নিজস্ব প্রতিবেদক: টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক। এ ছাড়া ইজতেমা মাঠ সাদপন্থীরা দখল নিয়েছে বলে দাবি করে ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ৩টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দুর বাচ্চু মিয়া (৭০) ও ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার আ.সামাদের ছেলে বেলাল (৬০)। ও বগুড়া জেলার তাইজুল ইসলাম।
আহতরা হলেন- আ. রউফ (৫৫), মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২), সাহেদ (৪৪), উকিল মিয়া (৫৮), পান্ত (৫৫) টঙ্গী, খোরশেদ আলম (৫০) বেলাল (৩৪), আনোয়ার (৫০), আবু বক্কর (৫৯), আরিফুল ইসলাম (৫০), আনোয়ার (২৬), আনোয়ার (৭৬), ফোরকান আহমেদ (৩৫), আ. রউফ (৫৫) মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২), সাহেদ (৪৪)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত ৩টার দিকে সাদপন্থীরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করতে থাকে। এসময় মাঠের ভেতর থেকে যোবায়ের পন্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে সাদপন্থীরাও পাল্টা হামলা চালায়। একপর্যায়ে সাদপন্থীরা মাঠে প্রবেশ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই ২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। অপর একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় বলে জানা গেছে। সাদপন্থীদের প্রভাবশালী মুরুব্বি মুয়াজ বিন নূর এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমরা এখন ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণে আছি। যোবায়েরপন্থীদের আক্রমণে আমাদের ৩ জন ভাই শহীদ হয়েছেন। ময়দানে অনেক যোবায়েরপন্থী চাকু ও ছোড়াসহ আটক হয়েছে বলে নূরের দাবি।
এদিকে ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে হতাহতদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিনিয়র ব্রাদার হাফিজুল ইসলাম নিহত ও আহতদের খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, এ পর্যন্ত তিনজন নিহত ও অসংখ্য লোক আহত হয়েছেন। আহতরা হাসপাতালে আসছে। অনেক এর অবস্থা আশঙ্কাজনক দাবি করে তিনি বলেন, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আহতদের ঢাকা মেডিক্যালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসকন্দার হাবিব বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দুই জন নিহতের তথ্য পেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত: আগামী বছর দুই ধাপে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ডিসেম্বর শুরায়ে নেজামের আয়োজনে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা শেষ হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর সাদপন্থিরা জোড় ইজতেমা করবেন ও জুবায়েরপন্থিরা করতে দিবে না বলে বিরোধ চলছে। এ অবস্থায় উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। জুবায়েরপন্থিদের সংবাদ সম্মেলনের পর সাদপন্থিরাও সম্মেলন করে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। এই অবস্থায় সাদপন্থিদের পূর্বঘোষিত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে আজ ১৮ ডিসেম্বর করেছে তারা। এই অবস্থায় মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে জুবায়েরপন্থিদের সমর্থনে টঙ্গীবাসী ও ছাত্রজনতার ব্যানারে টঙ্গী থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি মানববন্ধন হয়।