক সপ্তাহ পর বাসায় আসেন জানতে চাইলে বলেন আমি মেডিকেল ভর্তি ছিলাম।
লোকমুখে শুনেছি, গত ১৩ জুন ২০১৯ তারিখে আমাকে তালাক দিয়েছে কিন্তু এই মর্মে আমি কোন নোটিশ পাইনি। তবে ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে তালাকের নোটিশ ও ২১ মার্চ ২০১৯ তারিখে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে তালাক প্রত্যাহারের আবেদন এবং কাফরুল থানার জিডি নং-৯৬৩ তাং- ২৩-০৩-১৯ প্রত্যাহারের কপি সহ সমস্ত কাগজপত্র আমার তুলে দেন আমার হাতে স্বামী সাদাদ রহমান। নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত বোধ করেন।আমার কাছে ক্ষমা চান। আবারও নিয়মিত বাসায় অবস্থান করেন।
তার কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন রোবাইয়াত ফাতিমা তনি নামের একটি মেয়ে আমাদের মহাখালী ডিওএইসএস এর বর্তমান বাসার নিচে এসে আমার স্বামীকে তার স্বামী বলে দাবী করে চিল্লা-পাল্লা শুরু করে দেন। প্রমান চাইলে উল্ট-পাল্টা কথাবার্তা বলেন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অস্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। তখন আমার স্বামী সাদাদ রহমান বাসায়।
তিনি আমাকে বলেন, তোমরা এ বাসা ছেড়ে কোথাও যাবেনা আমি প্রতারণা স্বীকার হয়েছি এই মেয়ের পেটে নাকি আমার বাচ্চা আমাকে বিয়ে করার জন্য চাঁপ দিচ্ছে। আমার সাথে নাকি তার অশ্লীল ভিডিও আছে তা ভাইরাল করে দিবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। এই মেয়ে আমার সব শেষ করে দিয়েছে এখন আমাদের এই বাসাটি লিখে নেয়ার জন্য আমার উপর বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করছে।
তখন মেয়েটি ফোনদিয়ে কয়েকজন লোক নিয়ে আসে বাসার নিচে তারা নিচে থেকে আমার স্বামীকে ফোনদিয়ে হুমকি-থামকি দেয় এবং তাদের সাথে যেতে বলে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা আমার স্বামীকে বাসা থেকে বের করে তাদের সাথে নিয়ে যায় এই মেয়ের ভাড়া বাসা বনানীতে। তনি ও তার ডেকে আনা লোকজন আমাদের হুমকি দিয়ে বলে যায় আমি যেন আমার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বাসাটি দ্রুত ছেড়ে অন্যত্র চলে যাই তানাহলে আমাদেরকে এর কঠিন মূল্য দিতে হবে। এরপর থেকে রোবাইয়াত ফাতিমা তনির ধারাবাহিকভাবে আমাকে মুঠোফোনে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ হুমকি-ধামকি বাসাটি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি দিতে থাকে।
উল্লেখ্য, এমন বেশ কিছু এসএমএসের কপি ও ভয়েজ রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। সেখানে দেখা যায়, তাদের বিয়ে ২৭-০৯-২০১৯ তারিখে হলেও ১২-০৬-২০১৯ তারিখে এসএমএসের মধ্যেমে তার স্বামী বলে দাবি তাবি করেন বিশ্রী ভাষায় এসএমএস দেন। এবং সাদাদ রহমান যে তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদা ইয়াসমিনকে কে তালাক দিয়েছেন সেই তালাকের নোটিশে দুই নং স্বাক্ষী হিসেবে নাম রয়েছে রোবাইয়াত ফাতিমা তনির। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ব্ল্যাকমেল করে স্বামীকে অবরুদ্ধ করে রাখার।
দ্বিতীয় স্ত্রী আরও জানান, সাদাদ রহমানের সাথে এই মেয়ের বিয়ে হয় ২৭-০৯-২০১৯ তারিখে যেটি কাবিন নামায় উল্লেখ আছে। আমার স্বামী একজন বড় ব্যবসয়ী পাশাপশি তিনি বড় চাকরিও করতেন তার কাছে অনেক টাকা আছে জেনেই ময়েটি তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলন। তার সমস্ত অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে এখন আমাদের শেষ সম্বল ডিওএসএইচের একমাত্র মাথা গোজার স্থান বাসাটিও দখলে নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে বারবার নোটিশ পাঠাচ্ছে।
সাদাদ রহমানকে অসুস্থতার অজুহাত তাকে শারিরীক ওমানসিক টর্চার করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমানে তাকে জিম্মি করে রেখেছে তার কোন বন্ধু-বান্ধব আত্নীয়-স্বজন কারো সাথেই যোগাযোগ করতে দিচ্ছেনা এই মেয়ে। আমি এর প্রতিকার চাই সুষ্ঠু বিচার চাই। খোজ নিয়ে জানা যায়, দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদা ইয়াসমিন বিষয়টি নিয়ে কাফরুল থানায় কয়েকটি জিডি করেছেন। জিডি নং-১৪৪১ তারিখ-২১ নভেম্বর ২০১৯/ জিডি নং-৬১৬ তারিখ-০৯ নভেম্বর ২০১৯/ জিডি নং-১৩৭৭ তারিখ-২১-নভেম্বর ২০১৯।
এছাড়াও মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র( আসক) বরাবর একটি অভিযোগ সুরাহা পাওয়ার জন্য একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আসক তনি সাদাদ কে দুইবার নোটিশ প্রদান করলে তারা সারা দেয়নি। সর্বশেষ সাদাদ নাহিদা ইয়াসমিনের বড় মেয়ে আদালতে ফৌজদারি মামলা করেন। মামলা নং-০১-২০২১ দুই বছর মামলা চলার পর মহামান্য আদালত ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করার জন্য তাদের পক্ষে রায় দেন।
ভুক্তভোগী স্ত্রী নাহিদা ইয়াসমিন অভিযোগ করেন, তার অনুমতি ছাড়াই পরবর্তী বিয়ে করেন সাদাদ। কোন প্রকার নোটিশ ও আলোচনা ছাড়াই আইনবোর্ভূত ভাবে তাকে তালাক প্রদান করেন। আমার স্বামী যেহেতু আমাকে বলেছিল ওই মেয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করছে, সে কথাই আমি স্পষ্ট তনি আমার স্বামীকে চাপ দিয়ে তালাক দিতে বাধ্য করেছে। নিয়মবহির্ভূত তালাক দেয়ার পর আমার স্বামী নিজেই ওই তালাক বাতিল করার জন্য থানায় জিডি করেছেন এটাই তার প্রমান। তাছাড়া যার বিরুদ্ধে স্বামীর ব্ল্যাকমেলিং করে ছিনতাইয়ের অভিযোগ তালাকের সাক্ষী সেই তনি নিজেই।
বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের মাধ্যমে সন্তান ধারণ পরবর্তীতে সেই বিষয়টি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আমার স্বামীকে এক প্রকার ছিনতাই করে নিয়েছে। আমার স্বামী যাতে আমাদের কোন ভরণপোষণ না দেয় সেজন্য চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে তার টাকা পয়সা ব্যয় করে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাকে অন্যায় ভাবে ডিভোর্স দেয়া হয়েছে আমারও আমার সন্তানের অধিকার খর্ব করা হয়েছে তার সকল সম্পত্তি ওই ছলনাময়ী মেয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে।
সমস্ত তথ্য পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানে দ্বিতীয় স্ত্রীর অভিযোগের অনেকটাই সত্যতা মেলে। বিয়ের এক মাসের মধ্যে বাচ্চা ডেলিভার, কাবিননামায় দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে তনির স্বাক্ষর প্রদান। হাসপাতালে বাচ্চা প্রসবকালীন অ্যাডমিশনের তথ্যে স্বামীর নাম না থাকা। দ্বিতীয় স্ত্রীকে পাঠানো অসংখ্য অশ্লীল এসএমএস ও ফোন রেকর্ডিংয়ে হুমকি দেয়া।
এ বিষয়ে রোবাইয়াত ফাতিমা তনির মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার স্বামী সাদাদ রহমানকে মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে কল কেটে দেন।।