• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের বিভাগীয় সমাবেশ নিঃ স্বার্থ সমাজ কল্যাণ সংগঠনের নব নির্বাচিত কমিটির পরিচিতি ও মাদক বিরোধী সভা শেরপুরে হাসপাতালের সেই তত্ত্বাবধায়কের অপসারণ দাবীতে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ বিচারের পর আ.লীগকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে : ড. ইউনূস আমরা এক পরিবার, কেউ কারো শত্রু হবো না: প্রধান উপদেষ্টা সীমান্তের বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্যের ভাতিজা ইয়াবাসহ আটক আওয়ামীপন্থী পুলিশ কর্মকর্তাদের নামের তালিকায় ময়মনসিংহের ওসি সফিকুল ইসলাম ভাড়া বাড়িতে কলেজ ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ, মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা যুবদল নেতা হত্যা মামলায় পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী কারাগারে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ

দুর্নীতির “বরপুত্র” কারা অধিদপ্তরের এআইজি জান্নাত- উল ফরহাদ

আল আমিন, (ঢাকা) : / ৭১ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪

আল আমিন, (ঢাকা) : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কারা বিভাগের যে সকল কর্মকর্তা নিগৃহীত ও অবহেলিত ছিল,তারা এখনো নিগৃহীতই আছে। অপরদিকে বিগত সরকারের আমলে যারা কারা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে কর্মরত ছিল এখন তারা আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন হয়েছেন। এইরূপ কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম একজন কারা অধিদপ্তরের এআইজি (উন্নয়ন) মোঃ জান্নাত- উল ফরহাদ। তার নিজ জেলা নীলফামারী। তার পরিবার সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের খুবই ঘনিষ্ঠ হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন।

জানাগেছে, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের তদবিরে ১৯৯৯ সালের ১৫ই জুলাই তিনি কারা বিভাগের ডেপুটি জেলার পদে চাকরিতে যোগদান করেন। ডেপুটি জেলার পদে বিভিন্ন কারাগারের কর্মরত থাকাকালীন কারা অভ্যন্তরে মাদকদ্রব্য পাচার, মোবাইল সরবরাহ সহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে অবৈধ পথে টাকা -পয়সা অর্জন করেছেন।

এক ব্যক্তি বাদী হয়ে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে এআইজি মোঃ জান্নাত- উল ফরহাদসহ দুজনের নামে জমা দিয়েছেন অভিযোগ। এ অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। মোঃ জান্নাত- উল ফরহাদ ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেপুটি জেলার থাকা অবস্থায় মাদকদ্রব্য পাচার ও কারাগারে মোবাইল সরবরাহ করার কারণে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন। ডেপুটি জেলার অবস্থায় বিভিন্ন অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ায় তার বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি অনেকদিন স্থগিত ছিল বলে জানাগেছে। একারণে তার ব্যাচের অন্যান্য ডেপুটি জেলারগন ২০০৮ সালে জেলার পদে পদোন্নতি পেলেও তিনি জেলার পদে পদোন্নতি পান ২০১৩ সালে । ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ক্ষমতায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ কারাগারে পদায়ন /বদলি হয়েছেন।বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার আসার সাথে সাথেই তাদের পারিবারিক আত্বীয় সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের তদবিরে মাদারীপুর জেলা কারাগারে ভারপ্রাপ্ত জেলার হিসাবে বদলি হয়ে যান। মাদারীপুর কারাগারে এক বছর কর্মরত থাকার পর তিনি ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নরসিংদী জেলা কারাগারে বদলি হন।

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাধর কারা কর্মকর্তা মোঃ জান্নাত- উল ফরহাদ নরসিংদী জেলা কারাগারে কিছুদিন চাকরি করার পর আওয়ামী লীগ সরকারের হাই কমান্ডের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর তদবিরে ২০১১ সালে তিনি ভারপ্রাপ্ত জেলার হিসেবেই বদলি হন ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে থাকা অবস্থায় তিনি সাবেক এমপি ও ধর্মমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলী সদস্য মরহুম মতিউর রহমানের ছোট ভাই আফাজ উদ্দিন সরকারের সাথে গোপন সম্পর্ক এবং নিজেকে সাবেক ধর্মমন্ত্রীর ভাতিজি জামাই পরিচয় দিতে কারাগারে প্রভাব বিস্তার করতেন। ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের পর তিনি ঢাকা বিভাগে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারাগার কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে বদলি হয়েছিলেন। কিশোরগঞ্জ থাকা অবস্থায় তৎকালীন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোরগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ এবং সাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঘনিষ্ঠজন তৎকালীন পিপি শাহ আজিজুল হকের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন।

উক্ত সময়ে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের হাই কমান্ডের আরো কাছাকাছি চলে যান।

অতঃপর ২০১৩ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের হাই কমান্ডের তদবিরে তিনি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুর, গাজীপুরে জেলার হিসেবে যোগদান করেন। দুই বৎসর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত থেকে তিনি পুনরায় সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামানের তদবিরে দেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারাগার খুলনা জেলা কারাগারে যোগদান করেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এআইজি মোঃ জান্নাত-উল ফরহাদ কারাগারের “বরপুত্র” হিসেবে পরিচিত ছিলেন । দেশের ৯০% জেলার যেখানে কেন্দ্রীয় কারাগারে চাকরি করার সুযোগ পান না , সেখানে তিনি পরপর দুইটি কেন্দ্রীয় কারাগারে চাকরি করে কোটি টাকা অর্জন করেছেন।

নরসিংদী জেলা কারাগারে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিএনপির কয়েকজন নেতাকে কারাভ্যন্তরে ব্যাপক মারধর করে আলোচনা এসেছিলেন মোঃ জান্নাত-উল ফরহাদ। নরসিংদী শহরে তার বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীরা বদলি দাবিতে মিছিল করেন। কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা অবস্থায় তার গোপন আকার-ইঙ্গিতে এক মহিলা কারা রক্ষীর ছেলের লাঠির আঘাতে কারাগারে রিজার্ভ গার্ডে “ভারপ্রাপ্ত প্রধান রক্ষী মাহতাব উদ্দিন- এর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু ঘটনায় তিনি অভিযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের প্রভাবে তিনি শাস্তি থেকে পার পেয়ে যান।

এদিকে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মরত থাকা অবস্থায় কারাগারের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে “কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির” আওতায় ২০০ টন চাউল বরাদ্দ দেন সরকার । কিন্তু তিনি তৎকালীন জেল সুপার এর সাথে যুগসাজশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ না করে গোপনে চাল বিক্রি করে সব টাকা আত্বসাৎ করেন। এঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ময়মনসিংহ কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন আজিজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। পড়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দুদকের তৎকালীন এক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে অভিযোগ থেকে মুক্তি পান। ২০১৫ সালে হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আটক ছিল। তাদের বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন জান্নাত-উল ফরহাদ।

জানা গেছে, রাজধানীর কল্যাণপুরে নতুন বাজার এলাকায় তিন তলা একটি আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে তার পরিবার নিয়ে সেই বাড়িতেই বসবাস করেন। হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকাকালীন সময়ে একটি ৭.৬২ রাইফেল ৩০ রাউন্ড গুলি সহ নিখোঁজ হয়েছিল। খুলনা জেলা কারাগারেও তিনি ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। কামিয়েছেন কোটি টাকা। কারা ক্যান্টিন থেকে শুরু করে বন্দিদের দেখা-সাক্ষাৎ কারাগারে সিট বিক্রি, ভিতরে মোবাইল ফোন সরবরাহ , মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে তিনি ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একটি লিখিত অভিযোগে জানাগেছে, খুলনা কারাগারে আটক একজন চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে তিনি দীর্ঘদিন পরকীয়া লিপ্ত ছিলেন। ওই মহিলাকে নিয়ে তিনি প্রায় সময়ই পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে রাত্রি যাপন করতেন এঘটনায় আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল। খুলনা জেলা কারাগারের ব্যাপক দুর্নীতির ফলে তার বিরুদ্ধে তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তদন্ত হয়েছিল এবং অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঝালকাঠি জেলা কারাগারে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন । জেলার চাকরি কালীন সময়ে তার জঘন্য অসংখ্য অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন কারা কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ তাকে বান্দরবান কারাগারে শাস্তিমূলক বদলি করেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি তার রং বদলে জামাত-শিবিরের মত একটি দেশপ্রেমিক,আদর্শবাদী ও ন্যায়পরায়ণ সংগঠনের সমর্থক দাবি করে বর্তমানে কারা অধিদপ্তরে এআইজি (উন্নয়ন) পদে কর্মরত আছেন। এআইজি জান্নাত উল ফরহাদ একাধিক কর্মকর্তাদের আওয়ামী পন্থী তকমা লাগিয়ে দেশের দূরদূরান্তে বদলি করাচ্ছেন এবং তাদের হয়রানি করছেন বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন । তিনি খুলনা জেলা কারাগারে থাকাকালীন সময়ে সাবেক আইজিপি সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনকে বিতর্কিত করে আলোচনায় এসেছিলেন।

কারা অধিদপ্তরের এআইজি (উন্নয়ন) মোঃ জান্নাত- উল ফরহাদ এর কাছে সত্যতা জানতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমি ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে ডেপুটি জেলার হিসাবে কর্মরত ছিলাম। কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের কারারক্ষি মাহতাব খুনের ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ২০১২ সালের ঘটনা। কি ঘটে ছিল আমার মনে নেই। তবে এতটুকু জানি মাহতাব এর মামলার বাদী হয়েছে তার স্ত্রী। সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর আপনার আত্বীয় হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি যদি মনে করেন তিনি আমার আত্বীয় তাহলে ঠিক আছে। তবে আপনার প্রমান করতে হবে, না হয় আমি আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

এদিকে কারা অধিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তৎকালীন আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশে মোঃ আবু তালেব কারা বিভাগে ০৪-০৫-২০০০ ইং তারিখে কারা বিভাগে ডেপুটি জেলার পদে যোগদান করেন। ২০০২ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তৎকালীন আওয়ামী লীগের লালবাগে এমপি হাজী সেলিম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ৬/৭ সেলে বন্দী থাকা অবস্থায় বর্তমান সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মোঃ আবু তালেব হাজী সেলিমকে কারাগারের ভিতরের সেলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার জন্য সুযোগ করে দেন। হাজী সেলিমকে কারাগারে মোবাইল ফোন দেওয়ার অপরাধ তদন্ত করার জন্য তৎকালীন সহকারী কারা মহাপরিদর্শক হারুন অর রশিদকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। হারুন অর রশিদ সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রমাণ পায় যে মোঃ আবু তালেব হাজী সেলিমকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সুযোগ করে দেন। আওয়ামী লীগের এমপি হাজী সেলিমকে কারাগারে মোবাইল ফোন দেওয়ার অপরাধে মোঃ আবু তালেবকে সাময়িক বরখাস্ত করে দিনাজপুর জেলা কারাগারে বদলি করা হয় এবং তার বাষিক বেতন বৃদ্ধি ৩ বছরের জন্য স্থগিত রাখা হয়।

মোঃ আবু তালেব নিরাপত্তা সেলে দায়িত্ব পালন কালে সাবেক কারা মহাপরিদর্শক মোঃ জাকির হাসান বিপদে ফেলানোর মুল কারিগর ছিলেন। সেই সময়ে নিরাপত্তা সেলে যারা দায়িত্ব পালন করেছে তাদেরকে পুনরায় কারা অধিদপ্তরে বদলী করে নিয়ে এসেছেন ( যেমন প্রধান কারারক্ষী আনোয়ার হোসেন সহ অনেকেই)। মূলত তাদেরকে দিয়ে যত প্রকার দুনীতি করানো যায়, সবাই তার বিশ্বস্ত তারা কাউকে কিছু বলবে না। সেই সাথে যশোর কেন্ত্রীয় কারাগারে কর্মরত থাকাকালে সেখানে তার বিশ্বস্ত কারারক্ষীদের কারা অধিদপ্তরে বদলী করে নিয়ে এসেছেন সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মোঃ আবু তালেব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...