• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়: পুলিশ কর্মকর্তাদের আইজিপি নিজেকে রাষ্ট্রপতি দাবী করে সংবাদ সম্মেলন ফার্মগেটে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট সম্পদের হিসাব দিতে হবে রাজউক কর্মকর্তাদের গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাংলাদেশ চোখের সেবা সম্প্রসারণে অরবিসের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করবে ব্রিটেন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের বিভাগীয় সমাবেশ নিঃ স্বার্থ সমাজ কল্যাণ সংগঠনের নব নির্বাচিত কমিটির পরিচিতি ও মাদক বিরোধী সভা শেরপুরে হাসপাতালের সেই তত্ত্বাবধায়কের অপসারণ দাবীতে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

সীমান্তবর্তী পাহাড় পুড়ছে গারো পাহাড়ের সবুজ বন

মোহাম্মদ দুদু মল্লিকঃ / ৮৫ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

মোহাম্মদ দুদু মল্লিকঃ শেরপুরের সীমান্তবর্তী পাহাড়ে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা- নলকুড়া ইউনিয়নের গারো পাহাড়ে শাল-গজারির বনের অন্তত ২০/২৫ টি স্থানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাহাড়ের পর পাহাড় আগুনে পুড়ে যায়। এতে শুধু বিভিন্ন গাছ-পালা ও প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে না, নষ্ট হচ্ছে মাটির গুণগত মান, ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতিও। বনের জমি দখল আর লাকড়ি সংগ্রহ করতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে থাকে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে চলছে এ বন পোড়ানো। প্রতিবছর এ মৌসুমে বনে আগুন দেওয়ার কারণে পুড়ে যায় ছোট গজারি গাছ (শালকপিচ), ঝুপঝাড়, লতাপাতা, পোকামাকড়, কেচু ও কীটপতঙ্গসহ নাম জানা-অজানা বিভিন্ন প্রাণী। জন্ম নেয় না নতুন গাছ। বিনষ্ট হয় বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। বন পোড়ানোর কারণে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। পাশাপাশি বিলুপ্ত হচ্ছে বন্য প্রাণী, কীটপতঙ্গের আবাসস্থল। আশঙ্কা করা হচ্ছে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ক্ষতি বেড়েই চলবে। বন বিভাগ সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের আওতায় ৩ টি বিট কার্যালয় রয়েছে।

এ তিনটি বিট কার্যালয়ের আওতায় বনভূমি রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮৮০ একর। এর মধ্যে বেশিরভাগ জমিতে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা সমৃদ্ধ বন রয়েছে। প্রতি বছরের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শাল-গজারি সহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের মধ্যদিয়ে চলাচলের জন্যে সড়কপথ থাকায় খুব সহজেই দুর্বৃত্তরা রাতে আবার কখনো দিনেও বনে আগুন দেন। ঝরাপাতা গুলো শুকনা থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বছরের পর বছর চলছে বন পোড়ানোর এমন ঘটনা। গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইগাতী-কামালপুর সড়কের ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী বিট এলাকার গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের চারটি স্থানে বড়আকারে আগুন জ্বলছে। আবার দুইটি স্থানে অল্প অল্প আগুন জ্বলছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন,কে বা কারা ঘণ্টা খানেক আগে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন।গত দুই সপ্তাহে শাল-গজারি বনের কমপক্ষে ২০/২৫ টি স্থানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গান্ধী গ্রামের বাসিন্দা আঃ হানিফ মিয়া বলেন,বনের ভেতরে অসংখ্য রাস্তা রয়েছে।

কে কখন কোন রাস্তা দিয়ে এসে আগুন দিচ্ছে,তা বোঝার উপায় থেকে না এতে করে হাতীর খাবাও নষ্ট করছে এর ফলে হাতী গুলো সহজেই খাবারের খুজে বাড়ি-ঘরে হামলা করছে মারছে মানুষ। তবে কিছুদিন ধরে মাঝেমধ্যেই বনের ভেতর আগুনের দেখা মিলছে। রাংটিয়া এলাকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘আপন শিক্ষা পরিবার’এর পরিচালক মো. রহমত আলী বলেন, প্রতিবছর এ মৌসুমে বনে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

মাঝেমধ্যে বিট কার্যালয়ের আশে পাশের বনেও আগুন জ্বলতে দেখি। এরপরেও এসব বন্ধের বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায় না বন বিভাগকে।বার্ড কনজারভেশন সোসাইটি ঝিনাইগাতী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন,যুগ যুগ ধরে মানুষ নিজের ব্যক্তিস্বার্থে জীবনের উন্নয়নের জন্য পরিবেশের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে।

মানুষের অপতৎপরতা,বিশেষ করে বিজ্ঞানের উন্নতির পর থেকে দ্রত গতিতে বিস্তার লাভ হচ্ছে ছোট- বড় প্রাণী,গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশ সাধন করেছে। এসবের অবশ্যম্ভাবী ক্ষতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে। এর প্রমাণ বর্তমানে পৃথিবীর তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে বাড়ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। পৃথিবীর সব অঞ্চলেই খরা,বন্যা ও পশু-পাখির বিলুপ্তি ঘটছে। খুবই জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ মানুষ’কে পরিবেশ ও বন সম্পর্কে সচেতন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

মানুষ’কে যেহেতু পরিবেশে বাস করতেই হবে, সেহেতু তাদের উচিত নিজেদের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবেশের মৌলিক উপাদান গুলো যথাযথ সংরক্ষণ করা। রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সময়ে শাল-গজারি সহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে দুই-তিন ইঞ্চি উঁচু স্তরে জমা আছে। এতে আগুন ধরিয়ে দিলে তা দ্রত ছড়িয়ে পড়ছে। বনের ভেতর আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে আমার অল্প সংখ্যক স্টাফ নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। পাশাপাশি দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...