• শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন

অপহৃত ৮ মাসের শিশু কন্যাকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব, অপহরণকারী তানজিলা গ্রেফতার

বনি আমিন (কেরানীগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ / ৪১ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

বনি আমিন (কেরানীগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আগানগর এলাকায় ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাসকারী মিসেস সাকিলা এনাম (৩২), স্বামীঃ-এনামুল হক মজুমদার। সাকিলা তার স্বামী ও ০৩টি পুত্র সন্তান ১। আদিফ মজুমদার (১৩), ২। আহনাফ মজুমদার (০৬) ও ৩। সাইফান মজুমদার (০৮ মাস) কে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ উল্লেখিত এলাকয় বসবাস করে আসছে। গত ১২ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ০৬:৩০ ঘটিকায় সময় মোছাঃ তানজিলা আক্তার পারভীন (৩৫) নামক একজন মহিলা সাকিলার বাসায় এসে তার অসহায়ত্বের কথা বলে শুধু থাকা- খাওয়ার বিনিময়ে বাসায় কাজের জন্য আশ্রয় দিতে আকুতি-মিনতি করে।

সাকিলা পারভীনের অসহায়ত্বের কথা শুনে সরল বিশ্বাসে মানবিক দিক বিবেচনা করে পারভীন’কে তার বাসায় আশ্রয় দেয়। তার পরেরদিন গত ১৩ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক সকাল ১১:০০ ঘটিকায় সাকিলার মেজো ছেলে আহনাফ (০৬) আইসক্রীম খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করলে পারভীন আহনাফ ও সাকিলার ছোট ছেলে সাইফান (০৮ মাস)’কে নিয়ে আইসক্রীম আনার জন্য তাদের বাসার নিকটবর্তী একটি দোকানে যায়। তার কিছুক্ষণ পর আহনাফ আইসক্রীম নিয়ে একা বাসায় গেলে আহনাফের মা সাকিলা আহনাফ’কে জিজ্ঞাসা করে যে, পারভীন ও সাইফান কোথায়।

এবিষয়ে আহনাফ তার মাকে জানায় যে, পারভীন আহনাফ’কে আইসক্রীম কিনে দিয়ে বলেছে তুমি বাসায় যাও আমি সাইফান কে নিয়ে আসতেছি তাই আহনাফ আইসক্রীম নিয়ে বাসায় চলে এসেছে। সাকিলা অনেকক্ষণ আপেক্ষা করার পর পারভীন ও সাইফানের কোন খোঁজ খবর না পেয়ে সম্ভাব্য আশপাশের সকল জায়গায় খোঁজা খুঁজি করে কোথায় সাইফান ও পারভীনের সন্ধান না পেলে দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা খুঁজি করতে থাকে। অনেক খোঁজা খুঁজির পরও সাইফানের কোন সন্ধান না পেলে সাকিলা বুঝতে পারে যে, পারভীন সাইফান’কে অপরহণ করেছে।

পরবর্তী’তে সাকিলা তার স্বামী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে গত ১৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ ঢাকার দক্ষিন কেরাণীগঞ্জ থানায় তানজিলা আক্তার পারভীন এবং অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন যার মামলা নম্বর-১৯, তাং-১৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০/ সংশোধনী (২০২০) এর ৭/৩০।

ইতোমধ্যে অপহরণের বিষয় টি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সংবাদ মাধ্যম ও ইলেট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। বিষয় টি জানতে পেরে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল দক্ষিন কেরাণীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর অপহৃত ভিকটিম সাইফান (০৮ মাস)’কে দ্রুত উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

জানাযায়, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক সকাল ০৭:৩০ ঘটিকায় র‌্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও র‌্যাব-০৮ এর সহায়তায় শরীয়তপুর জেলার পালং থানাধীন চরলক্ষী নারায়ন এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।

উক্ত অভিযানে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে চাঞ্জল্যকর ০৮ মাসের শিশু সাইফান’কে অপহরণকারী  তানজিলা আক্তার পারভীন (৩৫), স্বামীঃ- আশরাফুল আলম, সাং- আগানগর, থানাঃ- দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারভীন শিশু ভিকটিম সাইফান’কে অপহরণের বিষয় টি স্বীকার করে এবং তার দেখানো মতে ঘটনা স্থলে একটি বাসা হতে অক্ষত অবস্থায় শিশু ভিকটিম সাইফান মজুমদার (০৮ মাস)’কে উদ্ধার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, আসামী পারভীনের বাবা-মা নেই। প্রায় ১২ বছর পূর্বে ময়মনসিংহে এক ব্যক্তির সাথে পারভীনের বিবাহ, হয় ঐ স্বামীর ঘরে আরেকজন স্ত্রী ছিল। সেখানে সতীনের একই সংসারে বেশ কিছুদিন থাকার পর পারভীনের বাচ্চা না হওয়ার কারনে উক্ত স্বামীর সাথে পারভীনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

পরবর্তীতে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আগানগর এলাকায় ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাসকারী প্রবাসী আশরাফুল আলমের সাথে পুনরায় পারভীনের বিবাহ হয়। আশরাফুলও বিবাহিত ছিল তার প্রথম স্ত্রী পাগল হয়ে নিরুদ্ধেশ ছিল এবং ঐ স্ত্রীর ঘরের একটি প্রতিবন্ধী ছেলে সন্তানও রয়েছে যার দেখা শোনা পারভীন করত। বিয়ের কয়েক মাস পর পারভীনের বাচ্চা না হওয়ার কারণে তাদের সংসারে প্রায়ই ঝগড়া- বিবাধ লেগেই থাকত।আশরাফুল প্রবাসে চলে গেলে তার কিছুদিন পর পারভীন আশরাফুলকে জানায় যে, পারভীন অন্তঃসত্ত্ব! হয়েছে এ কথা শুনে আশরাফুল অনেক খুশি হয়।

বছর খানিক পর আশরাফুল দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেয় এবং বিষয়টি তার স্ত্রী পারভীন কে জানায়। আশরাফুল দেশে এশে যদি জানতে পারে যে, পারভীন আশরাফুল’কে অন্তঃসত্ত্ব! হওয়ার বিষয় টি মিথ্যা বলেছে তাহলে পুনরায় পারভীনের সংসার ভেঙ্গে যাবে, তাই পারভীন ০৮-১০ মাস বয়সের একটি শিশু অপহরণ করার মতো জঘন্য সিদ্ধন্ত গ্রহণ করে। পারভীন শিশু ভিকটিম সাইফানের মা সাকিলার ভাড়াটিয়া প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে পারভীন সাইফানের সম্পর্কে পূর্ব হতে সবকিছু জানতো তাই সে সাইফানকেই অপহরণ করার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মোতাবেক সাকিলার বাসায় যায় এবং সাকিলা’ কে অসহায়ত্বের মিথ্যা কথা বলে সাকিলার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে তার বাসায় আশ্রয় নেয় এবং পরবর্তী তে সাইফান’কে অপহরণ করে বলে জানা যায়। গ্রেফতার কৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।#


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...