• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের বিভাগীয় সমাবেশ নিঃ স্বার্থ সমাজ কল্যাণ সংগঠনের নব নির্বাচিত কমিটির পরিচিতি ও মাদক বিরোধী সভা শেরপুরে হাসপাতালের সেই তত্ত্বাবধায়কের অপসারণ দাবীতে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস আমরা এক পরিবার, কেউ কারো শত্রু হবো না: প্রধান উপদেষ্টা সীমান্তের বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্যের ভাতিজা ইয়াবাসহ আটক আওয়ামীপন্থী পুলিশ কর্মকর্তাদের নামের তালিকায় ময়মনসিংহের ওসি সফিকুল ইসলাম ভাড়া বাড়িতে কলেজ ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ, মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা যুবদল নেতা হত্যা মামলায় পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী কারাগারে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ

২১ কোটি টাকার টেন্ডারে ৪ কোটি টাকার ঘুষ

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ / ২৩৯ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার লুটপাটের ছকের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ‘কলুর বলদ’ বানিয়েছেন। তার লুটপাটের ছক ছিল সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে! হঠাৎ এক উড়ো চিঠিতে জগৎ চাঁদ মালাকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়। তিনি ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ’-এর প্রকল্প থেকে ৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা লুটপাটের মহাপরিকল্পনাকারী! এক প্রকল্প থেকেই তিনি প্রায় সাড়ে ৪২ কোটি লুটপাটের ধান্দা করেছিলেন! শেষমেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্পেসিফিকেশন কমিটির তদন্তে বিষয় টি বেরিয়ে আসে।

অভিযোগ উঠেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার লুটপাটের ছকের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ‘কলুর বলদ’ বানিয়েছেন। তার লুটপাটের ছক ছিল সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে! হঠাৎ এক উড়ো চিঠিতে জগৎ চাঁদ মালাকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়। তিনি ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ’-এর প্রকল্প থেকে ৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা লুটপাটের মহাপরিকল্পনাকারী! এক প্রকল্প থেকেই তিনি প্রায় সাড়ে ৪২ কোটি লুটপাটের ধান্দা করে ছিলেন! শেষমেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্পেসিফিকেশন কমিটির তদন্তে বিষয় টি বেরিয়ে আসে।

জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ প্রকল্প টি ২০২১ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নে কথা। এ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি থেকে শুরু করে প্রকল্প অনুমোদন পর্যন্ত ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জগৎ চাঁদ মালাকার। ফলে প্রকল্পের প্রত্যেকটি খাতের ব্যয় তার হাতেই সন্নিবেশিত হয় ডিপিপিতে। এ সুযোগে প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের মহাপরিকল্পনা করেন তিনি।

তিনি প্রকল্পের ডিপিপিতে ল্যাবরেটরি স্থাপনের জন্য ১১১ কোটি টাকার সংস্থান রেখেছিলেন। জগৎ চাঁদ মালাকার বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাত্র ৬৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনতে ১১১ কোটি টাকার সংস্থান চান ডিপিপিতে। পরিকল্পনা কমিশন সেই ডিপিপি অনুমোদন করার পর বর্তমানে প্রকল্প টি বাস্তবায়নের মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে। মাত্র ৬৯ কোটি টাকায় ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ’ প্রকল্প টি বাস্তবায়ন করা গেলেও জগৎ চাঁদ প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশন থেকে ১১১ কোটি টাকায় পাস করিয়ে নেন। প্রকল্পটির যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অতিরিক্ত ৪২ কোটি টাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলোকে সঙ্গে নিয়ে লুটপাটের পরিকল্পনা ছিল তার।

কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ প্রকল্প টি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার এখানে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। গত অর্থবছরে (২০২১-২০২২) তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ছয়টি রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) করে ৪১ লাখ ৬০ হাজার ৬০৪ টাকা বিল করেছেন। কোটেশন গুলোর অধিকাংশ মালামাল গ্রহণ না করে ৩০ লাখ টাকা ঠিকাদারের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন পিডি জগৎ চাঁদ।লুটপাটের ধান্দায় প্রকল্প টি অনুমোদনের পরই ২০২২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে যন্ত্রপাতি ক্রয় করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-২ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ এনামুল হককে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের স্পেসিফিকেশন তদন্ত কমিটি গঠন করে। প্রকল্পটির অনিয়ম ও দুর্নীতির লিখিত অভিযোগসহ স্পেসিফিকেশন কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা পোস্টের কাছে এসেছে।

চার কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের বিবরণে যা বলা হয়েছে,

বিডিসি ক্রাইম বার্তার কাছে আসা অভিযোগে জগৎ চাঁদ মালাকারের চার কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের বিবরণ বলা হয়েছে- কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার এখানে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। গত অর্থবছরে (২০২১-২০২২) তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ছয়টি রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) করে ৪১ লাখ ৬০ হাজার ৬০৪ টাকা বিল করেছেন। কোটেশন গুলোর অধিকাংশ মালামাল গ্রহণ না করে ৩০ লাখ টাকা ঠিকাদারের নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন পিডি জগৎ চাঁদ।

এছাড়া ১১ টি ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে চার লাখ ১১ হাজার ২৩৬ টাকা উত্তোলন করে কোনো জিনিসপত্র ক্রয় না করে প্রকল্পের অ্যাকাউন্টে ক্যাশ করে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন। হিসাব নং- জগৎ চাঁদ মালাকার, অ্যাকাউন্ট নং- ৩৫৪৭১০১০১০৬৩৯৯৮৬ পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, খামারবাড়ি শাখা। ব্যাংকের হিসাব বিবরণী উত্তোলন করলে এর প্রমাণ মিলবে। নয়টি ইজিপিতে সরবরাহ ও সেবা টেন্ডার হয়েছে যার মধ্যে দুটি কনস্ট্রাকশন এবং সাতটি সরবরাহ। সরবরাহের মধ্যে ল্যাবরেটরি কেমিক্যাল কন্সুমাবলস- এ কার্যাদেশ ছিল ২২ লাখ ৫৬ হাজার ২৮০ টাকা। যা মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনাল কে কার্যাদেশ প্রদান করে। এই কেমিক্যাল সামান্য পরিমাণ গ্রহণ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যা অডিট আপত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কনস্ট্রাকশনের দুটি কাজের প্রদেয় বিলের ১০ শতাংশ হারে প্রায় ২০ লাখ টাকা প্রকল্প পরিচালক গ্রহণ করেছেন।

এর বাইরে সাতটি সরবরাহ টেন্ডারের মোট পরিমাণ ছিল এক কোটি ৩৩ লাখ চার হাজার ৬৪৯ টাকা। এর মধ্যে ছিল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইলেকট্রিক ইকুইপমেন্ট, ফার্নিচার,ফটোকপিয়ার, প্রজেক্টর ইত্যাদি। এর মধ্যে অনেক মালামাল গ্রহণ না করে ঠিকাদারের নিকট ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন পিডি। প্রকল্পে কাজ পেতে আমার কাছ থেকেও ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইকবাল হোসেনের মাধ্যমে আমি টাকা দিয়েছি। পিডি সব অর্থনৈতিক লেনদেন মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিকের মাধ্যমেই করে থাকেন।

এসএমজি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক মো. সোহেল
মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালকে দুই কোটি টাকার কাজ প্রদান করে এর মালিক ইকবালের নিকট থেকে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া আইএসও সনদ অনুযায়ী বাছাই করার কথা থাকলেও ইহান এন্টারপ্রাইজের আইএসও সনদ এবং টেন্ডারের চাহিদা মতো অধিকাংশ কাগজপত্র না থাকার পরও ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ প্রদান করেন জগৎ চাঁদ। ইহান এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে যে উদ্ধৃত দরের ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ হিসাবে ইহান এন্টারপ্রাইজ পাবে। যা মূল্যায়ন কমিটি এবং মহাপরিচালক চূড়ান্ত অনুমোদন করেছেন। অথচ প্রকল্প পরিচালক ইহান এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ১২.৫০ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ প্রদান করেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

গত বছরের ২৪ জুলাই টেন্ডার আইডি নং-৭১৪১৩০, যার মূল্য ছিল সাত কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ টেন্ডার মাল্টিবিজ কে দেওয়ার জন্য অত্যন্ত গোপনীয় রেট মাল্টিবিজকে প্রদান করেন পিডি। এছাড়া এসএমজি ইঞ্জিনিয়ারিংকে বিভিন্ন কাজ দিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। যা এসএমজির মালিক মো. সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এর সত্যতা মিলবে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

পিডি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফার্নিচারের একটি টেন্ডার করেন। যার আইডি নং-৭৫০৫১৬। টেন্ডারে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহণ করে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা এমএআরএসকে তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকায় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এ টেন্ডার পেতে মোট ৫৫ লাখ টাকা প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে চুক্তি হয়। যার মধ্যে ৩০ লাখ টাকা কার্যাদেশ প্রদানের সময় পিডি নেন এবং বাকি টাকা বিল পাওয়ার পর পরিশোধ করবেন বলে চুক্তি করা হয়।

চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের গত ৩০ নভেম্বর প্রকিউরমেন্ট অব জেনারেটর অ্যান্ড সেন্ট্রাল এয়ার-কন্ডিশন ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহের জন্য দরপত্র প্রকাশিত হয়। যার আইডি নং-৭৫৭৯৫৭। এ দরপত্রে মোট টাকার পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এখানে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে ৭০ লাখ টাকার ঘুষ প্রদানের চুক্তিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ক্লোটেক কর্পোরেশনকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। তাদের উদ্ধৃত দর ছিল পাঁচ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

কারা এসব কথা বলেন, আপনি তাদের আমার কাছে নিয়ে আসেন। আমি কেন জগৎ চাঁদ মালাকারের মিডিয়া হিসেবে কাজ করব? আপনি মিথ্যা কথা শুনে যদি লিখতে চান, লেখেন। আমার প্রতিকারের সুযোগ থাকলে করবো
মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইকবাল হোসেন
এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে সিসি ক্যামেরা ক্রয়ের ৭০ লাখ টাকার টেন্ডার হয়। এখানেও ২০ লাখ টাকা প্রকল্প পরিচালক নিয়ে কার্যাদেশ প্রদান করেন।

দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিবরণীতে বলা হয়েছে, পিডি প্রকল্পটিকে একটি লুটপাটের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত মোট টেন্ডার করেছেন প্রায় ২১ কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রকল্প পরিচালক বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকট থেকে ঘুষ নিয়েছে চার কোটি ১১ লাখ টাকা। অতএব, অত্র প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক দুর্নীতিবাজ জগৎ চাঁদ মালাকারের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

এ প্রসঙ্গে এসএমজি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক মো. সোহেল বলেন, ‘এ প্রকল্পে কাজ পেতে আমার কাছ থেকেও ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইকবাল হোসেনের মাধ্যমে আমি টাকা দিয়েছি। পিডি সব অর্থনৈতিক লেনদেন মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিকের মাধ্যমে করে থাকেন।’তবে, মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইকবাল হোসেন এসএমজি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক মো. সোহেলের অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে বলেন, ‘কারা এসব কথা বলেন, আপনি তাদের আমার কাছে নিয়ে আসেন। আমি কেন জগৎ চাঁদ মালাকারের মিডিয়া হিসেবে কাজ করব? আপনি মিথ্যা কথা শুনে যদি লিখতে চান, লেখেন। আমার প্রতিকারের সুযোগ থাকলে করব।’

‘আমরা যখন ঠিকাদারি করি তখন আমরা দুই বা তিন পারসেন্ট কমিশন পিডিকে দেই। কারণ, প্রকল্পের অডিট কি উনি পকেটের টাকায় করবেন? আমরা ঠিকাদাররা অডিট বাবদ টাকা দেই। এটা হলো অনির্ধারিত, আনসিন (অদৃশ্য)। অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য প্রত্যেকেই তিন পারসেন্ট টাকা নেয়। কারণ, টাকা ছাড়া অডিট হয় না। অডিটের জন্য ডিপিপিতে কোনো বরাদ্দ থাকে না। বাংলাদেশে যত পিডি আছেন, সবাইকে তিন পারসেন্ট দিতে হয়। এটা অঘোষিত। যেমন- এজি অফিসে চেক আনতে গেলে তাদের এক পারসেন্ট কমিশন দিতে হয়। মূলত, ঠিকাদারদেরই অডিট ও এজি অফিসের কমিশনের টাকা দিতে হয় পিডিদের।’

অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন

প্রকল্পের নানা অনিয়ম তদন্তে কৃষি মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-২ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ এনামুল হককে সভাপতি করে সদস্য করা হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সুলতান আহমেদ, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক ডা. আবু সাঈদ মো. আব্দুল হান্নান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হাবিবুল বারি সজিব এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের অ্যাসিক্রেডিটেড ল্যাবরেটরি স্পেশালিস্ট ড. মুফতিখার আহমেদকে। তদন্ত কমিটি গত ৩১ জানুয়ারি কৃষি মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

কমিটির উল্লেখযোগ্য কিছু পর্যবেক্ষণ

১. বর্তমান বাজারদর বিবেচনা কমিটির সুপারিশসমূহ কার্যকর হলে প্রকল্পের ডিপিপিতে ১০টি ল্যাবের জন্য প্রাক্কলিত মূল্য ১১১ কোটি ৫৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকার বিপরীতে যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি ক্রয় খাতে উপযুক্ততা নির্ধারণ সহ যন্ত্রের স্পেসিফিকেশন ও বাজার দর বিচার বিশ্লেষণ পূর্বক প্রায় ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য যে, এতে ডিপিপি তে উল্লিখিত প্রাক্কলিত মূল্য প্রায় ৪২ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকার সাশ্রয় হবে।

২. ল্যাব ওয়ার্ক সম্পর্কে খুব কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকের মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়েছে এবং স্পেসিফিকেশন তৈরিতে কোনো ইকুইপমেন্ট ব্রশিউরকে হুবহু কপি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর মোবাইলে খুদে বার্তাসহ হোয়াটসঅ্যাপে এ প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিয়ে কয়েক দিন এসএমএস দেন। হোয়াটসঅ্যাপের এসএমএস পিডি দেখলেও কোনো উত্তর দেননি

৩. চার মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে (প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৪০%) ১৯টি মাইক্রোস্কোপ ক্রয়ের সংস্থান অস্বাভাবিক। এ টাকায় সম্পূর্ণ কার্যকর কয়েক টি ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব। অপরপক্ষে প্রায় দুই মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের জন্য শুধু একটি এক মিলিয়ন সার্জিক্যাল পাইপেড ক্রয়ের সংস্থান অপ্রতুল। অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার কে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর মোবাইলে খুদে বার্তাসহ হোয়াটসঅ্যাপে এ প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিয়ে কয়েক দিন এসএমএস দেন। হোয়াটসঅ্যাপের এসএমএস পিডি দেখলেও কোনো উত্তর দেননি। তবে, পিডির ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার বলে পরিচিত মাল্টিবিজ ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইকবাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পিডি টেন্ডার নিয়ে খুব ব্যস্ত আছেন, এজন্য ফোন রিসিভ করেন না। ফোন দিয়ে মানুষ টেন্ডারের তদবির করে বিধায় উনি কারও ফোন রিসিভ করেন না। বর্তমানে উনি আমার ফোনও রিসিভ করেন না।’

এ বিষয়ে জানতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে তার নম্বর পাওয়া যায়নি। এরপর মহাপরিচালকের পিএস ও অতিরিক্ত উপপরিচালক আরিফ মোহাম্মদ মোজাক্কেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পিএস এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত শুনে মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু তিন দিন পার হলেও তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

এটা যেহেতু সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত হয়েছে, সেহেতু উদ্দেশ্য মূলক ভাবে ও পরিকল্পিত ভাবে বাজেট করেছেন পিডি। এটা প্রতারণা মূলক ভাবে তারা করেছেন। এখানে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। পিডি প্রকল্পের মাধ্যমে নিজে সুবিধা নিতে চেয়েছেন। কাজটা যে পিডি এক হাতে করেছেন সেটাও কিন্তু নয়। এখানে পরিকল্পিত একটি যোগসাজশ অবশ্যই ছিল। যোগসাজশ না হলে এটা তিনি (পিডি) একা করতে পারতেন না।

যে চেইনের মাধ্যমে তারা এটা করেছেন, তাদের চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সচিব ওয়াহিদা আক্তারের ফোন নম্বর পাওয়া যায়। ওই নম্বরে কয়েক দিন কল করলেও কেউ রিসিভ করেন নি। সচিব ওয়াহিদা আক্তারের মতো মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তার পিএস নাহিদা বারিকের নম্বরেও কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনিও রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দিলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজামান বলেন, ‘এটা যেহেতু সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত হয়েছে, সেহেতু উদ্দেশ্য মূলক ভাবে ও পরিকল্পিত ভাবে বাজেট করেছেন পিডি। এটা প্রতারণা মূলক ভাবে তারা করেছেন। এখানে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে। পিডি প্রকল্পের মাধ্যমে নিজে সুবিধা নিতে চেয়েছেন। কাজটা যে পিডি এক হাতে করেছেন সেটাও কিন্তু নয়। এখানে পরিকল্পিত একটি যোগসাজশ অবশ্যই ছিল। যোগসাজশ না হলে এটা তিনি (পিডি) একা করতে পারতেন না। যে চেইনের মাধ্যমে তারা এটা করেছেন, তাদের চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে।’

‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এটা কিন্তু শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমরা দেখতে পাই, সবসময়ই বাংলাদেশের প্রকল্প প্রণয়ন, প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্কৃতি যেটা গড়ে উঠেছে, সেটা আসলে যারা অসাধু কর্মকর্তা তাদের সম্পদ বিকাশের উপায় হিসেবে কাজ করছেন। সেটারই একটা দৃষ্টান্ত হচ্ছে আপনার বিষয়টা। এসব ঘটনার কোনো জবাবদিহিতা ও শাস্তি হয় না বিধায় অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং বিস্তার লাভ করছে। আপনার বিষয় টা তে যেহেতু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং চিহ্নিত করা গেছে, তাই জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা নিতে পারলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তা না হলে এসব অপরাধ আরও বেশি সংঘটিত হবে।’পিডি জগৎ চাঁদ মালাকার এখনও পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং এক ঠিকাদার কে কাজ দেওয়া বাবদ ৭০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। প্রতিদিনের কাগজের কাছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিষয় টি স্বীকারও করেছেন।

এখানে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও উনি পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি না— এমন প্রশ্নে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ঠিকাদার যেটা বলেছেন সেটা কিন্তু প্রমাণযোগ্য। তারপরও কর্তৃপক্ষের তদন্ত করে এর সত্যতা বের করতে হবে। এখানে পিডির দুর্নীতিটা প্রমাণ করার বিষয়।

তবে, আপনার পয়েন্টটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠছে এবং এটি আমল যোগ্য। বিষয়টার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই কর্মকর্তা কে পিডি পদে রাখা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হবে না। তদন্ত কালীন আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী পিডিকে সাময়িক বরখাস্ত সহ জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। উনি যদি (পিডি) ওই পদে বহাল থাকেন, তাহলে তদন্ত প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হবে না; এটা খুবই স্বাভাবিক।’প্রকল্পটি যেহেতু একনেকে পাস হয়েছে, সেহেতু পরিকল্পনা কমিশন এর দায় এড়াতে পারে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটার জন্য পুরো পরিকল্পনা কমিশন দায়ী, সেটা বলব না।

প্রকল্প প্রস্তাবনা পর্যায় থেকে শুরু করে অনুমোদন প্রক্রিয়া পর্যন্ত, তার মানে প্রকল্প প্রস্তাবনার নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে পিডির যোগসাজশ রয়েছে। তা না হলে কিন্তু প্রকল্পটা অনুমোদন হতো না। যারা অনুমোদনকারী তারা তো এটার পর্যবেক্ষণ করার কথা, ডিপিপিতে যে তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে বাস্তবে সেগুলো সঠিক কি না, দেখার কথা। যেহেতু ডিপিপির তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয়নি, সেক্ষেত্রে বলা যায় এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগসাজশ হয়েছে। যারা এ যোগসাজশে জড়িত তাদের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...