আনিসুর রহমান : ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন নওগাঁর নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন!’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই একটি কুচক্রী মহল এমন মিথ্যে, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন নিউজ প্রকাশ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন ডিসি মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। ইতিমধ্যেই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কুচক্রী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সকল প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলেও তিনি জানান।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল মোবাইল ফোনে জানান মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ডিসি হিসেবে তার পদায়ন হয়েছে। কেউ কেউ এটি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। চেকদাতা প্রতারক মির্জা সোবেদ আলী রাজার নামে এর আগেও ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১৯ তারিখে ঢাকার মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা হয়। প্রতারক সোবেদ আলী রাজা নিজেকে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব পরিচয় দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বদলির নামে টাকা নিতেন।
মামলার বাদী হয়েছেন ডিএমপির ডিবির এসআই যুবরাজ। প্রতারক সোবেদ আলী রাজা’র বিরুদ্ধে সচিবালয়ে অবৈধ ভাবে অনুপ্রবেশ ও প্রতারণার বিষয়ে আইনী প্রদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চলতি বছরের জানুয়ারি ২৫ তারিখে মোঃ খায়রুল আলম রফিক নামের এক ব্যাক্তি বাংলাদেশ সচিবালয়ের উপ-পুলিশ কমিশনার (সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগ) ও সচিব মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ এর কার্যালয় দুটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। তারপর স্বরাট্রমন্ত্রনালয় থেকে সোবেদ আলী রাজার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করতে ডিএমপির সাবেক কমিশনারকে নির্দেশ প্রদান করা হল্ওে তার বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ০১ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জননিরাপত্তা বিভাগকে বিষয়টি তদন্ত গ্রহণ করার নির্দেশনা প্রদান করেছে।
ডিসি আব্দুল আওয়াল বলেন, সংবাদে এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. জিয়া উদ্দিন স্যারের কথা বলা হয়েছে। স্যারের কবে পদায়ন হয়েছে সেটিও আমি জানি না। স্যারকে সামনা সামনি কোনো দিন দেখিনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সততা, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে অতীতের সুনাম দেখে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবার জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই সব কেন করা হচ্ছে, এটি আসলে বোঝা খুব মুশকিল। আমরা ৫১টি জেলায় জেলা প্রশাসক হিসেবে দীর্ঘ পরীক্ষার মাধ্যমে পদায়িত হয়েছি। আমার মনে হয়, বর্তমান সরকারের কাজগুলো যেন সঠিক ভাবে করতে না পারি, সেই অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে এসব প্রোপাগান্ডা ছাড়ানো হচ্ছে। আমি আশা করি, গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে; এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কিংবা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা হবে।
দ্রুতই তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন!’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সচিবালয় ও গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক কালবেলার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ডিসি নিয়োগের ঘটনায় আলোচনায় আসা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের (এপিডি) কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক উদ্ধার করা হয়। পদায়ন হওয়া এক জেলা প্রশাসকের পক্ষে ওই যুগ্ম সচিবকে চেকটি দেন এক ব্যবসায়ী। তবে কাঙ্খিত জেলায় পদায়ন না হওয়ায় চেকের বিপরীতে টাকা জমা দেননি ডিসি। অন্যদিকে সব কিছু ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চেকদাতা ওই ব্যবসায়ী।
বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। আব্দুল আউয়াল দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি পদায়িত হয়ে জেলা প্রশাসক হিসেবে নওগাঁয় যোগদান করেছেন।#