• বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ অপরাহ্ন

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা আজমত উল্লার

সংবাদদাতা / ৮৯ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : রবিবার, ২১ মে, ২০২৩

গাজীপুর প্রতিনিধি 

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৮ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান। রোববার (২১ মে) সকালে শহরের প্রকৌশলী ভবন মিলনায়তনে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।

ঘোষিত ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ সিটি করপোরেশন গঠন ছাড়াও নাগরিক সেবায় নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি। নাগরিকদের হোল্ডিং কর সহনীয় করা, ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি সরবরাহ, যানজট নিরসনে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তারে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন ইশতেহারে।

আজমত উল্লা খান জানান, তার নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে ইশতেহারে ঘোষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে “সপরামর্শক কমিটি/নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি” গঠন করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নৌকার মেয়র প্রার্থী বলেন, সেবার মান বাড়াতে অভিজ্ঞ নগরবিদ ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে বিশ্বমানের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন সনদের ফি, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা এবং ওয়ার্ডগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। হোল্ডিং করের হার না বাড়িয়ে রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে সহনশীল পর্যায়ে চূড়ান্ত করা হবে।

এছাড়া সরকার কর্তৃক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রদান করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কল্পে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া স্বল্পমূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মৃত্যুর পর প্রয়োজন অনুযায়ী কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা করা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিসহ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে শ্রমিক, বস্তিবাসী ও দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যকার্ড/ লাল কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আজমত উল্লা খান আরও বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল নাগরিকদের সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ‘জি আই এস’ পদ্ধতি অবলম্বন করে সার্ভের মাধ্যমে ড্রেন ও খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিবন্ধী নাগরিক এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্টজনদের নামে রাস্তার নামকরণ ও নির্মাণ কাজের গুনগতমান নিরীক্ষার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। এছাড়া যানজট নিরসন, পার্কিং, ফুটপাতসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, পথচারীবান্ধন ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাথ নেটওয়ার্ক, যানজট নিরসনের জন্য বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ এবং পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ, নতুন ফুটওভার ব্রিজ, আধুনিক বাসস্ট্যান্ড ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাগরিকদের রেলে যাতায়াত সহজীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের ওপর ফ্লাইওভার নির্মাণসহ সরকারের সহযোগিতায় সমগ্র গাজীপুরে সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান তিনি। নৌকার এই প্রার্থী বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে জিসিসি’র অধীনে কারিগরি ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। নগরীতে অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও এতিমখানাসমূহে সাহায্য প্রদান করা হবে। এছাড়াও অনাথ, গরিব, যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব পাঠাগারের আধুনিকীকরণ, নতুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারসমূহকে সহায়তা প্রদান করা হবে। পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ভাই-বোনদের অধিকার সংরক্ষণে ও নির্যাতন প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।

শ্রমজীবী মায়েদের শিশুদের পরিচর্যার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং বিকেল ৫টার পর তারা যেন টিসিবি’র সরবরাহকৃত খাদ্যসামগ্রী পেতে পারেন সেই উদ্যোগসহ সরকার ও মালিকপক্ষের সহযোগিতায় বেতন-ভাতাদি, নিরাপত্তা, বাসস্থান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সহায়তা প্রদান করা হবে। গাজীপুর মহানগরীর সকল বস্তিবাসীর প্রাপ্ত নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে জিসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে হেল্প-ডেক্স তৈরি করা হবে।

তিনি বলেন, তরুণদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে এবং একইসঙ্গে বয়স্ক ও শিশুদের মিলনস্থল ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘ওয়ার্ড সেন্টার’ নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সেগুলোতে কমিউনিটি সেন্টার, সেবাদান কেন্দ্র, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিল্পকলা শিক্ষা কেন্দ্র,পাঠাগার প্রতিষ্ঠাসহ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী করা হবে। ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরির মাধ্যমে নাগরিক সেবা ও নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্মার্ট নেইবারহুড কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়মিত পাড়া উৎসবসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে। বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন এবং 3R পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বর্জ্যকে জ্বালানি শক্তিতে রুপান্তরিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্জ্য সংরক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে বর্জ্য ও দুর্গন্ধমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৮ জন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও ২৪৭ জন কাউন্সিলর ও ৭৯ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...