জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ জামালপুরে অভিযান চালিয়ে সরকারি প্রায় ২০ মেট্রিক টন চাল ও চটের খালি বস্তা ৩৬০ পিস এবং একটি ট্রাক জব্দ করেছে জামালপুর র্যাব ১৪। সোমবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাতটায় র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এর নেতৃত্বে সদর উপজেলার ৫ নং ইটাইল ইউনিয়নের দমদমা বকুলতলা বাজারের লিংকনের রাইচমিল থেকে ৫০ কেজির ৩৯৮ টি বস্তায় এ চাল উদ্ধার করা হয়। ১৯,৮৪০ কেজি চালের সর্বমোট মূল্য= ৮,৯২,৮০০ (আট লক্ষ বিরানব্বই হাজার আটশত) টাকা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিন্নাত শামছুন্নাহার বাদী হয়ে ১৯৭৪ এর ২৫(১) ধারার মোস্তাফিদুল ইসলাম লিংকনসহ আরো ৫/৬ জন অজ্ঞাতনামা করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ৩ টায় জামালপুর র্যাবের অধিনায়কের পক্ষে সহকারী পুলিশ সুপার ও মিডিয়া অফিসার মোঃ আব্দুল হাই চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিন থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে জেলার সদর উপজেলার দমদমা বকুলতলার বাজার থেকে বোয়ালমারী গামী কাঁচা রাস্তার পাশে খরখরিয়া এলাকার গেন্দু ইসলামের ছেলে মোস্তাফিদুল ইসলাম লিংকন (৪৫) সহ তার সিন্ডিকেটের সদস্য’রা রাইচ মিলের সামনে রাস্তার উপর একটি ট্রাকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত চাল সরকারি লোগো সম্বলিত বস্তা থেকে বাহির করে নতুন প্লাষ্টিকের বস্তায় লোড করতেছে।
সংবাদ পেয়ে রাত সাড়ে আটটায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জিনাত শামছুন্নাহার সুলতানাও জামালপুর জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জনাব মোঃ আসাদুজ্জামান খানকে সাথে নিয়ে ঘটনা স্থলে যান জামালপুর র্যাব। সেখানে খাদ্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান সরাসরি মোস্তাফিদুল ইসলাম লিংকনের পক্ষ পাতিত্ব শুরু করে এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিছু টাকা জরিমানা করে চাল গুলো ছেড়ে দেওয়ার বিভিন্ন পায়তারা ও প্রস্তাবনা করেন৷ সরকারের চাল নয় বলে তিনি দাবী করলে সাংবাদিক ও স্থানীয়দের নানা প্রশ্নের তোপের মুখে পড়ে যান জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান।
পরে রাত ১০ টায় জামালপুর সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ সিহাবুল আরিফ ঘটনাস্থলে গিয়ে লিংকনের রাইচ মিলের ভিতর থেকে সরকারী বরাদ্দের ৩০ কেজি চটের খালি ৩৬০ টি খালি বস্তা উদ্ধার করেন। পরে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তা চাল গুলো সরকারী বলে সনাক্ত করে। মঙ্গলবার ভোর রাত ২ টায় র্যাব জামালপুর সদর থানায় চাল গুলো হস্তান্তর করে। চাল জব্দ করা হলেও পালিয়ে গেছে কালোবাজারি লিংকন ও তার সহযোগী’রা।চাল কালোবাজারী ও তার সহযোগীদের আইনের আওতায় নিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়’রা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাইচমিলের এক শ্রমিক জানান, আমাদের কাজ গাড়ীতে মাল লোড দেওয়া। ৩০ কেজি বস্তায় চাল আসার পরে আমরা সেটা খুলে নতুন আরেকটি বস্তায় তুলে ফেলি। এদিকে সুমন সহ স্থানীয় অনেকেই জানান, তার এ রাইচ মিল থেকে অনেক আগে থেকেই সরকারী বস্তা সহ চাল আসে। পরে তারা সেগুলো বস্তা পরিবর্তন করে ফেলে।
সরকারীর বস্তা এখানে কিভাবে আসল? তার এই কাজে সরকারী কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হলে অনেকেই আইনের আওতায় আসবে। তবে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার সাথে সোমবার লিংকনের সাথে অনেকবার যোগাযোগ হয়েছে বিষয়টি সমাধানের জন্য। একটি রাইচ মিলে এতো বস্তা চাল উদ্ধার হয় এখানে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার ভুমিকা রহস্য জনক ছিল। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সবাই’কে আইনের আওতায় আনার দাবী জানাই৷
এ বিষয়ে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিন্নাত শামছুন্নাহার জানান, থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বিষয়টি বিভিন্ন প্রশ্ন করা হলে কোন বক্তব্য দিতে রাজী হয়নি জামালপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান। এদিকে জামালপুর র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার ও মিডিয়া অফিসার আ: হাই চৌধুরী জানান, পলাতক আসামী মোস্তাফিদুল ইসলাম লিংকনসহ আরো ৫/৬ জন অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।