উজ্জ্বল কুমার সরকারঃ গত তিন/ চার বছর আগেও পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় এ সোনালি আঁশ কৃষকের গলার ‘ফাঁস’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাজারে পাটের দরপতন হওয়ায় পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন উপজেলার কৃষকরা। গত দুই বছর আগে থেকে বাজেরে পাটের দাম ভালো থাকায় ও বর্তমানে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়ায় পাট চাষে আবারো সুদিন ফিরে এসেছে।
আর এরি ধারাবাহিকতায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় এবছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পাট চাষ হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পাট চাষ হয়নি। আর এই পাট চাষে আগ্রহ বাড়াতে চাষীদের সরকারিভাবে প্রণোদনাও দেয়া হয়েছে। এতে করে পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষীদের। কৃষকরা এবছরও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় আগামী বছর পাটের আবাদ আর বাড়বে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এই উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে ছিলো ১৫ শ ৮০ হেক্টর। আর এ বছর আবহাওয়া ভালো না থাকায় অর্জিত হয়েছে প্রায় ১৩শ ৫০ হেক্টর। এবং কৃষি অফিস থেকে উপজেলার ৫৫০ জন কৃষককে ১ কেজি করে পাটের বীজ প্রণোদনা হিসাবে দেওয়া হয়েছে। এদিকে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং পাট সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরে এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ২৫০০ জন পাট চাষীকে তিন কেজি টিএসপি, তিন কেজি পটাশ, ছয় কেজি ইউরিয়া এবং প্রতি বিঘায় এক কেজি পাটেরবীজ প্রদান করা হয় এবং পাট চাষে চাষীদের আগ্রহ বাড়াতে উপজেলার ১৫০ জন পাটচাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
উপজেলার পাটচাষী রবিউল জানান, এক যুগ ধরে তিনি ২ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে আসছেন। কয়েক বছর আগে বাজারে পাটের দরপতন হওয়ায় গত ১৮,১৯,২০ ও ২১ ইং সাল পর্যন্ত পাটের আবাদ করেননি। গত ২০২১ ইং সালে পাট চাষ করে অনেক কৃষকে লাভবান হতে দেখে আবারো তিনি ৩ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ প্রতি বছর করেছেন। পাট অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে প্রণোদনা হিসাবে তিনি সার ও বীজ পেয়েছেন। এবছর বাজারে পাটের দাম ভালো পেয়েছি। তাই আগামীতে আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করবো।
তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে প্রণোদনা দিলে প্রতি বছরই পাট চাষ করবেন বলে জানান।বদলগাছী উপজেলার পাটচাষী তারিকুল ইসলাম জানান, গত বছর চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। এ বছর ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করেছেন। বদলগাছী সদর ইউনিয়নের জিধিরপুর গ্রামের কৃষক রশিদ বলেন, বর্তমান বাজারে ধানের পাশাপাশি পাটের দামও অনেক বেশী এবং অনেক কম খরচে পাট চাষ করা যায়। ফলে কৃষকরা পাট চাষে বেশী আগ্রহী হয়ে পড়ছে।
কোলা ইউনিয়নের কৃষক দোলন, জলিল, রানাসহ অনেকে বলেন বদলগাছী কৃষি অফিস ও উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তার প্রচেষ্টায় এলাকার কৃষকদের পাট চাষ করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করন সভা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় এলাকায় পাট চাষিদের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। বদলগাছী পাট অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা সৌরভ লাবণ্য শীল বলেন, আমি এই উপজেলায় কয়েকদিন আগে যোগদান করেছি। তাই এতো কিছু জানিনা তবে কাগজ পত্রে দেখছি পাট চাষে চাষীদের আগ্রহ বাড়াতে উপজেলার ১৫০ জন পাটচাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেয়া হয়েছে। তবে আগামীতে আরো বেশি জমিতে পাটের চাষ করার জন্য আমি এলাকার কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করবো।
বদলগাছী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলেন, পাট চাষাবাদে এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এলাকার কৃষকদের পাট চাষে উদ্ভুদ্ধ করার জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে ব্যাপক প্রচার -প্রচারণা চালানো হয়েছে। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় লক্ষ্য মাত্রার থেকে পাট চাষবাদ কম হয়েছে। এবছর পাটের দাম বাজারে ভালো থাকায় কৃষকদের মুখে হাঁসি ফুটেছে। তবে আগামী বছর আবহাওয়া ভালো থাকলে পাট চাষ অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।