আতিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের ত্রিশালে সরকারি নজরুল কলেজ মার্কেটে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কার্যালয় ভাড়া দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা। এ নিয়ে বিভিন্ন দলের ভেতরে- বাইরে চলছে নানা সমালোচনা। এটিকে কেন্দ্র করে যেমন দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। কলেজ সূত্র জানায়, ত্রিশাল উপজেলা শহরে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘেঁষে বাসস্ট্যান্ড এলাকার নজরুল কলেজ’কে গত ৮ আগস্ট ২০১৮ সালে সরকারি ঘোষণা করা হয়। কলেজের প্রধান গেটের উত্তর- দক্ষিণ পাশে ৭০ টির মতো দোকান রয়েছে। উত্তর পাশের দোকান গুলো ভাড়া দিলে ও দক্ষিণ পাশের নিচতলায় ৭ টি দোকান ও দোতলায় জোরপূর্বক আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অফিস নির্মাণ করা হয়। দুই অফিসের ভাড়া নেওয়া হয় না। ভাড়া ফি করে দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা।
কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, কোনো ধরনের রেজুলেশন ছাড়াই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা দোকান তৈরি ও মার্কেট, হোটেল নির্মান করেছেন। নিচতলায় দোকান তৈরি শেষ হলে আওয়ামী লীগ নেতা’রা দোতলার পুরোটাই পার্টি অফিস বানিয়ে নিয়েছেন। বিএনপির নেতা’রা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় কলেজের আর ও অনেক সম্পত্তি রয়েছে। যে গুলো অধ্যক্ষের গাফিলতির কারণে বেদখল হয়ে গেছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষও বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধা পাওয়ায় কলেজের জমির কোনো খোঁজ খবর নেননি। কলেজের ইংরেজী প্রভাষক বজলুর রহমান বলেন, দোকান বরাদ্দ বাবদ বিভিন্ন সময়ে কলেজ ফান্ডে প্রায় কোটি টাকা জমা আছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা তার ইচ্ছে মত খরচ করেছেন। স্থানীয় স্বপন সরকার বলেন, কোনো রকম নিয়মের তোয়াক্কা না করে কলেজের সামনে দোকান ও পার্টি অফিস হয়েছে। ১৬ টি দোকানের মধ্যে ছয়টির মালিক’রা কলেজ ফান্ডে কিছু টাকা জমা রাখলে ও সবুজ ছায়া হোটেল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা মোটা অংকের টাকা নিয়ে হোটেল চালু রেখেছেন। বিএনপির নেতা সাজদুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অফিস তো দোতলায়। এ নিয়ে কিছু বললে ও সমস্যা। ম্যাডাম সব করেছে। তিনি একটা দুর্নীতিবাজ।
এ ব্যাপারে ত্রিশাল সরকারি নজরুল কলেজের ভারপাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা বলেন, কলেজের উন্নয়নে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। তাই কিছু মানুষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপ- প্রচার করছেন। বিএনপি নেতা আতিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকা কালে যা খুশি তাই করছে। কিন্তু সরকারি কলেজের জায়গায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অফিস কোনো ভাবে কাম্য নয়। আওয়ামী লীগের এসব কাজ শিক্ষা ব্যবস্থা’কে কলুষিত করছে। ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম- আহ্বায়ক মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, কলেজের জায়গায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে পার্টি অফিস করেছি। বিষয়টি সবাই জানে। এখানে দলীয় কর্মকাণ্ড হয়। এতে দোষের কিছু নেই। তবে যা করেছে ম্যাডামের সাথে কথা বলেই করেছি। ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ বলেন, কলেজ সরকারি হওয়ার পর যাওয়ার সময় পাইনি।কলেজ সম্পর্কে তেমন খোঁজ খবর নেয়া হয়নি। তবে কেউ সরকারি কলেজের জায়গা দখল করে ভোগ করতে পারবে না। উচ্ছেদ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগ রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী।
তার ভাই ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম- বিষয়ক সম্পাদক বায়েজিদ এবং গফরগাঁওয়ের আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী এমপি বাবেলের ফুফু এবং তার স্বামী আওয়ামী লীগের আমলে ফরিদপুর ও রাজবাড়ি জেলার সিভিল সার্জন ছিলেন। ডাঃ মাহবুবুর রহমান আওয়ামী লীগ পন্থী ডাক্তারদের নেতা ছিলেন। কলেজ মার্কেট “উপজেলা আ,লীগের অফিস” ভাড়া দিয়ে ক্ষমতার জুড়ে দোকান বরাদ্দের নামে কোটি কোটি টাকা হরিলুট, বিল ভাউচারের নামে লাখ লাখ টাকা আত্বসাত। কলেজের টাকা নিজের ব্যাংক হিসাবে জমা, আধিপত্য বিস্তার দীর্ঘদিনের। তিনি বলে বেড়ান তার ব্যাংক হিসাবে এখনও ৩ কোটি আছে।
কলেজের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী শফিকুল ইসলাম (দুলাল) বিগত কয়েক বছর আগে বাসা থেকে কলেজে আসার পথে কলেজ ফান্ডের ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা হারানো হয়েছে মর্মে তৎকালীন অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান’কে মৌখিক ভাবে জানান। এ বিষয়ে কোন তদন্ত কমিটি হয়নি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি ও করা হয়নি। ঐ টাকা অদ্যাবধি সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ কোন কিছু জানেন না বলে জানান, কলেজের বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে ডিডি মাউশি”র বরাবরে অভিযোগ দেওয়া হলে ও ভারপাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নব রেখা তার স্বজন’রা আওয়ামী লীগের এমপি ও জেলার নেতা হওয়ায় সকল অভিযোগ দামাচাপা দিয়ে রাখেন। তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ তদন্ত করতে মাউশির পরিচালক’কে নির্দেশদেন ডিডি। এবিষয়ে মাউশি’র ডিডি নেহাল আহমেদ জানান, একটি অভিযোগ পেয়েছি॥ তদন্তে প্রমান হলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।