• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন

কেরানীগঞ্জে আঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ৭ আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব ১০

সংবাদদাতা / ৩০৯ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩

বনি আমিন, কেরানীগঞ্জ থেকেঃ কেরানীগঞ্জে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম’কে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী রাজন-সহ হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ০৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। এসময় পথরোধ করে ভিকটিম সাইফুলকে ক্রিকেট ব্যাট, ব্যাটন, রড ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংস ভাবে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে গেলে রাজন পাশের একটি দোকান থেকে চামচ নিয়ে এসে সাইফুলের চোখ নৃশংসভাবে উপড়ে ফেলেন।

সাইফুলের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। স্থানীয়রা সাইফুলকে উদ্ধার করে রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী রাজন- সহ হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ৭ জনকে সোমবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘৩০ জুলাই রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় সাইফুল ইসলাম নামে এক পোশাক ব্যবসায়ীকে দুর্বৃত্তরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসহভাবে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং চোখ উপড়ে ফেলে নির্মমভাবে হত্যা করে।’

এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

র‌্যাব হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত সোমবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাইফুল হত্যাকাণ্ডের মূলপরিকল্পনাকারী মোঃ রাজন হোসেন সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- জানে আলম, মোঃসুমন ওরফে গর্দা সুমন, লিটন হোসেন, মোঃ দিপু, সরোয়ার আকন্দ, এবং মোঃ সজীব। উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সূচালো লোহার রড, একটি ভাঙ্গা ক্রিকেট ব্যাট, একটি ব্যাটন ও ছয়টি মোবাইল ফোন।

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘সাইফুল দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন এবং সাতপাখি রোডে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করেন।’

র‌্যাব মুখপাত্র মঈন বলেন, ‘সাইফুল ছিলেন এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী কণ্ঠ। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতেন। তিনি বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও সহায়তা করতেন। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও অন্যরা সাইফুলের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করেন।’ গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজন গত ২৮ জুন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। তার ধারণা, এই গ্রেপ্তারের পেছনে সাইফুলের হাত রয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত জানে আলম এবং সুমন ও তার মা ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পিছনেও সাইফুলের হাত রয়েছে বলে তারা ধারণা করেন।

রাজন গত ১৯ জুলাই মুক্তি পেয়ে গ্রেপ্তারকৃত জানে আলম, সুমন ও অন্য সহযোগীদের নিয়ে ভিকটিম সাইফুলকে পরিকল্পিতভাবে গত ৩০ জুলাই রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়। র‌্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের পর এলাকা থেকে পালিয়ে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। তারা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও অর্থের বিনিময়ে সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করত বলে জানা যায়।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী কমান্ডার মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তার রাজন স্থানীয় একটি রিকশা গ্যারেজ পরিচালনা করতো। পাশাপাশি এলাকায় মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, গাড়ি চুরি-সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। রাজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক দ্রব্য ও চুরি-সহ পাঁচটির বেশি মামলা রয়েছে।’র‌্যাব জানায়, জানে আলম রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। পাশাপাশি এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। সাইফুল হত্যাকাণ্ডে রাজনের অন্যতম সহযোগী জানে আলম। হত্যাকাণ্ডের সময় জানে আলম ভিকটিম সাইফুলকে ব্যাটন দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন। তার বিরুদ্ধেও অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক দ্রব্য ও চুরিসহ চারটির বেশি মামলা রয়েছে।

সুমন কাঠ কাটা শ্রমিকের কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। ভিকটিম সাইফুল হত্যাকাণ্ডে রাজনের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। সুমন ভিকটিম সাইফুলকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে মাথায় গুরুতর জখম করেন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, ডাকাতি ও মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধের চারটির বেশি মামলা রয়েছে। সাইফুল হত্যাকাণ্ডে লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীব রাজনের সহযোগী ছিলেন। গ্রেপ্তার লিটন মুদ্রাক্ষরিক, গ্রেপ্তার দিপু ও সজীব জাহাজ ভাঙার শ্রমিক এবং সরোয়ার রঙ মিস্ত্রির কাজ করেন।

এছাড়াও তারা রাজনের নেতৃত্বে এলাকায় মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে জানা যায়। হত্যাকাণ্ডের সময় গ্রেপ্তার লিটন, দিপু, সরোয়ার ও সজীব লাঠি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভিকটিমকে এলোপাথাড়িভাবে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...