শিপন আহমেদঃ
কথা বলতে হয় হিসেব করে। কারণ সহজ কথাটি সকলের কাছে সহজ নাও হতে পারে। সরল উদ্দেশ্যটা অনেকের কাছে জটিল মনে হইতেই পারে। আর এ থেকে লেগে যেতে পারে দাঙ্গা, হাঙ্গামা, যুদ্ধ বিদ্রোহ পর্যন্ত। আস্তিক, নাস্তিক, দালালসহ নানান উপাধী জুটে যেতে পারে কপালে। সকলের নায়ক মনে করা ব্যক্তিটি মুহুর্তে হয়ে যেতে পারে খলনায়ক।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বেশ কিছু বক্তব্য জনগণকে আকৃষ্ট করেছে। তার কাজ কর্ম দলটির ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করেছে। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে আগামী নির্বাচনে জামায়াতের ভোটের হার বাড়বে। এছাড়া সম্প্রতি ফেনিসহ দেশের ১২ টি জেলা বন্যা আক্রান্ত হলে দলটির পক্ষ থেকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়ে, ছবি না তুলে মেহমান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েও মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহত নিহতদের পাশে জামায়াতের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা করা হয়েছে, অন্য কোন দল, এমনকি অন্তবর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও ততোটুকু করা হয়নি।
ছোট জেলা মানিকগঞ্জেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১৭৯ জন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। গত এক মাসে জামায়াতে ইসলামীর এমন ভালো কাজের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু জামায়াত প্রধানের একটি বক্তব্যে যেন সব উলোট পালোট হয়ে গেল। ডা. শফিকুর রহমান দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বলছেন। আর এতেই যেন আগুনে ঘি ঢালার অবস্থা।
বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত আবেগি ও হুজুগে। যে কারণে হুজুগে বাঙালি বলা হয় এ জাতিকে। এরা কোন কিছু অনুধাবন করে না, এমনকি করার চেষ্টাও করে না। এরা যে কিছু নিয়ে যখন তখন লাফালাফি শুরু করে দেয়, আবার ক’দিন পর সব ভুলেও যায়। কাজেই আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার জন্য ছাত্র জনতা, রাজনৈতিক মহল তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে। জামায়াত আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার কে? তাহলে জুলাই-আগস্টে যারা জীবন দিল, তাদের হত্যার বিচার হবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি…
আসুন আমরা জামায়াত নেতার বক্তব্যটা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি। তিনি বলেছেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে তারা ক্ষমা করেছেন। অর্থাৎ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৬ বছর যেভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীর উপর হত্যা, জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে, জামায়াত সেসবের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করেছে। ক্ষমা নিয়ে কুরআনে ১২০ টি আয়াত রয়েছে। ক্ষমা হচ্ছে মহৎ গুণ। আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী ধৈর্য্যশীল। আল্লাহ ক্ষমাকারীকে পছন্দ করেন।
যদিও ইসলামে প্রতিশোধ নেওয়া জায়েজ, তবে ক্ষমা করা উত্তম। ঠিক এ কারণে প্রতিশোধের পথে না গিয়ে জামায়াত নেতা আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা বলছেন। এর দ্বারা তিনি নিজের মহত্ত্বকেই ধারণ করেছেন, একজন প্রকৃত ইমানদার ব্যক্তির যেমনটা করা উচিত।
তবে তিনি তার এ বক্তব্যের দ্বারা জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহতদের হত্যাকারীকে ক্ষমা করার কথা বোঝাননি। আর একজনের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য অন্য একজন ক্ষমা করতে পারেন না। যতক্ষণ না ওই ব্যক্তি ক্ষমা করেন। এ কারণে ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা হত্যার শিকার হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি আইনী সহযোগিতা চাওয়া হয়, তাহলে জামায়াতে ইসলামী তাদের পাশে থাকবে। ন্যায় বিচার নিশ্চিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
আসুন, আমরা আরও একটু ধৈর্য্যশীল হই। জাজমেন্ট দেওয়ার আগে একটু বোঝার চেষ্টা করি।
(রাজনৈতিক ভাষ্যকার)