• বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন

দুদক কর্মকর্তার দূর্নীতি, বাড়ী গাড়ী ও শতশত কোটি টাকার জমি

স্টাফ রিপোর্টারঃ / ২৯০ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টারঃ বরগুনার আমতলীতে বাড়ি  দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ- পরিচালক মুহ.মাহবুবুল আলম। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা তার পেশাগত দ্বায়িত্ব। কিন্তু দূর্নীতি দমন কমিশনের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির বিস্তর  অভিযোগ। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানেও মিলেছে তার কোটি কোটি টাকার অঢেল সম্পদের তথ্য।

এরপরও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সব অভিযোগের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়নি পতিবেদনে। তাই বিশেষ একটি সংস্থার মাধ্যমে অধিকতর তদন্তের  সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাহবুবুল আলমের ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের করা অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের দ্বায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয় নিয়ে দুদক বিব্রত। মুহ. মাহবুবুল আলম দুর্নীতি বিরোধী এ সংস্থাটিতে ২৮ বছর আগে পরিদর্শক পদে যোগ দেন।এর পর পদোন্নতি পেয়ে  হয়েছেন উপপরিচালক।

তিনি বর্তমানে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২ এ কর্মরত রয়েছেন। মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত দুর্নীতি বাজদের অব্যাহতি দেওয়ার বিনিময়ে  কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। তার দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, অনৈতিক ভাবে অর্জিত অর্থে নিজ নামে, স্ত্রী, মেয়ে ছাড়াও নিকট স্বজনের নামে রাজধানীর শান্তিগর ও রামপুরায় বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট, দোকান, গাড়ী বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ।

বরগুনার আমতলী উপজেলায় তার জমিসহ অঢেল সম্পত্তি গড়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান চালায় দুদক। তিন বছর অনুসন্ধান শেষে বেশকিছু অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করছে দুদক। তাই একটি বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে এসব অভিযোগের বিষয় ফের তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায় দুদকের উপ- পরিচালক মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তি মালিক হয়েছেন  বলে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট কমিশনে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। তার বিরুদ্ধে একই বছরের ৭ নভেম্বর একই ধরনের আরেকটি অভিযোগ জমা পড়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। এরপর ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অভিযোগের সংশ্লিষ্ট নথিপত্র দুদকে পাঠিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করণের অনুরোধ জানানো হয়। পরে ওই অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ কে দায় দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে একই ধরনের আরেকটি অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। তিন বছর অনুসন্ধান শেষে গত ২৪ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। গত ৪ এপ্রিল দুদকের নীতিনির্ধারণী সভায়ও মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধ ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগ এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়। বিষয়টি সভায় উপস্থাপন করেন দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) রেজওয়ানুর রহমান।

দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয় মাহবুবুল আলমের নামে দান ও কেনাসূত্রে ১৮টি দলিলে ৪৫৫ শতক জমি এবং ২০ লাখ ১ হাজার ৩০০ টাকা বিনিয়োগ সহ ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৯১ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীর গলাচিপা আড়তপট্টিতে ছয়টি দোকান কিনেছেন তিনি। গ্রামে এক কোটি ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা মূল্যের কৃষি জমি রয়েছে তার। প্রতিবেদনে আরও বলা হয় মাহবুবুল আলমের স্ত্রীর নামে ১৪টি দলিলে ৩৫৪ শতক জমি কেনার প্রমাণ পাওয়া যায় এ ছাড়া একটি কোম্পানিতে পাঁচ লাখ টাকা বিনিযোগ করার কথা বলা হয়েছে।

তার মেয়ের  নামেও সাতটি দলিলে ১৪৫ দশমিক ৮৮ শতক জমি, ২৬ লাখ টাকার গাড়ি কেনা ছাড়াও পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ সহ অন্যান্য সম্পত্তি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সভায় বলা হয়, এ প্রতিবেদনে প্রাসঙ্গিক বিষয়াদী  নিরপেক্ষ ভাবে অনুসন্ধান ও যাচাই করা হয়েছে মর্মে কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয়নি। এ ছাড়া অভিযোগের সব বিষয়  অনুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি।

তাই সভায় সিদ্ধান্ত হয় দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা- ২০০৭ এর বিধি ১৯ (৪) মোতাবেক বিশেষ একটি সংস্থার মাধ্যমে এবিষয়ে তদন্ত করা হবে। দুদকের উর্ধতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিশন মনে করছে মাহবুবল আলমের নামে- বেনামে এবং নিকট আত্মীয়ের  নামে আরও সম্পত্তি থাকতে পারে। এজন্য বিশেষ একটি সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে দুদকে জমা পড়া এক অভিযোগে বলা হয়েছে, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়  তার জমি ও তিনতলা একটি ভবন রয়েছে। এছাড়া বরগুনার আমতলীর সোনাখালী গ্রামে তার বসত বাড়ীতে দুইতলা ভবন রয়েছে । পায়রা বন্দরের পাশে কলাপাড়ায়  কয়েকশ বিঘা জমি, আমতলী উপজেলায় শত বিঘা ধানী জমি ও তিনটি দীঘি, ঢাকার শান্তিগরে তার টাকায় ভাগ্নি জামাই হাবিবুর রহমানের নামে সাততলা এবং রামপুরায় ছয়তলা ভবন রয়েছে ।

অন্যদিকে নয়াপল্টন এলাকায় চীন- বাংলাদেশ মৈত্রী নামে ২০ তলা মার্কেটে ভাগ্নি জামাই হাবিবুর রহমানের নামে শেয়ার , আমতলী উপজেলায় বাড়ি হাবিবুর ও তার ছেলের নামে নতুন- পুরাতন গাড়ীর  শো- রুম, মিরপুরে দীপ্তি আবাসন প্রকল্পের নিকট আত্মীয় দেও নামে শেয়ার , সেখানে মালিক দেখানো হয়েছে । ফারুক মৃধা, নজরুল মৃধা ও মশিউর সহ আরও কয়েক জনকে।

এছাড়া বোন, বোন জামাই, ভাগ্নে- ভাগ্নিদের নামে, শ্যালক ও শ্বশুর বাড়ীর আত্মীয়দের নামেও ঢাকা ও পাবনায় শত শত বিঘা জমি কিনেছেন। বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে তার। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে  বলেও উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয়, তার নিজ উপজেলা আমতলীর একটি স্কুল ও কলেজে এডহক কমিটির সভাপতি পদ নিয়েও তিনি আইন- বহির্ভূত প্রভাব খাটাচ্ছেন।

গত বছরের শুরুতে ঢাকা অফিসে বদলি হওয়ার আগে মাহবুবুল আলম দুদকের চট্টগ্রাম- ২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে প্রায় চার বছর কর্মরত ছিলেন। তখন চট্টগ্রামে দুর্নীতির অভিযোগ- সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ছাড়াও প্রভাবশালীদের সঙ্গে তিনি সখ্য গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাহবুবুল আলমের সঙ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...