স্টাফ রিপোর্টারঃ
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় প্রায় ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে ৯৭২ জনকে পাশ করিয়েছেন খান মো. রেজাউল করিম পরিচালক (প্রশাসন) এর নেতৃত্বে প্রশাসন ইউনিটের সিন্ডিকেট। প্রতি পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে দুই থেকে ৩ লক্ষ করে টাকা নেওয়া হয়েছে। ৯৭২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষার খাতা টাকার বিনিময়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের মাধ্যমে ওয়েমার বা টিক চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে গত ৫ মার্চ ২০২৩ খ্রি: তারিখে দৈনিক সরেজমিন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক জনাব মোঃ বেলাল হোছাইন ভূঁইয়া ‘পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় অনিয়ম’ বিষয়বস্তু সম্বলিত একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
লিখিত অভিযোগে জনাব বেলাল বলেন, গত ১৮ ফেব্রয়ারী ২০২৩ খ্রি: তারিখে অনুষ্ঠিত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন), প্রশাসন ইউনিট ও সভাপতি, বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির নেতৃত্বে একটি বৃহৎ সিন্ডিকেট সারাদেশ থেকে তথা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ৪৬ জেলার বিভিন্ন পরীক্ষর্থীদের থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বড় রকমের আর্থিক লেনদেন করেছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে যে, সরেজমিনে বেশ কিছু প্রার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন), প্রশাসন ইউনিট এর নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট সারাদেশ থেকে বিভিন্ন প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এক থেকে দুই লক্ষ টাকা করে সংগ্রহ করেছে।
এছাড়াও এমন অনেক প্রার্থী রয়েছে যাদেরকে চুড়ান্ত নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লেনদেন করা হয়েছে। চুড়ান্ত নিয়োগের আশ্বাস দেওয়া প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের ৯৭২ জন প্রার্থীর রোল নম্বর সম্বলিত একটি তালিকা তদন্তের জন্য সংযুক্ত করা হলো। অসৎ উপায়ে দুর্নীতির আশ্রয়ে পরীক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়েছে, এটা এজন্য নিশ্চিত করে বলা যায় যে, পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই উত্তীর্ণদের পাশের নাম্বার পরীক্ষর্থীদের হাতে এসেছে। অভিযোগকারী সেই নাম্বার অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছেন।
কিন্ত সম্পাদক বেলাল হোছাইন ভূইয়ার অভিযোগ নামকাওয়াস্তে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। পরিচালক (প্রশাসন), খান মো. রেজাউল করিম বলে বেরাচ্ছেন যে, এসব তদন্তে কিছু হবে না। টাকা ও ক্ষমতার কাছে সব নিষ্ফল। তদন্তে কোন কিছু প্রমাণ হবে না। এসব বিষয়ে খান মো. রেজউল করিমের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন করলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা।
সম্পাদক বেলাল হোছাইন ভূইয়ার অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী জাতিসংঘের সহযোগী সংগঠন ‘আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন’ এর উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর সামস্ এর অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তার পদে বহাল রেখে তদন্ত করা হলে সেই তদন্ত স্বাভাবিক গতি পায় না। তদন্ত কমিটির সদস্যরা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হন। তারা সঠিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা সাক্ষী দিতে রাজী হন না। এজন্য সরকারী কর্মকর্তাদের অনিয়মের অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করতে হলে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে তার পদ থেকে অপসারণ করে তদন্ত করা একান্ত আবশ্যক।