বিশেষ প্রতিবেদকঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের উপর হত্যাযজ্ঞ ও দমন পীড়নের সরাসরি ইন্ধন দাতা হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদের, তার বিরুদ্ধে বিগত সময়ে গুরুতর অনিয়ম এর অভিযোগ ও তথ্য প্রমান পাওয়া গিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের তম শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ফরিদ চলমান ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ ছাত্র জনতা’কে রাজাকার আখ্যা দিয়ে তাদের নিঃশেষ করে ফেলার হুকুম দেন। তাদের পরাজিত করতে যেকোনো পন্থা অবলম্বনের নির্দেশনা দেন আওয়ামী পন্থী শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।ছাত্র আন্দোলন চলমান সময় সাধারণ ছাত্রদের দমন পীড়নে প্রত্যক্ষভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ অংশগ্রহণ করেন, তৎকালীন সময়ে তার এহেন কর্মকাণ্ডের তথ্য প্রমাণ সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
কাকে বিভিন্ন সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক এমপি মন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে প্রভাব খাটাতে দেখা যায়। তদন্তের মাধ্যমে জানা যায় তিনি নিয়মিত ক্লাস নেন না, যার জন্য দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাকে বয়কট করে এবং ডিপার্টমেন্টে তার নিজস্ব কোন কক্ষ নেই বলে জানা যায়। তিনি ৭ বছরের ছুটি নিয়ে বিনা অনুমতিতে ১১ বছর কাটিয়েছেন বলে জানা যায়। এবং বিভিন্ন সময়ে ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বেগ প্রকাশ করে।
২০১২ সালের আগস্ট মাসে তিনি স্যাবাটিক্যাল ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। তারপর থেকেই তিনি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমে অনুপস্থিত থাকেন বলে অভিযোগ উঠে। তিনি মাঝে মাঝে দেশে এসে বিভাগে যোগদান পত্র জমা দিয়ে যান। যোগদান পত্র গৃহীত হোক বা না হোক সর্বদাই অল্পদিনের ব্যবধানে আবার বিদেশ গমন করেন। উল্লেখ্য, ২৫ জুলাই ২০১৫ তারিখে তিনি বিভাগে যোগদান পত্র জমা দিয়ে ছিলেন অতঃপর ১৩ ই আগস্ট ২০১৫ সালে অসুস্থতা জনিত কারণে ছুটির আবেদন পত্র জমা দিয়ে তারপর আবার দীর্ঘ সময়ের জন্য বিভাগে অনুপস্থিত থাকেন।তিনি বিভাগীয় শিক্ষা পর্যদের বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠানে প্রায়শই অনুপস্থিত থাকেন।
অনুপস্থিত কালীন সময়ে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম facebook একাউন্টে আপলোড করা ছবি থেকে জানা যায় তিনি দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। কিন্তু এসব বিষয়ে কোন তথ্য তিনি বিভাগের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে অবহিত পড়েছেন বলে জানা যায়নি। জাবির দর্শন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ তারেক চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভায় প্রফেসর ফরিদ আহমেদের বিভাগে দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। অধিকাংশরাই মন্তব্য করেন যে, তিনি বছরের অধিকাংশ সময় অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন এবং মাঝে মাঝে আসেন।
বিভাগে তার যোগদান পত্র গৃহীত হোক বা না হোক অল্প দিনের ব্যবধানেই আবার বিদেশ চলে যান। বিভিন্ন সময়ে তিনি স্বল্প দিনের ছুটি নিয়ে পরবর্তীতে বিনা ছুটিতে ক্রমাগত অনুপস্থিত থাকার কারণে তাকে পত্রের মাধ্যমে বিভাগে যোগদানের জন্য অবহিত করা হয়।তার অনু- পস্থিতির কারণে বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমে সৃষ্ট সমস্যার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিভাগের সভাপতি পত্র প্রেরণ করেন বলে জানা যায়।
তিনি উল্লেখ করেন যে প্রফেসর ফরিদ আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বারবার বিদেশ গমন করে চাকুরী-বিধী লংঘন করেছেন।উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটির মেয়াদআস্তে দীর্ঘদিন যাবত বিভাগে যোগদান না করায় এক মাসের মধ্যে বিভাগে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয় কিন্তু তিনি যোগদান পত্র দেন নয় মাস পরে।
পরবর্তীতে ৯ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় তার অনুমোদিত ছুটি সমূহের ভোগকৃত এবং ভবিষ্য’তে প্রাপ্য ছুটির সাথে মনে করে বলা হয় তিনি যেন ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন- কানুন মেনে চলেন এবং পরবর্তী ছুটি চলাকালেও বিদেশ গমন না করেন।আরো জানা যায় তিনি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক’রা অনাস্থা পোষণ করেন, যার জন্য তাকে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ মাস আগেই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়।
পরবর্তী’তে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য আবেদন করেন, কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করেন নি।তা বিজ্ঞপ্তি সময়ের মধ্যে ছিল না।অস্বচ্ছতার জন্যই তাকে ঢাবি’তে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তিনি নিয়োগের পূর্বেই বিভাগে যারা নিয়োগ বোর্ডে ছিল তাদের কারও কারও বাসায় ঘুষ হিসেবে গিফট পাঠিয়েছেন বলেও জানা যায়।
তিনি অনেক উচ্চতর গবেষণা করেছেন বলে দাবি করলেও তার মাস্টার্স, এমফিল বা পিএইচডির কোন থিসিস কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদন্ত সূত্রে জানা যায় যে, ফরিদ আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে দাবি করেন, কিন্তু আদৌ তিনি সেটি অর্জন করেননি।
আরও জানা যায়, তিনি’ COMMONWEALTH UNIVERSITIES YEARBOOK 1996-97′ এ যে এমফিল ডিগ্রি দেখিয়ে ছিলেন, তিনি তা সম্পন্নই করেননি।এছাড়া তিনি সুপার- ভাইজার হিসেবে ড. আব্দুল মতিন এর নাম উল্লেখ করেন যা অসত্য বলে জানা যায়। যার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার নিয়োগ বাতিল করে দেন।নিয়োগ না পাওয়ার আক্রোশে তিনি অন্যান্য নিয়োগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক অবস্থান নেন।প্রথমে ঢাবির দর্শন বিভাগের দুজন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস ও দাউদ খানের বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করেন।কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণেই তিনি হঠাৎ করেই ড. রেবেকা সুলতানার বিরুদ্ধে তার আক্রোশের তীরটি ছোঁড়েন। তিনি তার অপ্রকাশিত থিসিস নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেন।
এবং তিনি ড. রেবেকা সুলতানা কে মৌখিকভাবে হুমকি দিয়েছেন বলেও জানা যায়। এছাড়াও তিনি নীল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. ময়না তালুকদার কে তাকে(ড. রেবেকা সুলতানা) শেষ পর্যন্ত দেখে নিবেন বলে জানান। অতঃপর ড. রেবেকা সুলতানা ডিন, প্রক্টর ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, জগন্নাথ বিদ্যালয় (জবি) তার স্ত্রীর নিয়োগের ক্ষেত্রেও অস্বচ্ছতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুসারে তিনি প্রভাষক হওয়ার যোগ্য নন। প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার স্ত্রী মাস্টার্স সম্পন্ন না করে বরং একটি সেন্টার থেকে মাস্টার্স করেছেন বলে জানা যায় যা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের জন্য প্রযোজ্য নয়। তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জবিতে প্রাথমিক তদন্ত শেষে চূড়ান্ত তদন্ত প্রক্রিয়াধীন।
উপরোক্ত সকল বিষয়ে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অপক্ষমতা ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। জানা যায় তিনি জাহাঙ্গীরনগর এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে মিথ্যে অভিযোগে চিঠি দিয়েছেন।
বোদ্দা জনে’রা মনে করেন ছাত্র হত্যাযজ্ঞে উস্কানি দাতা হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ এর নেতা অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ’কে অপসারণ করে অচিরেই আইনানুক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।এ বিষয়ে তার বক্তব্য নিতে চাইলেও তারমুঠো ফোনে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।