সাইদুর রহমান রিমনঃ নয়া সরকারে দায়িত্ব পাওয়া তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি চ্যালেঞ্জিং যাত্রা শুরুর বিনয়ী আহবান জানাচ্ছি। মাত্র তিনটি বিষয়ে আপোষহীন ভূমিকায় নেমে দেখুন- হাজারো স্যালুট আপনার জন্যই অপেক্ষমান। ১) পত্রিকাগুলোর ব্যাপারে ডিএফপি কর্তৃক নিয়মিত যে ভৌতিক প্রচার সংখ্যা প্রকাশ করা হয়- সেই অনৈতিক কাজটি প্রথমেই কঠোর হস্তে বন্ধের ব্যবস্থা নিন। এই প্রচার সংখ্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই দেশের মিডিয়া সেক্টরে সিংহভাগ অনিয়ম, দুর্নীতি, অপকর্মের ঘটনা ঘটে থাকে। ৫০০ থেকে- ১০০০ কপি পত্রিকা ছাপানো অন্তত ১৫টি পত্রিকার সার্কুলেশন দেখানো হয় দেড় লক্ষাধিক কপি।এ পত্রিকা গুলো ১৫/২০ হাজার টাকার বেশি কাউকে বেতন দেয় না- অথচ ডিএফপির প্রতিবেদনে সাক্ষ্য দেয়া হয় তারা নাকি ৮ম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করছে! এ দুটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক তথ্য সম্পৃক্ত প্রতিবেদনের কারণে (যা মিডিয়া পাড়ায় ডিএফপি‘র ভৌতিক প্রতিবেদন হিসেবে পরিচিত) সংশ্লিষ্ট পত্রিকার ব্যবসায়ি মালিকেরা সর্বোচ্চ স্বার্থসিদ্ধি করে থাকে। তারা সরকার থেকে ৯০০ টাকা কলাম ইঞ্চি দরে বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নেয় এবং সারাদেশ থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিজ্ঞাপন কুক্ষিগত করতে সক্ষম হয়। একইসঙ্গে লাখ লাখ কপি পত্রিকা ছাপানোর হিসেব কষে বিনা শুল্কে শত শত টন কাগজ আমদানির ছাড়পত্র হস্তান্তরের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করে থাকে। একই ভাবে আরো অর্ধ শতাধিক পত্রিকা রয়েছে যেগুলো প্রতি মাসে বড়জোর ৫/৬টি সংখ্যা প্রিন্ট করে থাকে (সেটিও বিজ্ঞাপন পাওয়ার উপর নির্ভর করে)- তাদেরও ৮ম ওয়েজবোর্ডে বেতন ভাতা প্রদানকারী এবং এক লাখ ৪১ হাজার কপি পর্যন্ত প্রচার সংখ্যা থাকার ভূয়া সার্টি-ফিকেট প্রদান করেছে ডিএফপি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট পত্রিকা গুলোও ৫৮৮ টাকা থেকে ৮৯৮ টাকা পর্যন্ত কলাম ইঞ্চি দরে সরকারি বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নিয়ে থাকে। অন্যান্য পত্রিকার নাম উল্লেখ নাই-বা করলাম।
ডিএফপি‘র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শুধু শুধু মনগড়া এ ভৌতিক প্রতিবেদন দেন- তা কিন্তু নয়। যে কোনো পত্রিকার ক্ষেত্রে প্রতি ১০,০০০ কপি বাড়তি প্রচার সংখ্যা দেখানোর বিপরীতে তারাও পত্রিকা মালিকদের থেকে ২৫ হাজার টাকা হারে ঘুষ হাতিয়ে নিয়ে থাকেন। আর নিয়মিত পত্রিকা না ছাপিয়েও ডিএফপি‘র মিডিয়া তালিকাভুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয় আলাদা আলাদা রেটে ঘুষ দেয়ার মাধ্যমে। ধাপে ধাপে মাত্রাতিরিক্ত ঘুষ লেনদেনের কারণে ব্যাপক সংখ্যক সার্কুলেশন দেখানো পত্রিকাগুলোর ব্যাপারেও ডিএফপি তার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রাখতে ব্যর্থ হয়। যেমন প্রতি বছর সরকারি ভাবে প্রদানকৃত বিশটিরও বেশি ক্রোড়পত্র (যা এক-দুই পাতা জুড়ে ছাপানো হয়) নামসর্বস্ব কিছু পত্রিকাকে প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে মোট বিজ্ঞাপন মূল্যের অর্ধেক টাকা অগ্রিম হারে ডিএফপির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার হাতে পৌঁছে দেয়ার রেওয়াজ চালু রয়েছে।= এসব ব্যাপারে মান্যবর তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী যদি অনির্ধারিত ভাবে প্রেসে প্রেসে পত্রিকা ছাপানো অবস্থায় ‘প্রিন্ট কপি‘র সংখ্যা গণনার অভিযান চালাতে পারেন তাহলেই সকল জালিয়াতি ধরা পড়তে বাধ্য।
অনুমোদনহীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল, আইপি টিভি বন্ধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান এবং তা নিশ্চিত করা।
সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সংক্রান্ত সকল সংগঠনের যাবতীয় বিষয় যাচাই বাছাই পূর্বক সেসবের অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা কেবলমাত্র তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ের আওতায় আনার বিষয়টি। কারণ, নিয়ন্ত্রণহীন নিবন্ধনের সুযোগে ভুয়া আর প্রতারকরা দেশজুড়ে ‘সাংবাদিক সংগঠনের’ দোকান খুলে বসেছে। সীমাহীন বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এ বেহাল অবস্থার অবসান ঘটাতে দেশের সাংবাদিক সংগঠন গুলো কে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন দেওয়া সহ তদারকির আওতায় আনা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকদের কল্যাণকামী কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের নিবন্ধনের ব্যবস্থা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে না থাকায় সে সুযোগের সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার করছে ভণ্ড, প্রতারক ও ভুয়া সাংবাদিক চক্র। তারা জোট বেধে জয়েন্ট স্টক, সমাজে সেবা অধিদপ্তর, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম দপ্তর কিংবা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে দেদারসে সাংবাদিক সংগঠন খুলে বসেছে, চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি, প্রতারণার বহুমুখী বাণিজ্য।
সাংবাদিক ব্যানারের এসব সংগঠনের কোনোটাই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত নয়। অন্য মন্ত্রণালয়, ভিন্ন দপ্তরের নিবন্ধন নিয়েই সংগঠনগুলো বেজায় দাপটে মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছে। সংগঠনের সদস্যরা আদৌ সাংবাদিক কি না- নিবন্ধন দেয়ার সময় তা যাচাই পর্যন্ত করা হচ্ছে না। নিদেনপক্ষে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একটা ছাড়পত্র নেয়া উচিত থাকলেও তার প্রয়োজনবোধ করা হয়নি। ফলে ইঞ্জিনিয়ার কালাম মিয়ার নেতৃত্বে অনুমোদন মিলেছে….. সাংবাদিক ক্লাবের, ডাক্তার হাবিবউল্লাহও বানিয়ে নিয়েছেন …. জার্ণালিস্ট এসোসিয়েশন। এসব সংগঠনে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি থেকে শুরু করে গাড়ির হেলপার পর্যন্ত ঠাঁই পেয়েছে- অভাব শুধু পেশাদার সাংবাদিকের। তবুও সেসব সংগঠন সরকারি দপ্তরগুলো থেকে অনুমোদন পেয়েছে, বিস্তার ঘটছে দেশজুড়ে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্বাস্থ্যসেবার যাবতীয় প্রতিষ্ঠান/সংগঠনকে নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় দেওয়া হচ্ছে এনজিওসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ক্লাবসমুহের নিবন্ধন। তেমনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় নারী ও শিশু সংগঠনসমূহ, কৃষি অধিদপ্তরের আওতায় কৃষি সংগঠন, শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে শ্রমিক সংগঠন, সমবায় অধিদপ্তরের মাধ্যমে সমবায়ী সংগঠনসমূহের নিবন্ধনভুক্ত করা হয়। তাহলে মিডিয়াভুক্ত কর্মি ও সাংবাদিক সংগঠনসমূহকে কেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন আওতায় আনা হচ্ছে না? এখন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় কোম্পানি আইনে আবার আইন মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্ট ঘোষণা দিয়েও সাংবাদিক সংগঠনের অনুমোদন দেওয়ার নজির দেখা যাচ্ছে। =নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মহোদয় শুরুতে এ তিনটি মাত্র অরজাকতা থেকে দেশের গণমাধ্যমকে রেহাই দিতে পারলে তা তিন যুগের জঞ্জাল পরিচ্ছন্ন করার মতো মহান কর্মযজ্ঞ বলেই চিহ্নিত হবে। তিনি মিডিয়া বান্ধব হিসেবে প্রকৃত হাজারো সাংবাদিকের কাছে যেমন সম্মানীত হবেন, তেমনি পাবেন স্যালুট, স্যালুট আর স্যালুট!!! তবে বরাবরের মতো গুটি কয়েক পেশাদার সাংবাদিক নেতা, পত্রিকার ব্যবসায়ি মালিক ও ভূয়া সাংবাদিক সংগঠনের কথিত কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর সম্মানীত থাকার সুযোগও রয়েছে। সবকিছুর আগে আপনার সর্বোচ্চ সফলতাই কামনা করছি আন্তরিকভাবে।