বিডিসি ক্রাইম বার্তা ডেস্কঃ- আইন- শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ততা আর রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ফতুল্লার পাগলার কুতুবপুরে মাদক ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে অতিমাত্রায় বেপোরোয়া। কোন প্রকার রাখ ঢাক না রেখেই মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে বেচা কেনা করছে মাদক। পুরো কুতুবপুরে মাদক হয়ে উঠেছে অতিমাত্রায় সহজলভ্য। হাত বাড়ালেই মিলছে ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ, গাঁজা, হালের ক্রেজ খ্যাত মাদক ইয়াবা ট্যাবলেটসহ নানা জাতীয় মাদক দ্রব্য।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগব্যবস্থায় সুবিধাজনক দিক, শ্রমঘন এলাকা-সব মিলিয়ে কুতুবপুর বরাবরই মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট পয়েন্ট। আর এর সুযোগ মাদক ব্যবসায়ীরা নিচ্ছে বেশ ভালোভাবেই। ইউনিয়নের রসুলপুর, আকনপট্টি নয়ামাটি, শরীফবাগ, আমতলা, শাহীবাজার, বউবাজার, চিতাশাল, মুন্সিবাগ, বাদামতলা, শহীদনগর, আদর্শনগর, নূরবাগ, কুসুমবাগ, খালপাড়, দেলপাড়া, রেললাইন বটতলা, শাহিবাজার, নন্দলালপুর, ভূইগড়, মাহমুদপুর, রঘুনাথপুর, তুষারধারা, পাগলা, জেলেপাড়া, মুসলিমপাড়া, নিশ্চিন্তপুর সহ আনাচেকানাচে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা।
সুযোগ পেলেই মাদকের বিরদ্ধে বেশ উচ্চকণ্ঠ বক্তব্য রাখেন কুতুবপুরের রাজনৈতিক নেতারা। মসজিদ কি মন্দির,রাজনৈতিক মঞ্চ এমনকি জানাযাতে গিয়েও মাদক এবং কিশোর গ্যাং বিরোধী বক্তব্য দিতে দেখা যায় তাদের। মাদক ব্যবসায়ীদের গালিগালাজ দেওয়া ছাড়াও তাঁদের ধরে পেটানোর হুমকিও দিচ্ছেন ক্ষমতাশালী নেতারা। এমন বক্তব্যে তারা বেশ বাহবাও পেয়ে থাকেন পাশাপাশি টিপ্পনি ও কাটেন অনেকেই।
কিন্তু সেই নেতাদের আপন জন- ঘনিষ্ঠেজনেরাই মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে জড়িত রয়েছেন এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়বাসীর। কুতবপুরের চিত্র এমনই বলে মতামত জনসাধারণের। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না পারলেও বক্তাদের এমন হাস্যকর কার্যকলাপের ব্যাপারে নিকটজনদের কাছে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। তথ্য মতে, রাজনৈতিক শেল্টার হয়ে উঠছে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান হাতিয়ার। অভিযোগ আছে, এই অঞ্চলের মূলধারার অনেক রাজনৈতিক নেতা সরাসরি মাদক ব্যবসায় শেল্টার দিয়ে থাকেন। এমনকি অনেকের পরিবারের সদস্যেরাও মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত।
এছাড়া অনেক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে শেল্টার দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে নেতাদের বিরুদ্ধে। মাদক ব্যবসায় অভিযুক্ত অনেককেই নেতাদের আশেপাশে দেখা যায়। এমনকি বিভিন্ন উপলক্ষে নেতাদের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার-ফেস্টুনও তৈরি করেন তারা। আর মাদক ব্যবসার মাধ্যমেই অঢেল অর্থের মালিক হয়েছেন নেতাদের কেউ কেউ, এমন গুঞ্জন ও চাউর আছে। কুতুবপর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে কয়েক শতাধিক চিহ্নিত মাদক কারবারী।
এরা হলো-পাগলা বাজার স্টুডিও এলাকার আলমাছের ছেলে শাহ আলম, পশ্চিম নন্দলালপুর এলাকার সালামের ছেলে রনি ওরফে পেঁচা রনি, নয়ামাটি এলাকার সামসুল হকের ছেলে সেলিম, পশ্চিম নয়ামাটি এলাকার জলিলের ছেলে হাফিজ, চিতাশাল খালপাড় এলাকার মজিবরের স্ত্রী ও মেয়ে সনিয়া, চিতাশাল খালপাড় এলাকার সেকান্দারের বাড়ীর ভাড়াটিয়া পাখি ও তার স্বামী নভেল।
শাহিবাজার, শাহি মহল্লা, রসুলপুরসহ আশপাশ এলাকাজুড়ে ইমরান- লিমনের নেতৃত্বে তার আপন চাচাতো ভাই নাঈম ও ভাগিনা তানভীর নিয়ন্ত্রণ করছে মাদকের বাজার বিশাল বাজার। পাগলা শাহি বাজার, বটতলা রেল লাইন এলাকায় ইমরান তার চাচাতো ভাই নাঈম ও ভাগিনা তানভীর সেলসম্যান দিয়ে ইয়াবা, গাজাঁ ও ফেনসিডিল বিক্রি করিয়ে থাকে।
একই সাথে একই কায়দায় সেলস ম্যান দিয়ে মাঠাপট্টি প্যারাডাইস মাঠ মল্লিক বাড়ির মাঠে ইয়াবা ও ফেনসিডিল বিক্রি করিয়ে থাকে। নয়মাাটি মুসলিম পাড়া এলাকায় মাদক বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সুসিল, রকিসহ আরো বহু মাদক ব্যবসায়ী ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে মাদক ব্যবসা করে আসছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতের সঙ্গেও মাদকের পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিমত বিশিষ্টজনদের। তারা বলছেন, সুলভে মাদক দিয়েই উঠতি কিশোরদের গ্যাংয়ে ভিড়ানো হয়। একসময় মাদকের অর্থ জোগাতে সেইসব কিশোরেরা হয়ে উঠে মাদক ব্যবসায়ী। ব্যবসা ও আধিপত্য বজায় রাখতে সংঘাতেও জড়িয়ে পরতে দেখা যায় তাদের।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ রিজাউল হক দিপু বিডিসি ক্রাইম বার্তাকে জানান, মাদকের সাথে তাদের কোন আপোষ নেই। মাদকের বিরুদ্ধে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তথ্য প্রমান পেলে মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি তাদের শেল্টার দাতাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হবে বলে তিনি জানান।#