নিউজ ডেস্কঃ সংবাদ মাধ্যমের সব রকম সঙ্কটেরই প্রধান ভুক্তভোগী সাংবাদিক কর্মীরা। ফলে সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিকদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে এ পেশায় টিকে থাকা। ভালবেসে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়ে অনেকের মধ্যেই ভর করেছে হতাশা। শুধু মর্যাদার মোহে পড়ে না থেকে অনেক দক্ষ ও মেধাবী সাংবাদিক ছেড়ে যাচ্ছেন এই মহান পেশা। সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ কোথায়? এই সময়ে দাঁড়িয়ে সামনে তাকালে গোধূলির আঁধার ছাড়া কিছুই দেখা যায় না।
তারপরও বুক ভরা আশা নিয়ে সাংবাদিকরা বেঁচে থাকে। আঁধার কাটিয়ে নতুন ভোর আনতে হলে সবার আগে জরুরি সংকীর্ণ দলীয় বিভেদ দূর করে, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবধান ভুলে পেশাগত ঐক্য গড়ে তোলা। ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজের মূল কাজ হবে পেশা সুরক্ষায় তৎপর হওয়া। তবে শুধু সাংবাদিকদের সুরক্ষার মধ্য দিয়েই যে গণমাধ্যমের সঙ্কট নিরসন হয়ে যাবে- তা না। পাঠক বা দর্শকের আস্থা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আর্থিক অনিশ্চয়তা দূর করার বহুমুখী প্রচেষ্টা ছাড়া এ সঙ্কট থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে প্রথমেই জরুরি সম্পাদকীয় নীতির কৌশলগত দৃঢ়তা।
মালিক বা প্রতিষ্ঠানকে বুঝতে হবে, মানুষের বিশ্বাস যোগ্যতা ছাড়া কোনো গণমাধ্যমের পক্ষেই দীর্ঘমেয়াদে সফলভাবে টিকে থাকা সম্ভব নয়। শীর্ষ পদে থাকা সাংবাদিকরা সাহসী ভূমিকা নিলে মালিকদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা অসম্ভব নয়। কারন প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে মানুষ এখন সংবাদ বা তথ্যের জন্য পুরোপুরি প্রচলিত গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর করছে না। এটি একদিক থেকে যেমন গণমাধ্যমকে সঙ্কটের মুখে ফেলেছে, তেমনই সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা। সামাজিক মাধ্যমের জোয়ারের এই সময়ে তথ্য-প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে পারে।
আর্থিক দিক থেকে দিতে পারে স্বনির্ভরতা। নানামুখী রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পাশাপাশি জরুরি সাংবাদিকদের পেশাগত সততা। আসলে সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার কারণেই সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এ দুটি গুণ বিসর্জন দিলে সাংবাদিকতা আর মহৎ থাকে না। ব্যক্তিগত অসততা, প্রলোভন ও আপসকামিতা সাংবাদিকের নৈতিক শক্তি বিলুপ্ত করে। তখন সেই সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের পক্ষে সমাজ ও মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব নয়।
আর মানুষের আস্থা হারালে সংবাদমাধ্যমের পক্ষে বিদ্যমান সঙ্কটের কোনোটাই দূর করা সম্ভব হবে না।বাংলাদেশে গণমাধ্যমের আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো আয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন নির্ভরতা। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে পত্রিকা বিক্রি করে কিছু আয় হলেও তাতে শুধু ছাপার খরচও উঠে আসে না। আর টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টালগুলো দর্শক বা পাঠকের কাছ থেকে কোনো অর্থ পাচ্ছে না। আয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনই এই মাধ্যমগুলোর একমাত্র ভরসা।
ফলে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সবসময় বিজ্ঞাপনদাতার স্বার্থ বিবেচনায় রাখতে হয়। অনেক সময় সম্পাদকীয় নীতিতে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে বিজ্ঞাপনদাতা।ভার্চুয়াল মাধ্যমে নতুন নতুন উপাদান যুক্ত হওয়ায় দ্রুত সেদিকে ছুটছে বিজ্ঞাপনদাতারা। গণমাধ্যমের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারে বেশি উৎসাহী হচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় বিজ্ঞাপনদাতাদের খুশি করার চেষ্টায় আগের চেয়ে বেশি মনোযোগী হতে হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের মূল্য হারও আগের জায়গায় রাখা যাচ্ছে না। আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি ঠিক রাখতে বাড়ছে কম বেতনে কর্মী নিয়োগের প্রবণতা।আমি কবির নেওয়াজ রাজ, বিশ্বাস করি— পৃথিবীতে মানুষ যত দিন থাকবে, সংবাদ তত দিন থাকবে। কারণ চারদিকের ঘটনা/রটনা জানার সঠিক ও নির্ভরযোগ্য উপায় হলো সংবাদমাধ্যম। আর সংবাদ জানতে হলে অনিবার্য হবেন সাংবাদিকেরা।
ব্লু-ব্যাজ আর ইনস্টাগ্রামের যুগে হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন, সাংবাদিকতার আর কিইবা প্রয়োজন!বর্তমানে তরুণরা যারা সাংবাদিকতায় আসছে তারা কিছুদিন যেতে না যেতেই কাজটা শেখার আগে সিস্টেমটা শিখে যায়। অগ্রজরা অনেকাংশে তরুণদের সহযোগিতা করে না, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডমিনেট করতে চায়। সাংবাদিকতার প্রতি একটা সময় যে কৌতূহল ছিল সেটা এখন আর নেই বললেই চলে। এটার জন্য অনেকাংশে আমরা নিজেরাই দায়ী। এই পেশাটার অদূর ভবিষ্যত্ খুবই ভয়াবহ মনে হয় আমার কাছে।আমাদের দেশে অনেক তরুণ সাংবাদিক তৈরি হয়েছেন যারা কি না সাংবাদিকতার মূল কাজগুলো (সংবাদ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও পাঠানোর কাজ) পুরোপুরি মোবাইল ফোন দিয়ে সেরে ফেলতে পারছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ব্যবহারকারীরাই সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক অর্থাৎ ভিজিটর বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।তাই আমি কবির নেওয়াজ রাজ মনে করছি,তরুণ সাংবাদিকদের উচিত হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবশ্যই পাঠক-দর্শকদের ধরে রাখার জন্য কনটেন্ট তৈরিতে উদ্যোগী হওয়া।
লেখকঃ কবির নেওয়াজ রাজ,
এমএসএস”রাষ্ট্রবিজ্ঞান,সিসি”জার্নালিজম,এলএলবি।