নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘সানজানা ফেব্রিক্স কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা পুলিশ সদস্যদের পোশাক নিম্নমানের। ওই পোশাক দ্রুত বিবর্ণ হয়, ছিঁড়ে যায়। সারাদিন পরে থাকা যায় না, গরম লাগে। বাধ্য হয়ে নিজের টাকায় ভালোমানের কাপড় কিনে পোশাক তৈরি করি। এক সেট পোশাক তৈরি করতে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়।
অভিযোগ আছে, পুুলিশের ইউনিফর্ম সরবরাহে সানজানা ফেব্রিক্স নামে এক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিকার চেয়ে দেশের বহুল প্রচারিত জাতীয় একটি সংবাদপত্রের প্রতিনিধির পক্ষ থেকে আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর এই লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগ আইজি জিপি’স কমপ্লেইন মনিটিরিংসেলের এস-৪৩৮ নথিভূক্তির তাং ১৮ জুন ২০২৩। আইজিপি বরাবর লিখিত ঐ অভিযোগে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশ পুলিশ প্রতিবছর টেন্ডারের মাধ্যমে তাদের ইউনিফর্ম সংগ্রহ করে। নামে মাত্র টেন্ডার কার্যক্রম পরিচালনা করলেও একটি বিশেষ কোম্পানীকে বিভিন্ন কায়দায় কাপড়ের কার্যাদেশ দিয়ে আসছে।
কোম্পানীটি শুধুমাত্র বাংলাদেশ পুলিশ কাপড় সরবারাহের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পর পর দুই অর্থ বছর একই মালিকের পরিচালিত দুই মিলে সানজানা ফেব্রিক্স ও এইচএস টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন কারসাজি করে কাজ পাইয়ে দিয়ে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নেয় টেন্ডারের সাথে সম্পৃক্ত ২/৩ জন কর্মকর্তা।
টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন এ দুই নং শর্তে বলা আছে টুইজটিং এন্ড ডাব্লিং মাস্ট বি ডান টিএফও মেচিং রিং টুইসটিং সেল নট বি একসেপ্টেড। সানজানা ফেব্রিক্স এর নিজস্ব কোন স্পিনিং ইউনিট নাই এবং টুইস্টিং এন্ড ডাবলিং করার জন্য টিএফও মেসিনও নাই। ৩নং শর্ত সুতার প্রকৃতি প্রিমা/ সুপিমা তুলা দিয়ে সুতা বানানোর শর্ত থাকলেও তা পরিচালনা করা হয়নি।
সানজানা ফেব্রিক্স ভারত থেকে নিন্মমানের সুতা এনে বাংলাদেশে বিভিন্ন মিল থেকে কাপড় বানিয়ে পুলিশকে সরবরাহ করে আসছে । এলসি ও প্রোফরমা ইনভয়েস চেক করলে বিষয়টি পরিষ্কার ধরা পড়বে। সানজানা ফেব্রিক্স নিজেদের নামে কার্যাদেশ নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানীকে দিয়ে সাব- কন্ট্রাক করাচ্ছে সম্প্রতি হামিম টেক্সটাইলকে দিয়ে উইভিং করাচ্ছে যার প্রমানস্বরূপ চুক্তিপত্রের কপিও অভিযোগের সাথে সংযুক্ত করেছেন অভিযোগকারী মোর্শেদ ফারুক।
আইজি বরাবর তিনি তার অভিযোগে আরও বলেছেন, ২২নং শর্তে বলা আছে কাপড় সররাহকারীর অবশ্যই কম্পোজিট ফ্যাসিলিটিজ থাকতে হবে। যেমন স্পিনিং , উইভিং, প্রসেসিং ফ্যসিলিটিজ কিন্তু সানজানা ফেব্রিক্স কর্তৃপক্ষ এর কোন স্পিনিং ইউনিট নাই তারা ভারত থেকে নিন্মমানের সুতা এনে কাপড় সরবরাহ করে আসছে। ৩২ নং শর্তে বলা আছে ডিউরিং প্রোডাক্টশন প্রেসেস, এন এইন্সপ্রেকশন টিম ফ্রম পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স উইল ইন্সপেক্ট দি প্রেডাকশন প্রেসেস এন্ড উইল কালেক্ট রেনডম সেম্পল। কিন্তু পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স এর যে লোক নিয়োজিত থাকে তারা শুধুমাত্র কাপড় ডেলিভারি দেয়ার পূর্বে ফিনিসড ফেব্রিক্স ইনসপেকশন করে। তুলা থেকে সুতা , সুতা থেকে গ্রে কাপড় আর গ্রে কাপড় থেকে প্রসেসিং পর্যন্ত কোন ইনসপেকশন করেনা।
যেখানে কাঁচামালের নিশ্চয়তা নাই সেখানে ভালো কাপড় কিভাবে সরবরাহ করবে বোধগম্য হচ্ছেনা। ৩৭নং শর্তে বলা আঠে দ্যা সাপ্লাইয়ার সেল হেভ টু সাবমিট কনট্রাক্ট এগ্রিমেন্ট (অন থ্রিহানড্রেট টাকা. ইন জুডিশিয়াল স্ট্র্যাম্প) উইথ দ্যা ইয়ার্ন মেনুফেকচার এন্ড উইথ দি টুইসটেড ফেক্টরি ফ্রম হয়ার হি ইজ গোয়ং টু প্রেডিউজ এন্ড পারচেইজ প্রডাক্ট।এভাবে প্রতি পদে পদে শর্ত লংঘন করে নিন্মমানের কাপড় সরবরাহ করার জন্য সানজানা ফেব্রিক্স কর্তৃপক্ষকে কার্যাদেশ দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান দায়িত্ব পালনরত লজিষ্টিক শাখার কর্মকর্তারা। অপরদিকে বাংলাদেশ পুলিশ বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী মূল্য পরিশোধ করলেও ফেব্রিক্স নিচ্ছে নিন্মমানের।
কথিত আছে সানজানা ফেব্রিক্স এর মালিক সোহরাব বাবুর আত্বীয় একজন পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে বিশ্বাস যোগ্য ও নির্ভরযোগ্য হওয়া শর্তেওর তোয়াক্কা না করে একের পর এক কার্যাদেশ দিয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। অথচ নামে মাত্র কিছু কোম্পানীকে দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহন করিয়ে বছরের পর বছর সানজানা মালিক কর্তৃপক্ষকে কাজ দিয়ে যাচ্ছে যদি চুক্তিপত্রের শর্ত ভঙ্গের দায়ে ২০১৫ সালে টানা ৫ বছরের জন্য এশিয়ান টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডকে কালো তালিকাভূক্ত করেছিল। তাহলে কোন অগনিত শর্ত ভঙ্গের দায়ে সানজানাকে কালো তালিকাভূক্ত করা হবে না। একেপেশে দুই আইন চলতে পারে কিনা জানা নেই। উপরোক্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান অভিযোগকারী।
এবিষয়ে সানজানা ফেব্রিক্স কোম্পানির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে কয়েকবার মোবাইল ফোন করলেও রিসিভ করিনি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।