• মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

দুর্নীতি-লুটপাটের খবর উদ্ঘাটনে সাংবাদিকদের সক্ষমতা প্রমাণিত

---------- লেখক: সাঈদুর রহমান রিমনঃ / ১২৭ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪

———– লেখক: সাঈদুর রহমান রিমনঃ পত্রিকায় ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ প্রকাশের পর থেকেই দেশের সাংবাদিকদের সক্ষমতা কি হঠাৎ করেই বেড়ে গেল? এরপর থেকে প্রতিদিনই গণমাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটের কাহিনি ফাঁস হতে দেখা যাচ্ছে। এক বেনজীরকে কেন্দ্র করে অন্তত ২০ জন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার অর্থবিত্তের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে ইতোমধ্যেই। দুর্নীতিবাজরা চাকরিতে বহাল আছেন, নাকি অবসরে গেছেন- সেসব নিয়েও ভাবছেন না সাংবাদিকরা। দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের স্বরুপ উন্মোচন করে চলছেন বাধাহীনভাবে, অসীম সাহসে। ডিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিঞার বিত্ত বৈভবের বিবরণও উঠে এসেছে পত্রিকার পাতায়, টিভির পর্দায়। বেনজীরের চেয়েও বেশি সম্পদ বানিয়ে মিঞা বসে আছেন চুপটি মেরে। পুলিশ ছাড়া সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শুরু করে কাস্টমসের ঝাড়ুদারের কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার খবরে জনসাধারণের ভিমরি খাওয়ার অবস্থা। এসব খবর এতদিন খুব একটা চাউর হতে দেখা যায়নি।

একের পর এক ধনকুবের হয়ে ওঠা কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, এমপি, এমপি‘র স্ত্রীর কথা ধারাবাহিক ভাবে ফাঁস হওয়ার কথা তো কল্পনাও করা যেতো না। তাহলে হঠাৎ করেই কেন সাংবাদিকরা হাড়ির খবর বের করা শুরু করলেন? আসলে এসব খবর ছাড়াও দুর্নীতি লুটপাটের আরও আরও খবরা খবর সাংবাদিকদের কাছে ছিল, আছে। কিন্তু নিকট অতীতে লেখালেখির পর সরকারের নির্লিপ্ততার কারণেই সাংবাদিকরা সেসব প্রকাশে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ইদানীং বেনজীরের ঘটনার পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তড়িৎ গতিতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করায় সাংবাদিকরা কিছুটা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। ভাবছেন, দেশের স্বার্থে সরকার লুটেরা বিরোধী সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। নিজস্ব এ তৃপ্তিবোধ থেকেই লুটপাটের হাড়ির মুখ খুলতে শুরু করেছেন তারা। বিপদ, ঝুঁকি, মামলা হয়রানি থোরাই কেয়ার করে একের পর এক লুটেরার চেহারা তুলে ধরছেন সাংবাদিকরা।

এখন তো এক ছাগলকাণ্ড থেকেও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের হাজার কোটি টাকা সম্পদের তথ্য বের করে আনলেন সাংবাদিকরা। কাস্টমসের এক ঝাড়ুদার থেকে নৈশপ্রহরী হয়েও কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন! শিক্ষক মাহতাব হোসেন টিটু মাত্র সাত বছরে দুর্নীতি করে কয়েক কোটি টাকা জমিয়েছেন, বানিয়েছেন একাধিক বাড়ি। উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের নানা চিত্র। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এক দলিল লেখকও কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন বেরিয়ে এসেছে সে খবরও।শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ২০ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা লভ্যাংশ না দেওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংক আমানতের ১৩৫ কোটি টাকার কোনো দাবিদার নেই- বুঝে নিন লুটপাটের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছে ডিএসই। গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও পূবালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক। এদিকে শুধু প্রতারণাকে পুজি করেই ১৭ বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন একজন আব্দুল কাদের চৌধুরী। নিজের পরিচয় দিতেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে। ধনকুবের মুসা বিন শমসেরের আইনি পরামর্শকও ছিলেন দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া এই ব্যক্তি।পরিবার নিয়ে গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন ময়মনসিংহের ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাহমুদুল ইসলাম।

গতবছর সৌদি এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে তিনি দেশত্যাগ করেন। তবে কেন তিনি পালিয়ে গেলেন, সে সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারেননি। দায়িত্ব ফেলে থানার ওসির এভাবে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে বিব্রত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে তাঁরা অভিবাসন পুলিশ থেকে দরকারি কাগজপত্রও সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের সামনে কেউ কোনো কথা বলতে চাননি। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুম আহম্মদ ভুইয়ার সাথে কয়েক দফা মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেই রিসিভ করেননি। জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, অবসর জনিত কারনে চাকুরী ছেড়ে চলে গেছেন। তবে তার চাকুরী আরও ছিল। এখন তিনি কোথায় আছেন তা জানি না, অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে। এদিকে ময়মনসিংহের একজন আইনজীবী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুম আহম্মেদ ভূইয়ার অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেন। তিনি একবছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে করেছেন। দুদক তদন্ত করছে।

বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে ৪ এমপির প্রতিষ্ঠান ২৪ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে মাত্র সাতাইশ মাসে দুই ডিজিএম হাতিয়েছেন বিশ কোটি টাকা, গড়েছেন বিপুল সহায় সম্পদ। মাদারগঞ্জে হাজার কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়া সমবায় সমিতির পাশাপাশি সংসদ সদস্যের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কাহিনি ফাঁস হয়েছে এরইমধ্যে। ময়মনসিংহের প্রতিটি থানার ওসিদের ঘুসকাণ্ডে তাদের স্ত্রীরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে উঠেছেন। অপরদিকে এক পাবনা জেলার দশ বিড়ি কারখানা কীভাবে প্রতিবছর সরকারের সাতশ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তার বিবরণও জানছেন পাঠকরা। খাগড়াছড়িতে সাবেক মন্ত্রীর অঘোষিত ব্যবসায়িক পার্টনার হয়েই বাদাম বিক্রেতা অমল শত কোটি টাকার মালিক বনেছেন। নেতাদের লুটপাটের বিবরণে উঠে এসেছে সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও তার ভাই সমরের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের কাহিনি। নিউজের পর কালিয়াকৈরে কর্মরত সাব-রেজিস্টার দুর্নীতিবাজ মো. নুরুল আমিন তালুকদারের ১২ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে দুদক। শেরপুরের শ্রীবর্দী রেঞ্জের বনায়নেরই ১০ কোটি টাকার গরমিলের তথ্যও মিলেছে সংবাদ সূত্রে।

রাজবাড়ীর সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ মাহবুবুল হক ও তার সহধর্মিনী ময়মনসিংহের সরকারি নজরুল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বপ্নের আলাদিনের চেরাগ। ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্র প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ করে ৩২ শতাংশ জমির মধ্যে ছয়তলা বিশিষ্ট আলীশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। দিগারকান্দা এলাকায় জমি ক্রয় করেছেন আরও ৬ কোটি টাকার। সেখানে বাড়ি নির্মাণে খরচ করেছেন প্রায় ১০ কোটি টাকা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কক্সবাজারে পোস্টিং নিতেই দুই কোটি টাকা ঘুস দিচ্ছেন। কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়া সাতক্ষীরার প্রাননাথ দাশ অবশেষে ভারতীয় পুলিশ এর কাছে আটক হয়েছে। এপার থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে নির্বিঘ্নে কিভাবে পালিয়ে গেল প্রশ্ন উঠছে সেসব নিয়ে। এ রকম শত শত লুটপাটের কাহিনি বেরিয়ে এসেছে এবং প্রতিদিনই বের হচ্ছে।

আসলে তথ্য উদঘাটন আর সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা সক্ষমতা হারায়নি মোটেও, বরং সরকারের তরফ থেকে উৎসাহ যোগানের ঘাটতি ছিল বরাবরই। এখন সরকার সক্রিয় হতেই সাংবাদিকরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। তবে উৎসাহব্যঞ্জক খবরা খবরের পাশাপাশি হতাশার তথ্যও প্রকাশ হয়েছে। বলা হয়েছে, দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের সংবাদ প্রকাশ হতেই দুদকের কর্মকর্তারা তাদের কাছে হাজির হচ্ছেন তড়িৎ গতিতে। কিন্তু সবকিছু রেকর্ডপত্র ও রেজিস্টার্ডে নাকি উল্লেখ থাকছে না। এ কারণে যাদের লুটপাটের খবর তুলে ধরা হচ্ছে তাদের ব্যাপারে ফলোআপ রিপোর্ট হওয়াটাও জরুরি বলে মনে করছেন পাঠক সমাজ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...