• শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন

শ্রীনগরে অবৈধ ধরিত্রী হাউজিং প্রকল্পের বিজ্ঞাপন

মোহাম্মদ জাকির লস্করঃ / ৩৭ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৪

মোহাম্মদ জাকির লস্করঃ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার হাঁসাড়ায় হাউজিং ধরিত্রী প্রপার্টিজ লি: অবৈধ দখলের মহোৎসব চলছে। ভূমিদস্যু’রা দখলে ড্রেজার ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে কৃষি ও সরকারি খাসজমিসহ খাল, জলাশয়, পুকুর ভরাট করছে। চার- দিকের খাল দিয়ে পানি আসতে না পারায় বিলের মৎস্য ও শস্যভান্ডার পুরোপুরি হুমকিতে পড়েছে। ছোট বড় খাল, জলাশয়, পুকুর, ডাঙা, ভরাটে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার কৃষকসহ স্থানীয় মানুষ। কৃষি জমি ভরাট করে ভূমিদুস্যু’রা গড়ে তুলেছে আবাসনের নামে চটকদার অবৈধ হাউজিং প্রকল্পের বিজ্ঞাপন। এর ফলে দেশের কৃষি উৎপাদনের বিরাট একটি অংশ দেশের কৃষি খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।

বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমি কিনছে হাউজিং কোম্পানি গুলো। লোভ সামলাতে না পেরে কৃষিজমি এমনকি ঘরবাড়ি বিক্রি করছে স্থানীয়’রা। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বিলে আবাসনের নামে বালু ও মাটি ভরাট, স্থাপনা নির্মাণ করায় ধ্বংসের পথে জীব- বৈচিত্র।ভূমিদস্যু নামের শকুনের নখে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বিল। এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণের শুরুতেই ভূমিদস্যুদের শকুনি দৃষ্টি পড়ে বিলের দিকে। হাউজিংয়ের নামের ভূমিদস্যু’রা বিল ভরাট করছে একের পর এক।নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট সদস্যরা অবৈধ ড্রেজার ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে বালু ভরাট। ভূমিদস্যুদের ঠেকাতে বিলে আবাসনের নামে বালি ও মাটি ভরাট, স্থাপনা নির্মাণ এবং দখল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত ১৬ আগস্ট ২০২২ সালে হাইকোর্ট এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালকের (এনফোর্সমেন্ট) প্রতি এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।একই সঙ্গে ২০১০-২২ সাল পর্যন্ত সময়ের বিলের স্যাটেলাইট এরিয়াল ম্যাপ সহ তিন মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা এখন ডিপ ফ্রিজে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়’রা। জানতে চাইলে, পরিবেশ অধিদফতর, মুন্সীগঞ্জ উপ- পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিলে এ পর্যন্ত কোনো আবাসন প্রকল্পের অনুমতি আমরা দেইনি।অন্য গুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ওই সময় কৃষক’রা প্রচন্ডভাবে তাদের কয়েক প্রজন্মের পৈত্রিক বিলের জমি আঁকড়ে ধরেছিল, তারাই এখন ভূমিদস্যুদের আবাসন কোম্পানির আর্থিক সুবিধার প্রস্তাবে প্রলুব্ধ হচ্ছেন। উচ্চমূল্যের প্রতিশ্রুতিতে প্রলুব্ধ হয়ে তারা এখন টাকার লোভে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে নিচ্ছেন। এতে তাদের অজান্তেই বিলের পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে।গোটা বিল ভূমিদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। অবশ্য যারা জমি বিক্রি করতে চাচ্ছেন না তাদের নানা ভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে এবং আশপাশের জমি ক্রয় করে তাদের জমি বিক্রিতে বাধ্য করছেন। স্থানীয় কৃষক’রা জানান, যুরকরে জমি নিয়ে যাচ্ছে ধরিত্রী হাউজিং কোম্পানী। এলাকার আ.লীগের নেতা ওবায়দুল শেখ, অপু সারোয়ার, আবু বক্কর, বাবুল শেখ, হৃদয় সহ আরো অনেকে এই প্রকল্পের সাথে জরিত।

সরেজমিন ঘুরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ঢাকা টু মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, স্বপ্নের পদ্মাসেতু ও রেলওয়ে নির্মাণে এই অঞ্চলের জমির মুল্য কয়েক গুন বেড়ে গেছে। ভূমিদস্যু’রা বেশি দামে জমি ক্রয় করে গড়ে তুলেছেন ছোট বড় শতাধিক হাউজিং কোম্পানির অপরিকল্পিত নগরায়ন।বিলে গড়ে তুলেছে ধরিত্রী এবং এক্সপ্রেসওয়ের পূর্ব পাশে ঠিকানা, প্রিমিয়াম ভ্যালি, কৃষ্ণচূড়া নামে পরিবেশের ছাড়পত্রহীন নামে-বেনামে অর্ধশতাধিক হাউজিং কোম্পানি।

অথচ এখানকার তিন- চতুর্থাংশ মানুষ সরাসরি কৃষি কাজের সাথে জড়িত। বর্তমানে কৃষি জমি ভরাট করে অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প ও নগরায়নের ফলে ক্রমশ কমছে উপজেলার এসব আবাদি জমির পরিমাণ।অনেকেই বলে থাকেন- কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার পেছনে জন সংখ্যা বৃদ্ধি দায়ী। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য আবাদি জমি অকৃষিতে পরিণত হচ্ছে। এভাবে কৃষি জমি কমতে থাকলে ৬৮ শতাংশ মানুষের জীবন- জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়বে।

এলাকার লোকজন মনে করেন, এভাবে যদি আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যেতে থাকে এবং কৃষি জমি অনাবাদি হয়, তবে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগ জনক বাস্তবতা’কে স্পষ্ট করে- যা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। বিভিন্ন কোম্পানি প্রায় সারাদেশেই শত শত বিঘা জমি কিনছে। এতে কৃষক’রা ভূমিচ্যুত হচ্ছে। কোম্পানি গুলো প্রথম দিকে কৃষি কাজের নাম করে কেনা জমিতে গাছপালা রোপণ বা বপন করে। পরে জমিটিতে মাটি ভরাট করে অন্য কাজে লাগায়। এভাবে চলতে থাকলে বিল তার প্রকৃত চরিত্র হারিয়ে কংক্রিটের আবাস ভূমি হয়ে যাবে।

কথা হয় জমির মালিক মো. সাঈদুর রহমানের সাথে তিনি বলেন, মৌজা হাঁসাড়া, জেল নং ১৪, আর এস দাগ ৪৯৬৫, ৪৯৮১, ৪৯৮৬, ২৬২৫, এস,এ দাগ ৪৯৩৪ খতিয়ান ৯৬১। জমি ধরিত্রী কোম্পানি জোর করে দখল করে নিয়ে গেছে।
সরেজমিনে বিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে ভূমিদস্যু’রা স্থানীয় কৃষকদের লোভ দেখিয়ে তাদের কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিশালাকৃতির স্তুপ রেখে বর্ষা মৌসুমে শত শত বড় ট্রলার যোগে দেশের বিভিন্ন ইট ভাটা ও ভাড়াবাড়ীতে নিয়ে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছি এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

জানতে চাইলে, শ্রীনগর উপজেলা নির্বহী অফিসার বলেন, ইতিমধ্যে আমরা অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ড্রেজার গুলোর সংযোগ বিছিন্ন করেছি এবং কিছু কিছু ড্রেজার মালিকদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করছি। বাকী গুলোর খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।এদিকে বিলে আবাসনের নামে বালি ও মাটি ভরাট, স্থাপনা নির্মাণ এবং অবিলম্বে দখল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের (এনফোর্সমেন্ট) প্রতি এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গত ১৪ আগস্ট মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক- আল- জলিলের বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।শুনানি শেষে রুলে বিল সংরক্ষণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং বিলে অবৈধ দখল, ভরাট, স্থাপনা অপসারণ ও বিলটি সংরক্ষণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

পরিবেশ সচিব, গণপূর্ত সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহা- পরিচালক, পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট), মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, শ্রীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।অন্য দিকে ভূমিদস্যু’রা রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বিলের কিছু অংশ অধিগ্রহণ করেছে।আইন লংঘন করে সে ফসলি জমিতে বালি দিয়ে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। কিন্তু প্রশাসন সব জেনেও এ ধরনের বেআইনি কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়।

ধরিত্রী কোম্পানির ম্যানেজার আসাদুল ইসলাম সৌরব বলেন, আমাদের সকল কাগজপত্র আছে। আপনি অফিসে আসনে। শাহিনের জমি দখলের বিয়ষ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকের সাথে আবলতাবল কথা বলেন। আমি সাঈদুর রহমান শাহিন কে চিনি না।ধরিত্রী কোম্পানির সিইও এ এইচ আতাউর রহমান রেজা বলেন, ফোনে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল নম্বর টি বন্ধ পাওয়া যায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...