নিজস্ব প্রতিবেদক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কারণে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি চক্র তার ৮ম সেমিস্টারের থিসিস মূল্যায়নে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কম নম্বর দিয়ে চূড়ান্ত সিজিপিএ কমিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য। জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিক উর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করে। ভুক্তভোগী একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাজিদ ইকবাল ওই শিক্ষকের মন্তব্যের বিরুদ্ধে ৩ আগস্ট সামাজিক মাধ্যমে একটি ব্যঙ্গাত্মক প্রতিবাদ পোস্ট করেন।
এর জের ধরে বিভাগের কিছু আওয়ামীপন্থী শিক্ষক তাকে উদ্দেশ্য করে চক্রান্ত করেন এবং তার থিসিস মূল্যায়নে দুর্নীতির মাধ্যমে তার একাডেমিক ফলাফল ইচ্ছাকৃতভাবে কম নাম্বার দিয়ে প্রভাবিত করেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেওয়া অধ্যাপক ড. শফিক উর রহমান নিজেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে কোটাধারী এবং বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ৭টি সেমিস্টার পর্যন্ত গড় সিজিপিএ ছিল ৩.৮১ এবং তিনি বরাবরই প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থানে ছিলেন। অথচ ৮ম সেমিস্টারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার ৬ ক্রেডিটের থিসিসে মাত্র ৩.২৫ (বি+ গ্রেড) দিয়ে তার শেষ সেমিস্টারে মাত্র ৩.৫৫ সিজিপিএ দেওয়া হয়। যার ফলে ওই শিক্ষার্থীর চূড়ান্ত সিজিপিএ ৩.৭৮-এ নামিয়ে আনা হয়। অথচ উক্ত থিসিস সম্পর্কিত একটি অংশ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্রাজুয়েট রিসার্চ কনফারেন্স ২০২৪ এ প্রকাশিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় তার থিসিসের প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিনারে কোনো শিক্ষক নেতিবাচক মন্তব্য করেননি বরং প্রশংসা করেছেন। পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. গোলাম মইনুদ্দিন ওই শিক্ষার্থীর সেমিনার প্রেজেন্টেশনে থিসিসের গবেষণা পদ্ধতি অন্যদেরকেও ব্যবহারে উৎসাহী করেন। এমনকি তার থিসিস সুপারভাইজর অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা তার থিসিসে ধারাবাহিক মূল্যায়নে তার থিসিস উচ্চমানের বলে মন্তব্য করেন। এছাড়াও বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ তাকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে তার গবেষণায় গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তার থিসিস তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠিয়ে পরিকল্পিতভাবে নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাংলাদেশের পরিবেশ আইন, বিধিমালা ও ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার আন্তসম্পর্ক, এবং তার আলোকে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধান অনুশীলন সম্পর্কে থিসিস করেন। এক্ষেত্রে উক্ত বিভাগের আওয়ামীপন্থী অধ্যাপক ড. আফসানা হক, ভুক্তভোগীর থিসিস মূল্যায়নে দ্বিতীয় পরীক্ষক হিসেবে তার অনুগত অধ্যাপক ড. লুতফুর রহমান ও তৃতীয় পরীক্ষক হিসেবে প্রতিহিংসাপরায়ণ আরেক আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. শফিক উর রহমানকে মনোনীত করেন। আশ্চর্যজনকভাবে বিভাগে উক্ত থিসিসের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও যাদেরকে মূল্যায়ণের জন্য মনোনীত করা হয়েছে তারা উক্ত থিসিসের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণার অভিজ্ঞতা বা কোনো কোর্স নেওয়ার রেকর্ড নেই, বরঞ্চ উভয়েই পরিবহন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞ।
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা কমিটিতে থাকা বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. আনিসা নূরী কাকনকে না জানিয়েই ভুক্তভোগীর থিসিস তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে, যা স্পষ্টতই বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘন। বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি বিভাগীয় সভা থেকে নিশ্চিত করেছেন এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিজেও গ্রেডশিট সংগ্রহ করে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন। এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, বিভাগীয় সভাপতি, থিসিস সুপারভাইজর এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছেন এবং তার থিসিস মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি ছাড় দেব না। আমার ব্যক্তিগত ফলাফল পরিবর্তন হোক বা না হোক, জাহাঙ্গীরনগরে এই অপসংস্কৃতি বন্ধ হওয়া দরকার