সাড়ে ৬ ঘণ্টার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেট। আগুনে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ পাইকারি মার্কেটের ৫ হাজার দোকান। ঈদের আগে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন হাজারো ব্যবসায়ী। ধ্বংসস্তুূপ থেকে কিছু মালামাল ব্যবসায়ীরা বের করতে পারলেও পুড়ে গেছে বেশিরভাগ। রাস্তার ওপর পড়ে থাকা সেসব পোড়াস্তূপেই ভালো কাপড় খুঁজে বেড়াচ্ছেন ছিন্নমূল কয়েকশ’ মানুষ।
বুধবার সকালে বঙ্গ ইসলামীয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সের সামনে রাস্তায় পড়ে থাকা পোড়া ও পানিতে ভেজা জামাকাপড়ের মধ্যে ভালো কাপড় খুঁজে বেড়াচ্ছেন ছিন্নমূলরা। এসব পোড়া জামাকাপড় কেউ পরবেন, কেউবা বিক্রি করবেন। আবার কেউ ঘরের দরজা জানালার পর্দা তৈরির কাপড় সংগ্রহ করছেন।
পুরান ঢাকার আগামসি লাইন থেকে আসা সালমা আক্তার বলেন, পোড়া জামাকাপড় থেকে ভালো কাপড় খুঁজছি। এগুলো দিয়ে ঘরের পর্দা বানাবো। গোলাপশাহ মাজারে থাকেন ছিন্নমূল সানি। তিনি বলেন, পোড়া জামাকাপড়ের মধ্যে কিছু ভালো আছে। সেগুলো ধুয়ে নিলে পরা যাবে। তাই খুঁজছি।
পুরান ঢাকার আলো বাজারে একটি হোটেলে কাজ করেন মোশাররফ। তিনি বলেন, হোটেলে আমরা অনেকে কাজ করি। পোড়া কাপড়ের মধ্যে যেগুলো ভালো আছে, সেগুলো পরা যাবে।
এদিকে, বঙ্গবাজারে লাগা আগুন প্রায় নিভে এলেও এখনো এনেক্সকো টাওয়ারে আগুন থাকার আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস। তারা এনেক্সকো টাওয়ারসহ পুরো এলাকায় ডাম্পিং ডাউনের (সম্পূর্ণ নির্বাপন) কাজ করছেন।
সকাল ১০টায় এনেক্সকো টাওয়ারের পঞ্চম তলায় পানি ছিটাতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। পাশাপাশি ওই মার্কেটের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলা থেকে ব্যাপক ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়।
সকাল সাড়ে ৮টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান জানান, তারা এখন ডাম্পিং ডাউনের কাজ করছেন। এখন আর খোলা জায়গায় আগুন নেই। তবে এনেক্সকো টাওয়ারের ৫-৭তলায় কিছুটা আগুন থেকে যেতে পারে। সেটি তারা নির্বাপন করছেন।
অন্যদিকে এনেক্সকো টাওয়ার থেকে এখন বেঁচে যাওয়া মালামাল সরানোর কাজ করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের দোকানে রয়ে যাওয়া মালামাল বস্তায় করে মার্কেট থেকে নিচে ফেলছেন। নিচ থেকে ভ্যান ও পিকআপে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হওয়া আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তলব করা হয়েছিল সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অগ্নিনির্বাপক ইউনিটকে। লাইফ সেভিং ফোর্সের (ফায়ার সার্ভিস) সদস্যদের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয় সেনা, নৌ, বিমান, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। সবার একাগ্র চেষ্টায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।