প্রথমত, ওই নারী ও তার সহযোগীরা যখন থানায় শহিদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা দিতে আসেন তখন কিন্তু পুলিশ মামলা নেননি। কারণ ওসির কাছে এটি মামলা যোগ্য মনে হয়নি। ওসি নিজে তার থানায় মামলা নিয়ে গ্রেফতার করলে তবে হয়তো সম্পৃক্ততার কথা বলা যেত। তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়েছে আদালতের মামলায়। তাই এ মামলায় ওসির কারসাজির প্রশ্ন তোলাও পাপ।দ্বিতীয়ত, শহীদুল্লাহর পরিবারের দাবি, ওয়ারেন্টের কপি তাদের না দেখিয়ে শহীদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। এ ক্ষেত্রে আমার মন্তব্য, ওয়ারেন্ট হলে আসামি গ্রেফতার করবে এটাই স্বাভাবিক। এটি পুলিশের রুটিন কাজ। আদালতের আইন মানতে পুলিশ বাধ্য। পুলিশ যদি আদালতের আইন মেনে কাউকে গ্রেফতার করে এটা অপরাধ নয়, বরং পুলিশ যদি আদালতের আইন অমান্য করে ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামিকে ছেড়ে দেয় এটা অপরাধ। সে ক্ষেত্রে পুলিশের চাকরিটাও যেতে পারে।তৃতীয়ত, আরও দাবি করা হচ্ছে, শহীদুল্লাহকে প্রয়োজনীয় ঔষধ না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথবা তাকে থানায় মারধর করা হয়েছে এমন অভিযোগ অনেকের। আর তা নির্ণয়ে প্রয়োজন বক্তব্য নয়, সিসি ক্যামেরার সংরক্ষিত ফুটেজ। আমি তাই করলাম। থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গুলো সংগ্রহ করলাম। সত্য উদঘাটনের লক্ষ্যে প্রতিটি ফুটেজ বারবার দেখেছি। ফুটেছে দেখা যায়, একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে গ্রেফতারের সময় তাকে হাতকরা পর্যন্ত পড়ানো হয়নি। তাকে সম্মান দেখানো হয়েছে। অবশেষে থানায় নেয়ার পর ওসি সাহেব যখন জানতে পারলেন তিনি দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক তখন তাকে আসামির কক্ষে না নিয়ে ওসির কক্ষে বসানো হয়। তার পরপরই অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন পুলিশ কর্মকর্তারা দৌড়া-দৌড়ি করে সিএনজি এনে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার এই মৃত্যুতে বিষক্রিয়া বা আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তিনি হৃদরোগে মারা গেছেন। একজন উপ-পরিচালকের প্রতি ওসির এ শ্রদ্ধাকে কখনোই অপরাধের সাথে তুলনা করা যায় না। ওসি তো জানতেনও না তিনি হঠাৎ এমন মৃত্যু বরণ করবেন। এমন মৃত্যু সব সময়ই অনাকাঙ্ক্ষিত।তাহলে কি এই মৃত্যু হত্যাকান্ড নয়! অবশ্যই, এটি হত্যাকান্ড। তাকে মানসিক ভাবে টর্চার করে হত্যা করা হয়েছে। একজন দুদকের উপ- পরিচালক মানেই দেশের একটি সম্পদ। তার সেবায় বহু মানুষ উপকৃত হয়েছে। রাষ্ট্র দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আমাদের শ্রদ্ধাভাজন। ভালো কাজের জন্য তিনি সব সময় মানুষের শ্রদ্ধা পেয়েছেন। আর সে মানুষ যখন হঠাৎ গ্রেফতার হলেন স্বাভাবিকভাবেই তিনি এটিকে লজ্জা ও অপমান হিসেবে নিয়েছেন। কোনো অপরাধি গ্রেফতার হলে যতটুকু না চিন্তার ভাঁজ পড়ে, একজন নিরপরাধ সম্মানিত ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলে তা ওই ব্যক্তির কাছে মৃত্যুদণ্ডের চাইতেও কঠিন শাস্তি।এমনটাই হয়েছে শহীদুল্লাহর ক্ষেত্রে। তার মাথায় টেনশন বাসা বাঁধে। এড়াছা শহীদুল্লাহ হৃদ্রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। তিনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। গত কয়েক দশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অসংখ্য গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, হৃদরোগের অন্যতম কারণ মানসিক। আর এর নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আছে যার, তা হলো ক্রমাগত টেনশন ও স্ট্রেস। আর এ অপমান জনক টেনশনের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে আমি মনে করি। অতএব, তার পরিবার- মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যু ঘটানো হয়েছে বলে যে অভিযোগ করে আসছে তা পরিষ্কার জলের মতো সত্য। আপনাদের চিন্তা এ হত্যাকাণ্ডে পুলিশও জড়িত নয়, তাহলে জড়িত কে! কারাই বা তাকে হত্যা করেছে! কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর- তাকে গল্পের নায়িকা ও সহযোগী (এস এম আসাদুজ্জামান, জসিম উদ্দিন, মো. লিটন ও কলি আক্তার) নায়ক’রা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। এ ক্ষেত্রে যে আদালতে মামলা হয়, সেই আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন উর রশিদ মামলার সমন গায়েব করে আসামিদের সহযোগিতা করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ওই মামলার সমনটি চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে পেশকার নেজারত শাখায় পাঠায়নি। ওটা বেঞ্চ সহকারী নিজেই আটকে রাখে এবং গোপন করে ওয়ারেন্ট করায়। আর ওই ওয়ারেন্ট ওই দিনই পাঠিয়ে দেওয়া হয় থানায়। যদি সমন গায়েব করে হারুন উর রশিদ তাদের সহযোগিতা না করতেন হয়তো শহিদুল্লাহ আদালতে হাজির হতেন এবং সত্যের পক্ষে লড়াই করতেন। যেহেতু তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা, কাজেই তিনি মামলা হতে অব্যাহতি পেতেন। তাহলে হয়তো আমাদের এ করুণ মৃত্যু দেখতে হতো না। অন্যদিকে থানা পুলিশও এ নাটকের বলি হতো না। শহীদুল্লাহর সম্পত্তিই যেন তার কাল হয়ে দাঁড়িয়ে। জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির সাথে সম্পত্তি নিয়ে তার বিরোধ ছিল। জসিম উদ্দিন চান্দগাঁও থানা এলাকার যুবলীগ নেতা। তিনি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার অন্নপূর্ণ বাড়ী গৈয়া মোহাম্মদের বাড়ীর শামসুল আলমের ছেলে। তিনি বর্তমানে নগরের চান্দগাঁও থানার রাহাত্তারপুল এক কিলোমিটার এলাকায় থাকেন। স্ত্রীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে ভবন নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে সাবেক দুদক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ রোষানলে পড়েন জসিম উদ্দিনের। জমি সংক্রান্ত এ ঘটনায় বেশ কয়েকবার সাবেক এ দুদক কর্কর্তার বাড়িতে দলবল নিয়ে হামলাও চালায় জসিম। কিন্তু এসবে কোনো সুবিধা করতে না পেরে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে বাঁশাখালির এক অসহায় নারীকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দায়ের করান।এদিকে মিথ্যা মামলার দায় স্বীকার করে মৃত শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন বাদী রনি আক্তার তানিয়া। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি এ আবেদন করেন। তানিয়া গণমাধ্যমে দেওয়া স্বাক্ষাতকারে বলেন, আগস্টের মাঝামাঝি সময় তিনি বিনামূল্যে ঘর সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা পান জসিমের কাছ থেকে। পরে শহিদুল্লাহর নতুন তৈরী করা ভাড়াঘরে তাদের তুলে দেন জসিম। তাদের সেই ঘরে তোলার আগে দলবল নিয়ে শহিদুল্লাহর ভাড়া ঘরে হামলা চালায় জসিম। জসিম তার ৫০০ টাকা তুলে দিয়ে মিথ্যা মামলা করান। তিনি কখনোই শহিদুল্লাহর বাসায় চাকরি করেননি।উপরোক্ত আলোচনায় পরিস্কার, শহিদুল্লাহ জসিম-তানিয়াদের ষড়যন্ত্রের শিকার। তাকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভাবে টর্চার করেছে এ দল। এ দলে আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন উর রশিদ এর ভূমিকাও কম নয়। তিনি মিথ্যা ওয়ারেন্ট ইস্যুর কারিগর। মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও রাতারাতি ভূঁয়া ওয়ারেন্ট বের করার নজির নতুন নয়। টাকার বিনিময়ে হয় ওয়ারেন্ট বাণিজ্য। আর টাকার বিনিময়ে মিথ্যা ওয়ারেন্ট ইস্যু করে একজন মানুষকে মানসিক টর্চার করে হত্যা করাটা অপরাধ।এ ঘটনায় পেশকারের এ ভূমিকা না থাকলে হয়তো শহীদুল্লাহর পরিবারের এত বড় ক্ষতি হতো না।শুনলাম এ ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। কাজেই এটি আমাদের আশান্বিত করে। আমরা চাই এমন হত্যাকান্ডের কঠোর বিচার হোক। তবে কেউ নির্দোষ থাকলে, সে যেন হয়রানির শিকার না হয়। তার এই অকাল অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। সেই সাথে আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা যেন তাকে জান্নাতের বাসিন্দা করেন সে প্রার্থনাই করি। আমীন।