অনলাইন ডেস্ক: গেল দেড় দশকে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভয়ারণ্য হয়ে উঠে টেলিকম খাত। সালমান এফ রহমান সিন্ডিকেটের প্রভাব-বলয়ে বন্দি হয়ে পড়েন কর্মকর্তারা। বেসুমার অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে লুটে নেয়া হয় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার সুবিধা।ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। প্রকৃত দরের চেয়ে কম ঘোষণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয় এসব অর্থ।
প্রাথমিক তদন্তে আইন বহির্ভূতভাবে আইওএফ গঠনের মাধ্যমে রাজস্ব ভাগাভাগিতে অনিয়ম পেয়েছে বিটিআরসি। আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, আইআইজিসহ বিভিন্ন খাতের লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম এবং রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে নেয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ।বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, লভ্যাংশ শেয়ার করা হয় লটারিতে, এখানে যে একটি গ্যাপ, এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এটি সিরিয়াসলি দেখার আছে।
২০১৫ সালে আইওএফ সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল ব্যবসা দখলে নেয় সালমান এফ রহমানের সিন্ডিকেট। অভিযোগ আছে, ভয়েস কলে নামমাত্র ট্যারিফ নির্ধারণ করার জন্য বিটিআরসিকে বাধ্য করেন আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা। বিষয়টি আমলে নিয়ে ট্যারিফ কাঠামো পরীক্ষা-নীরিক্ষার কাজ শুরু করেছে বিটিআরসি।
মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, কল টার্মিনেশন রেট বিশ্বে যেসব দেশে কম, তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ। তাতে লাভ হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্যারিয়ারের, আর ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। লাভ পাচ্ছে না সরকার। এই ট্যারিফটা কতটুকু বৃদ্ধি করা যাবে, কিংবা আদৌ করা যাবে কি না তা যাছাই করা দরকার। যা আমরা শুরু করেছি।রাজস্ব ফাঁফি দেয়ার পাশাপাশি আইওএফ সিন্ডিকেট মোবাইল অপারেটরদেরও টাকা ফাঁকি দিয়েছে। বিটিআরসির কাছে এমন অভিযোগ জানিয়েছে জানিয়েছে অপারেটরা।
রবির করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের চিফ সাহেদুল আলম বলেন, আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরাম ইকো সিস্টেমে যে স্টেপটা করা হয়েছিল, সেটি কিন্তু বিটিআরসির আইএলডিটিএস পলিসি ছিল সেটিরই একটি ব্যত্যয় ছিল। সেক্ষেত্রে আমাদেরও একটি বড় ধরনের লোকসান হয়েছে প্রতি মাসে। আমরা সব অপারেটররা যদি বলি, সরকার প্রথম দিকে যদি ১শ’ থেকে দেড়শ কোটি টাকা লোকসান করে, তাহলে আমরাও ৭০-৮০ কোটি টাকা লোকসান করেছি প্রতি মাসে। আইওএফসহ টেলিকম খাতের সিন্ডকেটের দৌরাত্ম বন্ধ করতে আইএলডিটিএস পলিসি পর্যালোচনার পরামর্শ প্রযুক্তিবিদদের।
প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে যে ঘটনা ঘটেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই ক্ষেত্রেও প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমার মনে হয়, এখন একটা সময় এসেছে, আমাদের এই পলিসিগুলো.. আইএলডিটিএস পলিসি অনেক পুরনো, ২০০৮ সালের পলিসি আজকের বাস্তবতায় পুনর্বিবেচনা করার দাবি রাখে।