• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬ অপরাহ্ন

মুন্সীগঞ্জে ধর্ষণের পর কিশোরীকে হত্যার দায়ে ২ সন্তানের জনকের ফাঁসি

সংবাদদাতা / ১৪৮ পাঠক ভিউ
আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ– মুন্সীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর কিশোরী লায়লা আক্তার লিমুকে(১৭) হত্যার দায়ে বাংলাদেশ দন্ড বিধির ৩০২ ধারায় মো: খোকন(৩৫) নামের এক যুবককে ফাঁসির আদেশ তৎসহ ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করেছে মুন্সীগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ ফাইজুন্নেসা। একই সাথে লাশ গুম করার দায়ে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ২০১ ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৭ হাজার টাকা জরিমানার রায় প্রদান করেন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত খোকন দুই সন্তানের জনক। সে সিরাজদিখান উপজেলার পাউসার গ্রামের বাবুল মিয়ার পুত্র।

খোকন গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবান বন্দি প্রদান করে বলেন তার মালিকানাধীন বাড়ৈখালী বাজারের চাঁন সুপার মার্কেটে দর্জি ঘর দোকানে রেখে রাতে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি এ্যাডভোকেট লাবলু মোল্লা জানান, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী বাজারে চাঁন সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ‘দর্জি ঘর’ -এ ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট বিকালে মা হারা এই কিশোরী ড্রেস বানাতে যায় । আসামী মো: খোকন তার দোকনে কৌশলে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষন করে এবং শেষ রাতের দিকে কিশোরী লায়লা আক্তার লীমু যখন তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছিল এবং তাকে বিয়ে না করলে সে সকালে দোকান থেকে বেরিয়ে সবাইকে বলে দিবে এমন সব কথায় খোকন লীমুকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং এক পর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দি করে পাশের ইছামতি নদীতে ফেলে দিয়ে গুম করে।

এ দিকে মেয়েকে চারিদিকে খুজাখুজি করে না বাবা আব্দুল মতিন স্থানীয় শ্রীনগর থানায় ৩০ আগষ্ট/১৮ তারিখে ১২৭০ নম্বর সাধারন ডায়েরী করেন। পরের দিন ৩১ তারিখে এলাকাবাসী চান সুপার মার্কেটের পাশেই ইছমতি নদীতীরে বস্তাবন্দি লাশের খবওে আব্দুল মতিন ছুটে আসেন এবং পুলিশের সহায়তায় বস্তা খুলে তার মেয়ে লীমুর লাশ শনাক্ত করেন।

এ ছাড়া খোকনের দোকান থেকে পচা দুর্গন্ধ পেয়ে আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে খোকনের দোকানে জমাটব্ধ রক্তসহ খুনের বেশ কিছু আলামত পুলিশ জব্দ করে। ঘটনার তিন দিন পর ৩১ আগস্ট লাশ উদ্ধারের পর সন্দেহজনক খোকনকে আটক শ্রীনগর থানা পুলিশ। এরপর সে আদালতে গিয়ে স্বেচ্ছায় এই লোমহর্ষক ধর্ষন ও খুনের বিষয়ে স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।

এরপরই লিমুর বাবা জেলার শ্রীনগর থানার বাড়ৈখালী গ্রামের আব্দুল মতিন বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন করে। থানা পুলিশ দির্ঘ তদন্ত শেষে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারাসহ বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে সিএস দাখিল করেন। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারাসহ বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় চার্জ গঠন করে মামলাটি বিচার ও নিস্পত্তির লক্ষে সাক্ষী গ্রহন শুরু করেন।

রাষ্ট্র পক্ষ মোট ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন এবং আসমী নিজেও সাফাই সাক্ষী প্রদান করেন। ২০ জন সাক্ষ্যী এবং আসামীর সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের পর ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে আসামী খোকনের বিরুদ্ধে এই রায় প্রদান করেন। জনাকীর্ণ আদালতে রায়ের সময় আসামী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আসমী পক্ষের আইনজী ছিলেন মো আতিকুর রহমান জুয়েল ও ব্যারিষ্টার হাসান সাঈদ রসি।

আসামী বাবা বাবুল মিয়া জানান, এই রায়ের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন তারা। তবে এই রায়ের আগেই মামলার বাদী নিহত লীমুর বাবা আব্দুল মতিন মারা গেছেন। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট লাবলু মোল্লাসহ আদালতে উপস্থিত লিমার বড় ভাই রিপন মিয়া ও ফুফু নাসরিন বেগম এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিস্তারিত...