গাজী মোঃ রুবেল, (কুমিল্লা) থেকেঃ আবুল খায়ের আখন্দ, সুদূর আমেরিকার নিউইয়র্কে থাকেন। সেখানে ফুটপাতে বিক্রি করেন বই। আমেরিকার নিউইয়র্কে বই বিক্রি করে নিজ দেশে গড়ে তুলেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে সুদূর প্রবাসে বই বিক্রি করেন তিনি। সেখানের কষ্টে উপার্জিত টাকা নিজের জন্য নয় দেশের মানুষের জন্য খরচ করেন।
ছাত্র জীবন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন গড়ে তুলবেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঐই সপ্ন বাস্তবায়নে তিনি নিজ গ্রামে টাটেরা হাজী মাষ্টার রেহান উদ্দিন আখন্দ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে এলাকার মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। অদম্য ইচ্ছা ও নিজের ইচ্ছার স্বপ্নকে সফল করতে ছাত্র- জীবন থেকেই লড়াই শুরু করেন। টিউশন করে এলাকায় গড়ে তুলেন একটি লাইব্রেরী।
প্রথমে ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করলে ও পরে তা সেবা মূলক কাজে প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন শ্রেণির একাডেমিক বইগুলো আশপাশের গ্রামের দরিদ্র ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করে পড়াশুনা চালিয়ে যেতেন। যার মধ্যে অনেকে এখন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত। আবুল খায়ের আখন্দ তার পিতার নামে ১৯৯৮ সালে ৬৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে মাদ্রাসা নির্মানের কাজ শুরু করেন।
প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে ১৯৯৯ সালে মাদ্রাসার কাজ শেষ করেন। মাদ্রাসাটির নাম করণ করেন হাজী রেহান উদ্দীন আখন্দ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা। বর্তমানে মাদ্রাসায় শিক্ষক ও কর্মচারী সহ মোট ২২ জন কর্মরত আছেন। এছাড়া ২৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এ মাদ্রাসায়।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা নিউইয়র্কের প্রবাসী ব্যবসায়ী আবুল খায়ের আখন্দ বলেন, আমি গ্রাম থেকে পড়াশোনা করেছি, ছোটবেলা থেকে দেখতাম মেয়েরা একটু বড় হলে তাদের পরিবার তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দিতো। এতে করে নারী শিক্ষা আমাদের এলাকায় ছিলো না বললেই চলে। আশে পাশে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না, শিক্ষার হার শতকরা ১০% নিচে ছিলো।
তখন থেকে ইচ্ছা জাগলো আমি সফল হয়ে নিজ গ্রামে একটি মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করবো।আল্লাহ রহমতে আমি সফল হয়েছি, ভবিষ্যৎ আমার ইচ্ছা আছে বড় পরিসরে তথ্য ও প্রযুক্তির সহযোগিতায় আধুনিক একটি লাইব্রেরী স্থাপন করবো। পাশাপাশি আমি আমার মাদ্রাসাটি কে পর্যায়ক্রমে কামিল পর্যন্ত করবো। আমরা ইচ্ছা আমি সমগ্র ব্রাহ্মণপাড়ায় আধুনিক নারী শিক্ষা ছড়িয়ে দিবো ।
কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার টাটেরা গ্রামের স্কুল শিক্ষক রেহান উদ্দীন আখন্দের ছেলে আবুল খায়ের আখন্দ। ছয় ভাই, চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। বর্তমানে তিনি এক কন্যা ও দুই পুত্র নিয়ে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করেন। শুধু বাবার নামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষ্যন্ত হননি তিনি।
একক প্রচেষ্টায় প্রতি বছরের ন্যায়ে এবছরও বিনা মূল্যে বই বিতরণ ও দুই লক্ষ টাকা খচর করে মেয়েদের পর্দার জন্য বোরকা বিতরণ করেন আবুল খায়ের আখন্দ। তিনি মাদ্রাসাটি কে কামিল মাদ্রাসায় রূপান্তর করতে চান।
এছাড়া প্রতি বছর গ্রামের বিধবা নারীদের সহযোগিতা, অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়েদের বিবাহের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন এ প্রবাসী। যুব- সমাজের উন্নয়নের জন্য নানা সময় উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি মেধা বৃত্তির আয়োজন করেন। দেশে আসলে তিনি যুব- সমাজকে মাদক মুক্ত করতে নিজ উদ্যোগে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন।
টাটেরা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, খায়ের ছোটবেলা থেকে মানুষের উপকার করতো। এ গ্রামের অসংখ্যা ছেলে মেয়েকে পড়াশোনার জন্য সহযোগিতা করেছেন। তার স্বপ্ন ছিল টাটেরা একটি মাদ্রসা স্থাপন করবে। সে তা করেছে। ব্যক্তি উদ্যোগে তার এ কাজ এলাকাবাসী হিসাবে সত্যিই আমরা আনন্দীত ও গর্বিত। এখানে আমাদের সন্তানেরা বিশেষ করে মেয়েরা পড়াশোনা করছেন। ভবিষ্যৎতে খায়ের আমাদের এলাকার জন্য আরও ভালো কিছু করবে বলে আমরা আশাকরি এবং দোয়া করি।
সাহেবাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন চৌধুরী বলেন, আবুল খায়ের আমার ইউনিয়নের সন্তান। তার পরিবার আমার ইউনিয়নের মধ্যে একটি শিক্ষিত পরিবার। সে দীর্ঘদিন যাবৎ আমেরিকায় থাকেন। সে আমেরিকায় থেকে আমার ইউনিয়নের টাটেরা গ্রামে নারী শিক্ষার গুরুত্ব দিয়ে টাটেরা হাজী মাষ্টার রেহান উদ্দিন আখন্দ মহিলা দাখিল মাদ্রাসা নামে এক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এতে আমরা ইউনিয়নবাসী অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত। আবুল খায়েরসহ তার পরিবারের কথা সাহেবাবাদ ইউনিয়ন তথা দেশবাসী সব সময় স্মরণ রাখবে।