ইউক্রেনের বড় ধরনের একটি আক্রমণ নস্যাৎ করে দেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। একইসঙ্গে ২৫০ জন ইউক্রেনীয় সেনাকে হত্যার দাবিও করেছে দেশটি। ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ শুরুর গুঞ্জনের মধ্যে এই তথ্য সামনে এলো। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করা হয়নি। সোমবার (৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে- তারা ইউক্রেনের বড় ধরনের একটি আক্রমণকে ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং ২৫০ জন ইউক্রেনীয় সেনাকে হত্যা করেছে। তবে কিয়েভের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি এবং রাশিয়ার এই দাবিও স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেন রবিবার দোনেৎস্ক অঞ্চলে ছয়টি যান্ত্রিক এবং দুটি ট্যাংক ব্যাটালিয়ন ব্যবহার করে আক্রমণ শুরু করেছিল। বিবিসি বলছে, রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ড দখলে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ শুরু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ধরনের কোনও অভিযানের আগে রোববার কিয়েভ সবাইকে নীরবতার অর্থাৎ চুপ থাকার আহ্বান জানিয়েছিল।
তবে এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে, রাশিয়ান বাহিনীর কাছ থেকে কথিত যে হামলাগুলোর কথা শোনা যাচ্ছে সেটিই আসলে ইউক্রেনের ভূমি পুনরুদ্ধারের আক্রমণের শুরু কি না।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে বলেছে, ৪ জুন সকালে শত্রুরা দক্ষিণাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের সম্মুখ সমরের পাঁচটি সেক্টরে বড় আকারের আক্রমণ শুরু করে। এই হামলায় ইউক্রেনীয়রা রাশিয়ান প্রতিরক্ষা ভেদ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শত্রুরা তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, তারা কোনও দিক থেকেই সফল হয়নি।
পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আকাশ থেকে সামরিক গাড়িতে হামলা হচ্ছে। মস্কো দাবি করেছে, ইউক্রেন ২৫০ সৈন্যের পাশাপাশি ১৬ টি ট্যাংক হারিয়েছে।
এদিকে পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কিয়েভের হামলা ব্যর্থ করে রুশ বাহিনী ২৫০ ইউক্রেনীয় সৈন্যকে হত্যা করার পাশাপাশি ১৬টি ট্যাংক, পদাতিক যুদ্ধের যান এবং ২১টি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান ধ্বংস করেছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ইউক্রেন অবশ্য গত কয়েক মাস ধরে পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা করে আসছে। তবে সেই আক্রমণ শুরুর আগে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ এবং পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম গ্রহণের জন্য যতটা সম্ভব বেশি সময় নিতে চেয়েছে ইউক্রেন।
এছাড়া কিয়েভের কর্মকর্তারা এই ধরনের আক্রমণ সম্পর্কে জনসাধারণের জল্পনা-কল্পনার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, এটি শত্রুকে সাহায্য করতে পারে। রোববার টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, (হামলার) পরিকল্পনাগুলো নিয়ে নীরব থাকাই ভালো। হামলা শুরুর বিষয়ে কোনও ঘোষণা দেওয়া হবে না।
এর আগে রুশ সেনাদের হটিয়ে পুনরায় নিজেদের অঞ্চলগুলো দখলে পাল্টা আক্রমণ চালাতে ইউক্রেন প্রস্তুত বলে দাবি করেছিলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেছিলেন তিনি।
এছাড়া ইউক্রেনের কিছু কিছু অঞ্চলে গ্রীষ্মের প্রভাব শুরু হয়েছে। আর আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় ধারণা করা হচ্ছিল, তাদের পাল্টা আক্রমণ কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার জ্বালানি, অস্ত্র ভাণ্ডার ও রসদ সরবরাহ পথের ওপর হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় ইউক্রেনীয় সেনারা। যা বড় হামলার ইঙ্গিত বলেই মনে করা হয়েছিল।