• বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

সাভার প্রেসক্লাবের রাহুমুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: / ১৪ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দীর্ঘ প্রতীক্ষা, অনেক ত্যাগ আর সম্মান জলাঞ্জলির পর রাহুমুক্ত হলো সাভার প্রেসক্লাব। রাজধানী উপকণ্ঠের মর্যাদাবান সাংবাদিকদের এ প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর ধরে কুক্ষিগত ছিল। কুক্ষিগত ছিল বিকৃত মানসিকতার, ইতিহাস মুছে ফেলার, রাজনীতিতে আজ্ঞাবহ থাকার এবং একচ্ছত্র নেতৃত্ব কায়েম করার শক্তিগুলোর কাছে। বিকৃত শ্রেণীর ধারকরাই দফায় দফায় নেতৃত্বে এসে প্রেসক্লাবের মূল বৈশিষ্ট্য ধ্বংস করেছেন। আবার নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে তারাই গ্রুপিং করেছেন, দল উপদলে বিভক্ত করেছেন সাংবাদিকদের। কেউ গড়েছেন বাসস্ট্যান্ড গ্রুপ, কেউ বানিয়েছেন বাজার গ্রুপ, টিভি গ্রুপ, পত্রিকা গ্রুপ, হাসপাতাল গ্রুপ। কেউ কেউ আবার নিজের নামেই গ্রুপের নামকরণ করেছেন এবং সে গ্রুপেও ৫/৬ জন করে সাংবাদিক যুক্ত হয়েছেন। ভেবে দেখেন কতোটা নিম্নমানের ব্যক্তিত্বহীনরা এহেন কাজে লিপ্ত হয়।

মূলত একদিকে প্রেসক্লাব কথিত নির্বাচন ও আইনি ফাঁদ তৈরির মাধ্যমে বছরের পর বছর একই চক্রের কাছে পৈতৃক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বিকল্প মত পথ লালন করতে বানানো হয়েছে এসব গ্রুপিং। উভয় ক্ষেত্রেই প্রেসক্লাবের অস্তিত্বকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা হয়েছে। তাছাড়া প্রেসক্লাবকে অস্তিত্বহীন বানানো সংক্রান্ত পাঁয়তারার সূত্রপাত তো ঘটানো হয়েছে সেই নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়েই। যখন প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার চারটি বছর গায়েব করে মূল উদ্যোক্তা’ দের অস্বীকার করার ফন্দি এঁকেছে। যারা পিতৃত্বহীন সন্তান সেজেছেন, যারা সে সন্তানদের জমজমাট কদর করেছেন – তাদের কারো মনে একটিবারের জন্যও প্রশ্ন উঠেনি। অথচ উভয়েই সর্বোচ্চ সচেতন দাবিদার মানুষ, মর্যাদাবান- সাংবাদিক। প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যারা ছিলেন তাদের কয়েকজন এখনও সাভার প্রেসক্লাবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। দীর্ঘদিন কোণঠাসা থাকাবস্থায় অতীত প্রকাশে ভয় পান, এড়িয়ে যান – এটাই সাভাবিক। তবে ৩৮টি বছর ধরেই কেউ কোণঠাসা ছিলেন কি না সেসব আর জানতে চাই না।

রাহুমুক্তির এই দিনে কর্দমাক্ত অতীত (!) রোমন্থন করে কারো বিরক্তির কারণ হতে চাই না, বিনষ্ট করতে চাই না উপহার পাওয়া আনন্দও। আজ যারা বিজয়ী হয়ে নেতৃত্বে এলেন – প্রতিষ্ঠার সময়কালের বিবেচনায় তাদেরকে নতুন প্রজন্ম হিসেবেই আখ্যায়িত করতে চাই। তাদের হাতেই স্বপ্ন সাধের সাভার প্রেসক্লাবের বিনির্মাণ দেখতে চাই। এই বিনির্মাণ শুধু প্রেসক্লাব বিল্ডিং কিংবা দেয়ালের নয়। প্রেসক্লাব গঠন, পরিচালনা, নেতৃত্ব বিকাশের বিনির্মাণ, অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের মানসিকতার বিনির্মাণ। সাংবাদিক হয়েও যে সদস্যরা নিজেদের দ্বারা গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারে না, ভোটবাক্স কে পর্দা দিয়ে ঢাকা না ঢাকা নিয়েও সন্দেহ, অবিশ্বাসের প্রশ্ন তোলে, প্রতিষ্ঠাতা অতিথিদের ‘প্রার্থী সমর্থক’ মনে করে – তাদের মানসিক চিকিৎসা সর্বাগ্রে জরুরি।

বিনির্মাণ করতে হবে প্রেসক্লাব নেতৃত্ব ও ক্ষমতার জায়গাতেও। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে বিজিত দেরও নেতৃত্বের জায়গায় নিয়ে আসুন। গতানুগতিক শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্ভর সংগঠন গড়বেন না, গোটা নেতৃত্বকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করুন। এক স্তরকে আরেক স্তরের কাছে দায়বদ্ধ রাখুন। এমন বিনির্মাণ আপনাদের শত বছর স্মরণীয় করে রাখবে। নিজেদের মধ্যে কোনো বিরোধ, কোনো শত্রুতা নয় – বিনয়ী ভালবাসায় সব সমাধানের পথ ধরতে হবে। সাভারের মতো জায়গায় মাত্র ৫৪ সদস্যের প্রেসক্লাব। নিশ্চয়ই সদস্য যোগ্য আরো দ্বিগুণ সাংবাদিককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এগুলোই কুক্ষিগত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। এমন পরিস্থিতি তেই একাধিক প্রেসক্লাব, সংগঠনের জন্ম হয়। অবিলম্বে সদস্য গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ব্যক্তিগত অফিস খুলে আলাদা আলাদা সাংবাদিক আড্ডা দেন, তাদেরকে প্রেসক্লাবমুখী করুন। আলাদা আড্ডা থেকেই দল- উপদল গড়ে উঠে। এটা রোধ হওয়া উচিত।

মনে রাখতে হবে, নেতৃত্ব মানেই হামবড়া কেউকেটা নন। ভালো কিছু করতে যে কোনো সদস্যের কাছে ছুটে যাওয়া, অনুনয় বিনয় করা – আপনাকে ছোট বানায় না, মহান করে তোলে। নির্বাচন চলাকালে সভাপতি প্রার্থী সাকিব যখন আরেক সভাপতি প্রার্থী নাজমুলকে টেনে নিয়ে নিজের প্যাকেট থেকে খাবার খেতে বাধ্য করে, তখন তা সব সদস্যদের আন্দোলিত করে, সহানুভূতিতা শেখায়। আবার বিজয়ী হয়েই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিজিতদের কাছে ছুটে গেছেন, তাদের সহযোগিতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন – এগুলো চোখ জুড়ানো দৃশ্য। ব্যক্তি নাজমুল, ব্যক্তি জিয়া …. সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমূল বদলে যান, দেখিয়ে দিন সাংবাদিকদের নেতা হওয়া সহজ নয়, অনেক বেশি ত্যাগের। (এসব বিনির্মাণের অভিমত সকল বিরোধপূর্ণ প্রেসক্লাব, সংগঠনের জন্যই প্রযোজ্য)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...