• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

দুদকের অনুসন্ধানে চিহ্নিত জড়িত শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

অনলাইন ডেস্কঃ / ১৪ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

অনলাইন  ডেস্ক:  বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতিবিরোধী একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে শুধু ১০টি প্রতিষ্ঠান ও চার ব্যক্তিই আমেরিকা, লন্ডন, কানাডা, সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন ৮০ বিলিয়ন (আট হাজার কোটি) ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার ১১৯ টাকা ধরে)।দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সর্বপ্রথম ওই ১০টি প্রতিষ্ঠান ও চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশনে’ যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে অতিসম্প্রতি এই ‘হিটলিস্ট’ তৈরি করা হয়েছে।

নতুন কমিশন (দুদক চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার) দায়িত্ব গ্রহণের পরই পাচার হওয়া দেশগুলোতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানোসহ পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারের অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে ওই ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে।তবে পাচারকারীদের তালিকায় নাম থাকলেও দুদক যাদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম ‘অ্যাকশনে’ যাবে সেই ‘হিটলিস্টে’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নাম নেই। শুধু দেশের শীর্ষ পাচারকারীরাই এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তালিকায় স্থান পাওয়া শুধু ১০ প্রতিষ্ঠান ও চার ব্যক্তিই ৮০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছেন। পরে ওই তালিকায় আরো দুজন ব্যক্তির নাম যুক্ত হবে।

এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে সব পাচারকারীকেই আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদল কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছে। দেশ থেকে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে পারস্পরিক সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারসহ আইনগত সহায়তা চেয়ে অদ্যাবধি বিশ্বের ১২টি দেশে ৭১টি এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৭টির জবাব পাওয়া গেছে। ’

দুদকের টাকা পাচারের হিটলিস্টে যারা: বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এসটিএআরসহ অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে দুদক এই হিটলিস্ট তৈরি করেছে। হিটলিস্টে থাকা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা হলেন—ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রী রুখমিলা জামান, বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমানসহ বেক্সিমকো গ্রুপের অন্য সব মালিক, নাসা গ্রুপের মালিক ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সিকদার গ্রুপের পরিচালক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক দুই ভাই রন হক সিকদার ও রিক হক সিকদার, তাদের মা ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার, বোন ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক পারভীন হক শিকদার। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান ও তার স্ত্রী, তিন মেয়ে, চার ভাই ও ভাইদের সন্তান, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম, তার স্ত্রী আরজুদা করিম, ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম, মেহেদি হাসান ও মেয়ে জারিন করিম, জেমকন গ্রুপের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদের সন্তান কাজী আনিস আহেমদ, কাজী নাবিল আহমেদ ও কাজী ইনাম আহমেদ এবং রাজশাহীর নাবিল গ্রুপসহ এর চেয়ারম্যান জাহান বক্স মণ্ডল ও এমডি আমিনুল ইসলাম ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া হিটলিস্টে থাকা চার ব্যক্তি হলেন— সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান, বিএফআইইউয়ের সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও পদ্মা ব্যাংকের পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এদের কার্যক্রমের পরই এই হিটলিস্টে আরো দুজনের নাম যুক্ত হবে। তারা হলেন— বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

অর্থপাচারে শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান: দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১০০ জনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা সবাই রাজনৈতিক ব্যক্তি। তালিকায় রয়েছেন—আসাদুজ্জামান খান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, টিপু মুনশি, আনিসুল হক, তাজুল ইসলাম, মো. ফরিদুল হক খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, মো. জাহিদ আহসান রাসেল, আনোয়ার হোসেন, হাসানুল হক ইনু, শ ম রেজাউল করিম, জাহিদ মালেক, সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাধন চন্দ্র মজুমদার, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কামাল আহমেদ মজুমদার, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, নসরুল হামিদ, খালিদ মাহমুদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, মো. জাকির হোসেন, ইমরান আহমেদ ও মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি: গত ১ অক্টোবর থেকে অদ্যাবধি পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংস্থা দুদককে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এগুলো হলো—পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা এসটিএআর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক, ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) প্রভৃতি। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...