বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনঃ গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানা রোডের সারদাগঞ্জ কাজী মার্কেট এলাকায় একটি ছোট্ট কর্মকার কারখানা। এখানেই বসে দিনভর ঘাম ঝরান মোঃ হাসান মিয়া ও তাঁর সহকারী শ্রী সন্তোষ কর্মকার। দা, ছুড়ি, কোদাল, চাপাতি, সস্তা—এসব লোহা জাতীয় সামগ্রী তৈরি করে বিক্রির চেষ্টা করেন তাঁরা। অথচ দিনশেষে জীবিকার আশায় আগুনে পোড়া হাতে মেলে না ন্যায্য দাম, মেলে না হৃদয়ের সান্ত্বনা।
“একটা ছুড়ি বানাইতে যে কয়লা লাগে, তার দামই এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তারপর আমাদের পরিশ্রম—সেটার তো হিসাবই নাই,” বলেন মোঃ হাসান মিয়া। তিনি জানান, কয়লার দাম প্রতি কেজিতে ৪৫-৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। অথচ একটি দা বানিয়ে বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতারা বলেন, “এই জিনিসের এত দাম কেমনে হয়? আমরা এত টাকা দিতে পারব না।”
“আমরা যদি দামের কথা বলি, ক্রেতারা রাগ করেন। অনেকেই গালি দেন, কেউ কেউ দোকান ছেড়ে চলে যান। কিন্তু আমাদেরও তো সংসার আছে, বাচ্চাদের স্কুলের খরচ আছে, খাওয়ার খরচ আছে,” হতাশ কণ্ঠে বলেন হাসান মিয়া। শ্রী সন্তোষ কর্মকার বলেন, “দিনের শেষে হাতে কিছু থাকেই না। সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করি, তবু বাড়ি ফিরে দেখি বাজার করার টাকা ঠিকমতো জোগাড় হয় না।”
বিশেষ করে কোরবানি ঈদের সময়টাতে বাড়তি চাপ থাকে দা, ছুরি, সস্তা ও চাপাতির চাহিদা নিয়ে। কিন্তু উপকরণের দাম এবং লোহার বাজারে অস্থিরতা তাঁদের কাজকে আর ও কঠিন করে তুলেছে। মোঃ হাসান মিয়া বলেন, “ঈদ মানে তো সবার জন্য আনন্দ। কিন্তু আমাদের জন্য ঈদ মানেই বাড়তি কাজ, অথচ লাভ শূন্য। নিজেরাই ঠিকমতো ঈদের বাজার করতে পারি না।”তাঁদের মতে, সরকার যদি কিছু সহায়তা দিত—যেমন কয়লা ও লোহা কেনার জন্য ভর্তুকি কিংবা স্বল্প সুদে ঋণ—তাহলে হয়তো তাঁরা মাথা তুলে বাঁচতে পারতেন।
এই ছোট্ট কর্মকার পরিবারটির জীবনের গল্প যেন হাজারো হস্ত শিল্পীর প্রতিচ্ছবি। গ্রামীণ শিল্প ও কর্মকারদের টিকে থাকা, তাদের জীবন যুদ্ধের কষ্ট গুলো সমাজের মূল স্রোতে আনার এখনই সময়। না হলে ভবিষ্যতে এ শিল্প বিলুপ্তির পথে হাঁটবে, আর আমরা হারাবো নিজস্ব সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ ধারা।