• বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ পূর্বাহ্ন

সাপাহারে আমের ওজনে ব্যাপক অনিয়ম, ৫৩ কেজিতে মণ

সংবাদদাতা / ২৫৮ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : বুধবার, ৫ জুলাই, ২০২৩

আব্দুর হালিম, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর সাপাহার বর্তমানে আম উৎপাদনে শীর্ষস্থান দখল করে দেশব্যাপী নওগাঁ জেলার নতুন পরিচিতর সৃষ্টি করেছে। অন্যান্য জেলার থেকে বরেন্দ্র এই এলাকার আম সুমিষ্ট হওয়ায় দেশের সর্বত্রই এর চাহিদাও অনেক। এছাড়া এই এলাকার উৎপাদিত আম বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।

ফলে ইতোমধ্যেই নওগাঁ জেলা সারাদেশে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। চলতি মৌসুমে তীব্র খরায় সেচ ব্যবস্থা, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরি সহ নানাবিধ কারণে আম উৎপাদনে খরচ বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে বলে এখানকার আমচাষীরা জানিয়েছেন। এমনি অবস্থায় আম
চাষীগন সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে আমের হাটে বিক্রির ক্ষেত্রে নানাবিধ অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে চাষীদের।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার জেলার বৃহত্তম এই আমের হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিনের মতো সকাল থেকেই আম বেচাকেনা শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। উপজেলার জয়পুর ফিলিং স্টেশনের মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট হয়ে দিবরের মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভ্যান,ট্রলি ও
পিক-আপের সারি রাস্তার পাশে আম বেচা-কেনা করছে।

আর এসব আম চাষীরা হাটের অ- ব্যবস্থাপনার কারণে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ও তুলেছে। পাশ্ববর্তী পোরশা উপজেলা হতে আম বিক্রি করতে আসা জাহিদ হাসান জানান, গত কয়েক বছর সাপাহারে আমের ওজন সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এবারে পুরোটাই আলাদা,আম ব্যাবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে আম চাষীরা। ওজনে ৫৩ কেজিতে মণ ছাড়া কথাই শুনছেন না
ব্যাবসায়ীরা, তারা কখনও ৫১ কেজি কখনও ৫২ কেজি আবার কখনও ৫৩ কেজিতে ১ মণ হিসেবে আম
ক্রয় করছেন।

এছাড়া ওজনের সময় নানা কায়দায় ক্যারেট থেকে আম নিয়ে নিচ্ছে তারা, প্রতিবাদ করতে গেলে আবার অকারণেই বাছাই করছে ঝুড়ির আম, এছাড়াও সেচ্ছাসেবক নামে লাঠি হাতে প্রতিটি আমের গাড়ীর ক্যারেট থেকে আম তুলে নিচ্ছে কিছু শ্রেণীর লোক আবার হিজড়ারাতো আছেই কথা ছাড়াই আম নিচ্ছে এভাবে কয়েক ধাপে জবাবদিহিতা ছাড়ায় আম নিয়ে নিচ্ছে তারা।

হয়রানির শিকার পত্নীতলা উপজেলার আম বিক্রেতা সোহেল রানা বলেন, সাপাহার উল্লাস সিনেমা হল সংলগ্ন ঢাকা ফল ভান্ডারে আম বিক্রয়ের সময় ওজনের অনিয়ম ৫৩ কেজিতে মণ এর পরেও নানা ভাবে আম তুলছে প্রতি ক্যারেট থেকে যা কোন ভাবেই ৫৫ কেজির কম হবেনা। তাছাড়া অনেক সময় টাকা দিতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা ঘুরিয়ে হাতে বিক্রি স্লিপ দিয়ে পরের দিন আসতে বলছেন তারা।

এছাড়াও আম বিক্রি করতে আসা মাসুদ, আরিফ, নুর আলম সহ অনেক চাষীই একই ভাবে এসব অনিয়মের কথা সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান। তারা বলেন দরদাম ঠিক হওয়ার পর আড়তে গিয়ে হয়রানি করছে আম ব্যাবসায়ীরা। যেখানে এক মণ আমে তাদের বেশি দিতে হচ্ছে ১০-১২ কেজি পর্যন্ত তার পর ও লেনদেন নিয়ে ঝামেলা করে টাকা জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরাচ্ছে চাষীদের।

এবিষয়ে সাপাহার আম বাজার আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, আমরা ওজনে বেশি নিতে কখনই চাই না। কৃষকরা ছোট-বড় আম একসঙ্গে করে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে এসে ব্যবসায়ীদের সব আম নেওয়ার জন্য দুই কেজি বেশি নিতে বলে। আর যাদের আম ভালো এক সাইজের তাদের কাছ থেকে ৪৮ কেজিতে মণ হিসেবে কেনা হয়।

তিনি আরো বলেন, পার্শ্ববর্তী কানসাট ও রহনপুরে ক্যারেট ছাড়ায় ৫২ কেজিতে মণ নেওয়া হয়। আর আমাদের এখানে ৪৮ কেজিতে আম কেনা হয়। এর প্র-ভাবে সাপাহারে ব্যবসায়ীরা কম আসছে, ওজন সব জায়গায় সমান হলে আমের দাম আরও বেশি হতো। অনিয়মের বিষয়ে সাপাহার বাজার আমচাষী সমিতির সহ-সভাপতি খন্দকার হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষকদের কষ্টের ফসল এভাবে ওজনে বেশি নেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক।

এছাড়াও আম বাজারে নানাবিধ অনিয়মের ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এবং পাশা পাশি বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবিও জানিয়েছেন। বর্তমানে এই হাটে মানভেদে প্রতি মণ আমরুপালী ২২শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার ৩২শ’ টাকা,
ফজলি ১২শ’ টাকা থেকে ১৬শ’ টাকা, মল্লিকা এবং ল্যাংড়া আম ৪০০০ টাকায় কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী এবার সাপাহারে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে এবং প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে মতে এবারে সাপাহার বৃহত্তর এই আমের হাট হতে প্রায় শতকোটি টাকার আম কেনা বেচা হতে পারে। সাপাহারের আমচাষীগন ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ধরনের হয়রানী থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ ও সহযোগীতা কামনা করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...